বেশি জমির প্রত্যয়নে দেশের বীজের মান বেড়েছে
মতিনুজ্জামান মিটু : বিগত ১৩ বছরে ছাড়করণ বা নিবন্ধন করা হয় নোটিফাইড ধানের ইনব্রিড ৭০টি ও হাইব্রিড ১৪৮টি, গম ১১টি, পাট ৯টি, আলু ৬১টি এবং আখ ৮টিসহ মোট ৩০৭টি জাত। এসময়কালে ‘বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী’ নোটিফাইড বীজ ফসলের মাঠ প্রত্যয়নকরা জমির পরিমাণ ৪ লাখ ৩৩ হাজার ২১৭ হেক্টর এবং মাঠ পরিদর্শনকরা জমির পরিমাণ ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩৩ হেক্টর। সংস্থার সদ্য অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. ইউছুফ ভূঁঞা এবং অতিরিক্ত পরিচালক (মাঠ প্রশাসন, পরিকল্পনা ও মনিটরিং) কৃষিবিদ মো. আশরাফ উদ্দিন জানান, আগের চেয়ে বেশি পরিমাণ বীজ ফসলের জমি প্রত্যয়নের আওতাভুক্ত হওয়ায় দেশের পাবলিক এবং প্রাইভেট সেক্টরে বীজের মান সার্বিকভাবে উন্নত হয়েছে।
এসময় সংস্থা ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ১৯৭ টন বীজ প্রত্যয়ন করে। এছাড়া ধানের ১১ কোটি ৭৬ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৫টি, গমের ৩৭ লাখ ৬ হাজার ২৯৮টি, পাটের ১ কোটি ১৫ লাখ ১৫ হাজার ৩৫০টি ও আলুর ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ২৫০টিসহ মোট ২৪ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৭৩৪টি প্রত্যয়ন ট্যাগ বিতরণ করা হয়। গত বছর ধান, গম, আলু ও পাটসহ মোট এক লাখ ৬৫ হাজার টন বীজ প্রত্যয়ন করা হয়।
জাতের বিশুদ্ধতা পরীক্ষার জন্য কন্ট্রোল খামারে ধানের ১৩ হাজার ৬৪৪টি, গমের ২ হাজার ৪৭৬টি, পাটের ১ হাজার ৫৬১টি এবং আলুর ৩ হাজার ৪২৯টিসহ মোট ২০ হাজার ৮৪৭টি প্রি-পোস্ট কন্ট্রোল ও গ্রোআউট টেস্ট করা হয়। এতে চাষিপর্যায়ে মানসম্পন্ন বীজের পাওয়া, উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটেছে। সংস্থায় ৪টি আঞ্চলিক বীজ পরীক্ষাগার ও ১টি জাত পরীক্ষাগার ভবন, ১টি কম্পিউটার ল্যাব, ১টি প্রশিক্ষণ কক্ষ ও ১টি ডরমিটরি ভবন নির্মাণ করা হয়। ভ্রাম্যমাণ বীজ পরীক্ষাগার কর্মসূচির আওতায় ১টি ভ্রাম্যমাণ বীজ পরীক্ষাগার মিনিবাস কেনাসহ কারিগরি যন্ত্রপাতি এবং জাত পরীক্ষাগারের জন্য একটি জেনারেটর সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া আইএপিপি প্রকল্পের অর্থায়নে দুটি পিকআপ ভ্যান কেনা এবং পটুয়াখালী জেলায় নতুন বীজ পরীক্ষাগার ভবন স্থাপনসহ দরকারি যন্ত্রপাতি জোগাড় করা হয়। বীজমান উন্নয়নে মাঠ প্রত্যয়ন আধুনিকায়ন ও জোরদারকরণ কর্মসূচির অর্থায়নে মাঠ প্রত্যয়ন সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি এবং মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা ও রেফারেন্স বই সংগ্রহ করে মাঠপর্যায়ের অফিসগুলোতে বিতরণ করা হয়।
মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী’র অবদান প্রসঙ্গে কৃষিবিদ মো. আশরাফ উদ্দিনজানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে প্রথম জাতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (১৯৭৩ থেকে ৭৮) আওতায় বীজের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে ১৯৭৪ সালের ২২ জানুয়ারি বীজ অনুমোদন সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ২২ নভেম্বর ১৯৮৬ তারিখে এর ‘বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী’’ নামকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উৎপাদিত ও বাজারজাতকরা নিয়ন্ত্রিত ফসলের (ধান, গম, পাট, আলু, আখ, মেস্তা ও কেনাফ) বীজের প্রত্যয়ন ও মান নিয়ন্ত্রণে সংস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বীজমান উন্নয়নে মাঠ প্রত্যয়ন আধুনিকায়ন ও জোরদারকরণ কর্মসূচি (জুলাই’২০১২ থেকে জুন’২০১৫), ভ্রাম্যমাণ বীজ পরীক্ষাগার কর্মসূচি (জুলাই’২০১৩ থেকে জুন’২০১৫) ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচারাল প্রডাক্টিভিটি প্রজেক্ট (আইএপিপি)-এসসিএ সাবকম্পোনেন্ট (জুলাই’২০১১ থেকে জুন’২০১৬), ভ্রাম্যমাণ বীজ পরীক্ষাগারের মাধ্যমে বীজ পরীক্ষা কার্যক্রম জোরদারকরণ কর্মসূচি এবং নিম্ন উৎপাদনশীল ধানের জাত প্রত্যাহারের জন্য জাত পরীক্ষণ কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। বীজ প্রত্যয়ন কার্যক্রম জোরদারকরণ প্রকল্প চলমান রয়েছে যার অগ্রগতি সন্তোষজনক। ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচারাল প্রডাক্টিভিটি প্রজেক্ট (আইএপিপি) এর অর্থায়নে খরাপ্রবণ উত্তরাঞ্চলের রংপুর জেলায় আঞ্চলিক বীজ পরীক্ষাগারে এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পটুয়াখালী জেলায় স্থাপিত নতুন বীজ পরীক্ষাগারে বীজ পরীক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দেশব্যাপী ট্যাগ এর ভেজালনিরোধ লক্ষ্যে বীজ প্রত্যয়ন ট্যাগ আধুনিকায়ন ও বিতরণ জোরদারকরণ কর্মসূচি চালু রয়েছে। একর্মসূচির আওতায় আধুনিক নতুন ট্যাগের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-রঙিন, নিরাপত্তা কালিতে লেখা মুদ্রিত এবং পেনিট্রেটিং কালিতে মুদ্রিত ক্রমিক নম্বর।
কৃষিবান্ধব সরকারের রূপকল্প-২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সংস্থার স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটটিকে স¤প্রতি ডায়নামিক ওয়েবসাইটে রূপান্তর করে অনলাইনে রিপোর্টিং ও ডাটাবেইজ সংরক্ষণ শুরু হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ বীজ পরীক্ষাগার কর্মসূচির আওতায় বীজ পরীক্ষার ফলাফল সরাসরি সংশ্লিষ্ট কৃষকগণকে মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম নেওয়া হয়।