বিদ্যুতের বিপর্যয়ের মূল কারণ কতিপয়তন্ত্র
মনওয়ার মোস্তফা
কয়েকমাস ধরে বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর পাওনা টাকা পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। টাকার পরিমাণ- ১৬ হাজার কোটি, ডলারে কনভার্ট করলে ১.৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি হবে। পাওনা টাকা না পেয়ে বেশ কিছু ছোট ও মাঝারি কোম্পানী বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। সরকার কী কারণে এই টাকা দিতে পারছে না? কোষগারে টাকা নেই নাকি এই ভয়ে যে, এই টাকার সিংহভাগই ডলারে কনভার্ট হয়ে বিদেশে চলে যাবে? খুব চেপে ডলার খরচ করাটা সরকারের এসময়ের বড় প্রায়োরিটি, সন্দেহ নেই। তবে এটাও ঠিক যে, এই টাকার সিংহভাগই ডলারে কনভার্ট হবে কেননা যে সব বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি বিদেশ থেকে জ্বালানী তেল কিনে বিদ্যুৎ বানিয়েছে- তাদের সেই তেলের দামতো ডলারেই পরিশোধ করতে হবে। কোন কোন কোম্পানি তাদের মুনাফাটা ডলারে কনভার্ট করে বিদেশে নিয়ে যাবে, এটাও ঠিক।প্রশ্নটা হলো- সরকার কেন টাকা দিচ্ছে না। মূল কারণটা কি? বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত সংশিষ্ট বিদ্যমান নীতি-আইন-কানুন নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন ও বিতর্ক আছে, সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু পাওনা টাকা পরিশোধ না করাটা, সত্যিই উদ্বেগজনক।গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতটিকে কতিপয় রাজনীতিবিদ ও আমলাদের “সদিচ্ছা”র ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। “বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর দ্রæত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০” নামে এ সংক্রান্ত আইনও বলবৎ রয়েছে। এই আইনের কারণে বাংলাদেশের কোন নাগরিক আদালতেও তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দায়ের করতে পারবে না। কে কোথায় কখন কী ধরণের বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানাবে, উৎপাদিত সেই বিদ্যুৎ সরকার কতো দামে কতো বছর ধরে কিনবে ইত্যাদি সিদ্ধান্ত নেবে ঐ কতিপয় হাতেগোনা কজন রাজনীতাবিদ ও আমলা। সমালোচক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব নয় বরং বাংলাদেশের জ্বালানী-বিদ্যুৎ খাতের বিপর্যয়ের পেছে মূল কারণ হলো- ঐ তুঘলকি আইন, যার ফলে একটা “কতিপয়তন্ত্র” তৈরি হয়েছে, যা দুর্নীতি-লুটপাটকে উৎসাহিত করে বর্তমান বিপর্যয় ডেকে এনেছে। আমার নিজের ধারণা, এই গোটা ব্যাপারটা (বিদ্যমান আইন, লুটপাট ইত্যাদি) সরকারি মহলের সবাই জানে। সমালোচক বিশেষজ্ঞদের চেয়ে অনেক বেশি জানে। এমনকি কার কার বৈষয়িক স্বার্থ, কীভাবে কতটুকু জড়িয়ে আছে, কে কাকে সহযোগিতা করার ভেতর দিয়ে কতটুকু লাভবান হচ্ছে… সবই তারা জানে। কিন্তু কেউ মুখ ফুটে কিছু বলবে না। তবে অবসরে গিয়ে কোন কোন আমলা হয়তো বলবে, তখন অবশ্য ওসব বলার ভেতর দিয়ে কিছুই হবে না, কেননা সর্বনাশ যা হবার তাতো হয়েই গেছে! লেখক: রাজনৈতি ও অর্থনীতির বিশ্লেষক