মৎস্য চাষের প্রায় পুরোটাই যোগান দেয় হ্যাচারির পোনা
মতিনুজ্জামান মিটু : বাংলাদেশে চাষযোগ্য কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদনের ৪৪.৮৬ শতাংশ যোগান দেয় রুই মাছ। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বিএফআরআই’র মহাপরিচালক ড, ইয়াহিয়া মাহমুদ আরও জানান, দেশে উৎপাদিত মোট ৩.৯৩ লাখ টন রুই মাছের মধ্যে ২.৫০ লাখ টন চাষের পুকুরে হয়। বর্তমানে মাছচাষ প্রায় সম্পূর্ণভাবে হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনার ওপর নির্ভরশীল। তবে হ্যাচারিতে উৎপাদিত রুই মাছের পোনার কৌলিতাত্বিক অবক্ষয় ও অন্ত:প্রজননজনিত সমস্যা মাছচাষে অন্যতম প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এপ্রেক্ষিতে ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা জেনেটিক গবেষণা পরিচালনার মাধ্যমে দেশে রুই মাছের ৪র্থ প্রজন্মের উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ইনস্টিটিউট হতে ৪র্থ প্রজন্মের এরুই মাছকে ‘সুবর্ণ রুই’ হিসেবে নামকরণ করা হয়। ‘সুবর্ণ রুই’ এর এই উন্নত জাত ২০২১ সালের ১০ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে মৎস্য অধিদপ্তর ও হ্যাচারি মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গবেষণামতে, ‘সুবর্ণ রুই’ মূল জাতের চেয়ে শতকরা ২০.১২ ভাগ বেশি উৎপাদনশীল।
এছাড়া বিএফআরআই এর বিজ্ঞানীরা দেশে প্রথমবারের মতো উপকুলীয় অঞ্চলের সুস্বাদু দাতিনা মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছে। ইনস্টিটিউটের খুলনার পাইকগাছার লোনাপানি কেন্দ্রে বিগত ৪ বছর যাবত দাতিনা মাছের ওপর গবেষণা চালিয়ে এসফলতা আসে। ইনস্টিটিউটের মতে, উপকুলীয় অঞ্চলে দাতিনার ৩টি প্রজাতি পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এমাছটি ‘সাদা দাইতনা’ নামে বেশী পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম পোমাদেসেইস হাসটা। এমাছের কাটা কম, খেতে সুস্বাদু। পরিপক্ক মাছকে গবেষণা কেন্দ্রের হ্যাচারিতে হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে ২০২০-২১ সালে সফলতা অর্জিত হয়। উল্লেখ্য, বিশ্বের দু’একটি দেশে দাতিনার খাদ্য ও খাদ্যাভাস এবং ডিম ধারণ নিয়ে গবেষণা করা হলেও এপ্রজনন সম্পর্কিত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিবেচনায় দাতিনা মাছের প্রজনন সফলতা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
বিএফআরই এর বিজ্ঞানীরা পুষ্টিসমৃদ্ধ ( প্রতি ১০০ গ্রাম ঢেলা মাছে ভিটামিন এ ৯৩৭ আইইউ, ক্যালসিয়াম ১২৬০ মিলিগ্রাম এবং জিঙ্ক ১৩.৬০ শতাংশ) ও বিলুপ্তপ্রায় ঢেলা মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনের কর্মসূচি নেন। ২০২১ সালে ইনস্টিটিউট দেশে প্রথমবারের মতো পোনা উৎপাদনে সফলতা পায়। ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহের স্বাদুপানি গবেষণা কেন্দ্রে এ সফলতা অর্জিত হয়। আলোচ্য গবেষণায় ১০ জোড়া ঢেলা মাছকে হরমোন দেওয়া হয়। হরমোন দেওয়ার ৮ থেকে ৯ ঘন্টা পর ডিম ছাড়ে এবং ২২ ঘন্টা পর নিষিক্ত ডিম থেকে রেণু পোনা উৎপাদিত হয়। এসময় ডিম নিষিক্ততার পরিমাণ ছিল শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ।
স্বাদুপানির বিলুপ্তপ্রায় ছোট মাছের মধ্যে রাণী মাছ অন্যতম। এমাছটি খেতে খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণসম্পন্ন হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এমাছ ভারত, ভুটান ও মায়ানমারে পাওয়া যায়। মাছটি রাণীবউ নামে পরিচিত হলেও অঞ্চলভেদে মাছটি বেটি, পুতুল ও বেতাঙ্গি নামেও পরিচিত। আইইউসিএন(২০১৫) রাণী মাছকে বিপন্ন প্রজাতির মাছ হিসেবে তালিকাভূক্ত করে। এপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহের স্বাদুপানি কেন্দ্রে ২০২০ সালে রাণী মাছের সংরক্ষণ, প্রজনন ও পোনা উৎপাদন বিষয়ে গবেষণা কর্মসূচি নেওয়া হয়। কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে রাণী মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়।