পদ্মা সেতু হওয়ায় বরিশাল-খুলনায় বেড়েছে গাড়ির চাহিদা
অর্থনীতি ডেস্ক : করোনা পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে গাড়ির ব্যবসা। মানুষের মধ্যে নতুন গাড়ি কেনার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবসা এখন বেশ চাঙা। ২০২০ ও ২০২১ সালে ২৮ হাজার ৪৫২টি ও চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫০৭টি ব্যক্তিগত গাড়ি সারাদেশে নেমেছে। সেই হিসাবে গড়ে প্রতি মাসে ১ হাজার ২৬৩টির বেশি গাড়ির নিবন্ধন দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডা’র হিসাবে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত দেশে কোনো গাড়ি আমদানি হয়নি। গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে প্রায় ২৭ হাজার গাড়ি আমদানি হয়েছে। পুরোনো গাড়ির পাশাপাশি নতুন গাড়িও এসেছে এ সময়ে। এছাড়া ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি এসেছে ৭ হাজার।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর পরিচালক (অপারেশন) মো. লোকমান হোসেন মোল্লা সত্যতা নিশ্চিত করে চ্যানেল ২৪ অনলাইনকে বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন চলছে। প্রতিদিন এর সংখ্যা বাড়ছে। এদিকে দেশে ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো গাড়ির চাহিদা বেড়েছে। ফ্যাক্টরির মালিক বা নতুন উদ্যোক্তারা এ গাড়ি ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বেশি। এছাড়া সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও এ গাড়ি ব্যবহার করতে দেখা যায়।
দেশে ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডোর চাহিদার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স এন্ড ডিলার্স এসোসিয়েশন (বারভিডা)- এর সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন চ্যানেল ২৪ অনলাইনকে বলেন, ফ্যাক্টরির মালিক বা নতুন উদ্যোক্তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাডো গাড়িতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কেউ গাজীপুর বা সাভার যাবেন এক্ষেত্রে তারা প্রাডোকেই পছন্দ করছেন। এছাড়া বিদেশিদেরও এটি ব্যবহার করতে দেখেছি। অনেকেই ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো কিনছেন। জিপ এসইউভিও কিনছেন অনেকে। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা যে গাড়ি কেনেন তা চাকরি করা অবস্থায় কিনতে পারবেন না। কারণ এর দাম প্রায় ১ থেকে ১ কোটি ২০ লাখের মতো। সরকারি চাকরিজীবী বা সচিবরা যে গাড়িতে চড়েন সেটা দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অটোমোবাইল সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের। পাজেরো গাড়ি অ্যাসেম্বিলিং করছে প্রগতি। এগুলো সরকারি লোকজন কেনেন বা ব্যবহার করছেন। প্রগতি থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি লোকজনই বেশি গাড়ি কেনেন। বেসরকারি লোকজন তেমন একটা কেনেন বলে মনে হয় না। কারণ এখানে সাজসজ্জার অনেক বিষয় রয়েছে।
প্রাডোর দামের বিষয়ে হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, যত পুরোনো মডেলের গাড়ি হবে তত দাম কম। আর যত নতুন মডেল হবে দাম বেশি। ২০২০ ও ২০২১ সালের গাড়ির দাম বেশি। আর ২০১৬ ও ২০১৭ সালের গাড়ি আনলে দাম কম। আমদানি নীতিমালায় আমরা ৫ বছরের বেশি পুরাতন গাড়ি আনতে পারি না। বর্তমানে কারেন্সি সংকটের সময় যদি আরেকটু পুরাতন বা ৮ বছরের আগের গাড়ি আনতে পারতাম তাহলে খরচ আরও কম পড়ত। ডলারও কম খরচ হতো। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যে গতিতে এগুচ্ছে, আমরা মধ্যম আয় থেকে উন্নত দেশের দিকে যাচ্ছি। এখানে গাড়ি একটা বিশাল ফ্যাক্টর। দেশে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ভালোভাবে গড়ে ওঠেনি। আর এখন ট্যাক্সিক্যাপ নাই বললেই চলে। শহরে মানসম্মত বাস নাই। তাই যাত্রীরা এসব বাসে উঠতে চায় না। ভালো পাবলিক সার্ভিস সহজলভ্য হলে মানুষ প্রাইভেট গাড়ি কম কিনত। মানুষ মানসম্মত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট পাচ্ছে না। এ কারণে ব্যক্তিগত গাড়ি চাচ্ছে।
পদ্মা সেতু বা যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়া ঢাকার বাইরে গাড়ি বিক্রি বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ঢাকার বাইরেও গাড়ি বিক্রি বেড়েছে। যারা এতদিন ফেরি, ট্রলার বা নৌকায় চড়ে পদ্মা পার হতেন তারা এখন ৩ ঘণ্টায় ঢাকা চলে আসবেন। সকালে অফিস করে বিকেলে আবার চলে যাবেন। একটা উন্নত দেশে গাড়ি ছাড়া কল্পনাই করা যায় না।
পদ্মার ওপারের মানুষ গাড়ি কেনায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন জানিয়ে এই গাড়ি ব্যবসায়ী বলেন, বরিশাল থেকেও অনেকে ফোন করে গাড়ির শো-রুম নিতে চায়। তারা বলে এখানে শো-রুম নেই কিন্তু ডিমান্ড আছে। খুলনা-বরিশালের লোকজন এখন গাড়ি কিনবে। যোগাযোগের দূরত্ব কমে গেছে এখন। গাড়ি থাকলে সকাল ৬টায় রওনা দিলে ঢাকায় এসে কাজকর্ম শেষ করে আবার বাসায় চলে যেতে পারবেন। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থায় গাড়ি ব্যবহারকারীরা সবচেয়ে বেশি সুফল ভোগ করেন।
ডলার সংকটের কারণে গাড়ি বিক্রি কমে গেছে জানিয়ে হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, মানুষের মধ্যে আতংক তৈরি হওয়ায় গাড়ি যেভাবে বিক্রি হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। মানুষ অপেক্ষা করছে কি হয় এটা দেখার জন্য। হঠাৎ টাকার অবমূল্যায়নে মানুষ ভয় পেয়ে গেছে। চলতি বছরের জুন-জুলাই পর্যন্ত বিক্রি ঠিক ছিল, এরপর থেকে গাড়ি বিক্রি কমে গেছে বলেও জানান তিনি। সূত্র : চ্যানেল২৪ অনলাইন