চলতি বছর ডেঙ্গু ডেন-থ্রি ও ডেন-ফোরে আক্রান্ত বেশী
শাহীন খন্দকার : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২১ সালের প্রথম ৮ মাসেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৯০ জন ছিলো। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ বেশী মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলো আগষ্ট মাসেই ৭ হাজার ৪৩২ জন এবং মারা গিয়েছিলো ৪২ জন। ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকা শহরের বাসিন্দারা। তবে সারা দেশেই ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ রয়েছে।
চলতি বছর ২০২২ সনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পাশাপাশি ডেঙ্গুর এই সংক্রমণ সারা দেশের মানুষের জন্য নতুন ভীতি হিসাবে দেখা দিয়েছে। জুলাইতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ১ হাজার ৫৭১ জন আর মৃত্যু হয় ৯ জণের। আগস্ট মাসে ৩হাজার ৫২১ জন আর মৃত্যু ১১ জনের, সেপ্টেম্বরে ৯ হাজার ৯১১ এবং মৃত্যু ৩৪ জনের। অক্টোবর মাসে ২১ হাজার ৯৩২ আর মৃত্যু ৮৬ জনের।
এছড়া নভেম্বর মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত আক্রন্ত রোগী ১৮ হাজার ১৮৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১০৬ জনের। বাংলাদেশে চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অন্যান্য বছরের তুলনায় দীর্ঘায়িত হয়েছে এবং সংক্রমণ পরিস্থিতি এবার যেসব রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন তাদের অধিকাংশ ডেন-থ্রি সেরোটাইপ বা ডেঙ্গুর তৃতীয় ধরণে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবির।
তিনি আরও বলেন, কোথাও কোথাও ডেন-ফোরের উপস্থিতও পাওয়া যাচ্ছে । মূলত, যারা আগে এক বা একাধিকবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন তারা ডেন-থ্রি এবং ডেন ফোরে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি জটিল রূপ নেয়ায় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনিস্টিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ বলেন, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগও ডেন-থ্রি ও ডেন-ফোরে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন তিনি। ডা. সফি আহমেদ বলেন, গত ১১ মাসে ১হাজার ১৪১ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে ভর্তি আছে ৪৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। আর ডেঙ্গু ফিবার রোগী ভর্তি ৮ জন।
তিনি বলেন, এবছর স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় হাসপাতালগুলো প্রস্তুত থাকায় করোনাভাইরাসের মতোই নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগে যেখানে ডেঙ্গু হয়নি সেখানেও চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেখা গেছে। তাছাড়া হাসপাতালে আসা বেশিরভাগ রোগী আগেও এক বা একাধিকবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিলেন। তাই এবারের লক্ষণগুলো প্রকট।
ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল ও কলেজের পরিচালক কর্নেল মো. নাজমুল হক বলেন, ডেঙ্গু ফিবার রোগী ভর্তি ২৩ এছাড়া সর্বমোট ভর্তি রোগী ২হাজার ৮০০ জনের মধ্যে ১০৬ জন ভর্তি আছে। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২৮ জন বলে জানান তিনি। অন্যদিকে ঢাকা মিডর্ফোড হাসপাতালের কতৃপক্ষ জানিয়েছেন, ডেঙ্গু-ফিবারে আক্রান্ত রোগী ২১ আর সর্বমোট ভর্তি রোগী ২ হাজার ৮৪৬ জনের মধ্যে বর্তমানে ভর্তি রোগী ৮৬ জন এবং ২৭ তারিখ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সর্বমোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ১হাজার ৫২১ জনের মধ্যে বর্তমানে ভর্তি আছে ৪০ ফিবার ডেঙ্গু রোগী ৮ জন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ১২৫ জনের মধ্যে ভর্তি আছে ৮জন। সর্বোচ্চ মুগদা মেডিকেল হাসপাতালের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি ৩হাজার ৮২৩ জন এবং বর্তমানে ভর্তি রোগী ১১৫ জনআর মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সর্বমোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ২হাজার ১৭৬ জন এবং ডেঙ্গু ফিবারে আক্রান্ত ২৪ জন বর্তমানে ভর্তি আছে ৭২ জন । সেই সঙ্গে মৃত্যু হয়েছে ৬জনের।