নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামে নাভিশ্বাস মানুষের শীতের সবজি ভরপুর হলেও তুলনামূলক কমছে না
মাসুদ মিয়া : নিত্যপণ্যের বাজার লাগামহীন হয়ে পড়েছে। হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। শীতের সবজি ভরপুর হলেও তুলনা মূলক দাম কমছে না। কৃষক যেসব পণ্যের দাম ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা পাচ্ছে সেসব পণ্য রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আসতে আসতে তিনগুণ থেকে চারগুন দাম বাড়ছে । অর্থাৎ একটি সিন্ডিকেট এ দাম বাড়াতে মূল ভূমিকা পালন করছে। দেশে দ্রব্যমূল্য বাড়ার এই অস্বাভাবিক অবস্থায় দিশাহারা মানুষ। তারপরও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে।
সবকিছুর দাম বাড়লেও বাড়ছে না কেবল সাধারন মানুষের আয়। এ অবস্থায় শহুরে জীবনে টিকে থাকা দায় হয়েছে। এই অবস্থায় ভালো নেই মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ। এরাই এখন সবচে দুঃসময়ে। মানুষের দুঃসময়ে শুধু খাদ্যদ্রব্য নয়, জীবন-যাপনে প্রয়োজনীয় সবকিছুর দামই হু হু করে বাড়ছে। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্য আয়ের মানুষেরও। দেশে কোনো পণ্য কিনতে স্বস্তি পাচ্ছেন না ক্রেতারা দফায় দফায় বাড়ছে অধিকাংশ নিত্যপন্যোর দাম।
নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামে নাভিশ্বাস মানুষের। চাল, ডাল, ডিম, চিনি ও তেলসহ প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম এখন আকাশচুম্বী।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে শীতকালীন সবজির প্রচুর আমদানি রয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী দাম কমেনি। এ নিয়ে ক্রেতাদের অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যদিও দোকান ভাড়া, আমদানি ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিকে দাম বাড়ার কারণ বলছেন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা।
বাজারে সবজির দাম জানতে চাইলে কলতাবাজারের সবজি বিক্রেতা সাদ্দাম বলেন, পেঁপে ৩০ আর মুলা ৪০ টাকা কেজি ফুলকপি ৩০ টাকা পিচ পাতা কপি ৩০ টাকা পিচ বিক্রি হচ্ছে। শীতকালীন অন্যান্য সবজি ৪০ থেকে ৬০ টাকায় কেনাবেচা চলছে। মৌসুমি সবজি ছাড়া অন্যান্য সবজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শান্তিনগর বাজারে গিয়ে কথা হয় এক ব্যসরকারি চাকরিজিবি কামাল হোসেনের সঙ্গে। এই ক্রেতা বলেন, কয়েকজন মিলে এখানে ম্যাচে থাকছি। অতিরিক্ত দামের কারণে মাছ-মাংস তো কেনাই দায়। শীতকালীন নানা পদের সবজি খাবো, সে অবস্থাও নেই। শুধু মুলা শিম আর পেঁপে খেয়ে চলছে।
এদিকে সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম না কমার কারণ জানতে চাইলে খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা মোকাম বা স্থানীয় বাজারে দাম বাড়ার অজুহাত দিচ্ছেন। সঙ্গে পরিবহন ব্যয়, দোকান ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বৃদ্ধিকেও সামনে আনা হচ্ছে। একাদিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতকালীন অধিকাংশ সবজি ৪০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে শিম, পটলের তুলনায় অন্য সবজির দাম বেশি। একটি বড় সাইজের ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ও চালকুমড়াও বিক্রি হচ্ছে একই দামে। অন্যদিকে বরবটি, করলা, বেগুন, কচুর্মুখী, কাকরোল, ঝিঙে, চিচিঙ্গার কেজি বাজারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকা বা আমদানি টমেটোর কেজি ১১০ থেকে ১২০, গাজর ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি। কাচা মরিচের দামে কিছুটা স্বস্তি রয়েছে কেজি বিক্র হচ্ছে ৪০ টাকা।
লক্ষিবাজারে বিক্রেতা আলী বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসতে শুরু করায় আমদানি ও দেশি পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। কয়েকদিন আগেও পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকা ছিল। এখন ৪০-৪৫ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া রসুন ও আদার দাম কমেছে।
এদিকে চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে মোটা চালের দাম না বাড়লেও বেড়েছে চিকন চালের দাম। সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবি চিকন চালের কেজি ৩ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ থেকে ৭২ টাকা, মাঝারি বা পাইজাম চাল ২ টাকা বেড়ে ৫৪ থেকে ৬০ টাকা এবং মোটা চালের কেজিতে ২ টাকা বাড়িয়ে ৪৮ থেকে ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও বাজারের খুচরা ব্যবাসয়ীরা বলছে, টিসিবির তথ্যের থেকে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্যাকেটজাত আটা কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট ময়দায় ৫ টাকা বেড়ে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গত ১৭ নভেম্বর থেকে সয়াবিন তেল ও চিনির দাম আরও বেড়েছে। এখন সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। আগের চেয়ে কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১২ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনি কেজিতে ১২ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হয়েছে ১০৭ টাকায়। যদিও বাজারে নির্ধারিত দামের তেল পাওয়া গেলেও চিনি কিনতে ক্রেতাদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। সরবরাহ সংকটের কারণে বাজারভেদে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে মুরগির দাম অপররিবর্তিত রয়েছে। বাজারে ব্রয়লার ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, বাজারে কমতে শুরু করেছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৫ টাকা।
মুরগির মতো মাছের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। প্রতি কেজি তেলাপিয়া ১৬০-১৮০ টাকা, রুই ২২০ টাকা ৩৫০টাকা, পাঙাশ ১৪০-১৬০ টাকা, সিলভার কার্প ১২০-১৬০ টাকা, শিং মাছ আকার ভেদে ৩০০-৪০০ টাকা এবং চিংড়ি মাছ ৫৫০-১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ইলিশ মাছ কেজি বড় আকাড়ে ১৫০০ টাকা মাঝারি ১২০০ টাকা ছোট ৪০০-৬০০ টাকা।
এদিকে প্রতিটি পণ্যের দামই হু হু করে বাড়ছে। মধ্যবিত্তরাও এখন দামের চাপে ব্যাগের তলানিতে পণ্য নিয়ে ফিরছেন ঘরে। পাঁচভাই ঘাটলেন বাজারের মুদি দোকানি নাজমুল বলেছেন, সবকিছুর দাম বাড়তি। দাম শুনে অনেকে পণ্য না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। যেটা না নিলেই নয়, সেসব পণ্য এক কেজির জায়গায় আধা কেজি নিচ্ছেন। আগে যারা পুরো প্যাকেট নিতেন, তারা খোলা কিনছেন। দ্রব্যমূল্যের এই অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতিতে আমাদেরও স্বস্তি নেই।