ঢাকার স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে ৬৫০ কোটি টাকা
সোহেল রহমান : ঢাকার স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে রাজধানীর পূর্ব ও পশ্চিম অংশের প্রধান ট্রাঙ্কের ডিজাইনসহ পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। কাজটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ওয়াসা। ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রæভমেন্ট প্রজেক্ট (ডিএসআইপি)-এর আওতায় দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে কাজটি সম্পাদন করা হবে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬৪৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। বুধবার অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এ-সংক্রান্ত দুটি পৃথক প্যাকেজ কাজের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
জানা যায়, দুটি প্যাকেজ কাজের মধ্যে পূর্বাংশের ডিজাইন অ্যান্ড বিল্ড কন্ট্রাক্ট ফর রি-কনস্ট্রাকশন অব ইস্টার্ন ট্রাঙ্ক মেইন (প্যাকেজ নং ডবিøউডি-২)-এর কাজটি করবে যৌথভাবে চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (লীড পার্টনার), সাংহাই-এর সেফবন ওয়াটার সার্ভিসেস (হোল্ডিং) ইঙ্ক এবং সাংহাই মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন ইনস্টিটিউট (গ্রæপ) কো. লিমিটেড। প্যাকেজের আওতায় মাইক্রো-টানেলিং/ওপেন-কাট পদ্ধতিতে মধুবাগ থেকে পাগলা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রাঙ্ক মেইন পুনঃনির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২০ কোটি ৬ লাখ টাকা।
অপর প্যাকেজ কাজটি হচ্ছেÑ পশ্চিমাংশের ডিজাইন অ্যান্ড বিল্ড কন্ট্রাক্ট ফর রি-কনস্ট্রাকশন অব ইস্টার্ন ট্রাঙ্ক মেইন (প্যাকেজ নং ডবিøউডি-৩)। এ কাজটি করবে যৌথভাবে জিপসাম স্ট্রাকচারাল ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, ইতালি’র এমিট গ্রæপ ইরকোল মেরিলি ইম্পিয়ান্টি টেকনোলজিসি এস.আর.এল এবং ভারতের খিলাড়ি ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড। প্যাকেজের আওতায় মাইক্রো-টানেলিং/ওপেন-কাট পদ্ধতিতে নীলক্ষেত থেকে নারিন্দা পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রাঙ্ক মেইন পুনঃনির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, প্যাকেজ দুটি বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হলে প্যাকেজ নং ডবিøউডি-২ সম্পাদনে তিনটি প্রতিষ্ঠান এবং প্যাকেজ নং ডবিøউডি-৩ সম্পাদনে দুটি প্রতিষ্ঠান কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব দাখিল করে। এর মধ্যে মূল্যায়ন কমিটির বিবেচনায় দুটি প্যাকেজে পৃথক পৃথকভাবে সর্বোচ্চ স্কোর প্রাপ্ত দুটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরীর বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের চাহিদাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে ঢাকা মহানগরীর মাত্র ২০ শতাংশ জনগণকে পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধার আনা সম্ভব হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। অন্যদিকে বিদ্যমান পয়ঃনিষ্কাশন অবকাঠামোগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ও অতি মাত্রায় পুরাতন হয়ে পড়ায় সেগুলো সুষ্ঠুভাবে কাজ করছে না। পাগলা থেকে তেঁজগাও, বিজয়সরণী, আসাদ গেইট পর্যন্ত বিস্তৃত বিদ্যমান মেইন ট্রাঙ্কসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে পুরাতন ঢাকায় অবস্থিত পয়ঃলাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে বর্তমান স্যুয়ারেজ সিস্টেমের কার্যকারিতা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। বিশেষত: ১৯৭৮ সালে নির্মিত দৈনিক ১২ কোটি লিটার পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন পাগলা পয়ঃশোধনাগারটি দীর্ঘদিনের পুরাতন হওয়ায় এর কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।
জানা যায়, ঢাকা শহরকে একটি পরিকল্পিত স্যানিটেশন ব্যবস্থার আওতায় আনার লক্ষ্যে ঢাকা ওয়াসা ২০১৪ সালে একটি স্যুয়ারেজ মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করেছে। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান-এর আওতাধীন এলাকায় ২০৩৫ সালের মধ্যে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা (ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট/স্থাপনা ও কালেকশন নেটওয়ার্ক) উন্নয়নের জন্য প্রায় ১৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার প্রয়োজন হবে, যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া ওই মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, পাগলায় দৈনিক ৮০ কোটি লিটার পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করা প্রয়োজন হবে। বর্তমানে পয়ঃশোধনাগারটিতে যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে এতে বিদ্যমান স্থানে দৈনিক ৮০ কোটি লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করা সম্ভব নয় বিধায় এ পয়ঃশোধনাগারটির আধুনিকায়ন একান্ত প্রয়োজন বলে ঢাকা ওয়াসা মনে করে।