অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বাংলাদেশও ডিজিটাল মূদ্রার বিষয়ে অনুপ্রাণিত হতে পারে ভারতে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল মুদ্রা চালু
বিশ্বজিৎ দত্ত : নোট এবং খুচরো কয়েনের বিকল্প হিসাবে ‘ডিজিটাল রুপি’ বা ‘ই-রুপি’ চালু করতে চলেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)। আরবিআইয়ের তরফে মঙ্গলবার এই ঘোষণা করা হয়েছে।১ ডিসেম্বর অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে ভারতে এই ডিজিটাল মুদ্রা চালু হতে চলেছে। এর আগে আরবিআইয়ের তরফে ডিজিটাল মুদ্রায় লেনদেনের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। ভারতে ডিজিটাল মূদ্রা চালুর বিষয়কে ইতিবাচক হিসাবেই দেখছেন বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ড. তৌফিক আহমেদ। তিনি বলেন, এর প্রভাবে বাংলাদেশেও ডিজিটাল মূদ্রা চালু হতে পারে। তাতে লেনদেনে অনেক স্বচ্ছতা চলে আসবে। হুন্ডি প্রতিরোধ করা যাবে। ভারতে এটি প্রাথমিকভাবে তাদের নিদৃষ্ট কিছু ব্যবসায় ও আভ্যন্তরীণ ভাবে চালু করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও হয়তো তারা চালু করবে। যেমন চীন চালু করেছে। চীনেরটা অনেকটা ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন আগামীতে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে দেশে ক্যাশলেন লেনদেন চালু করবেন। এই হিসাবে বাংলাদেশেও ডিজিটাল মূদ্রা চালু শুধু সময়ের অপেক্ষা। অর্থনীতিবিদ ও সাবেক এনবিআর সদস্য আমিনুর রহমানও ভারতে ডিজিটাল মূদ্রার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসাবেই দেখছেন। তিনি বলেন, ভারত আমাদের দ্বিতীয় বাণিজ্য সহযোগী সুতরাং আমরাও যদি ডিজিটাল মূদ্রা চালু করতে পারি তবে উভয়দেশই লেনদেনে সুবিধা অর্জন করবে।
ভারতে ‘ডিজিটাল রুপি’ পরিষেবা চালু করার জন্য আপাতত চারটি ব্যাঙ্ক আরবিআইয়ের অংশীদার হচ্ছে। এই ব্যাঙ্কগুলি হল, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই), আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, ইয়েস ব্যাঙ্ক এবং আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্ক।প্রাথমিক ভাবে আরবিআইয়ের তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, শুধু মাত্র নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে পরীক্ষামূলক ভাবে ই-রুপি লেনদেন চালু হবে। সফল হলে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।
প্রাথমিক ভাবে আরবিআইয়ের তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, শুধু মাত্র নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে পরীক্ষামূলক ভাবে ই-রুপি লেনদেন চালু হবে। সফল হলে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।‘ডিজিটাল রুপি’ বা ‘ই-রুপি’ চালুর বিষয়ে আরবিআইয়ের ঘোষণার পরেও অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয় যে এই ডিজিটাল রুপি আসলে কী? ক্রিপ্টোকারেন্সির মতোই ‘ই-রুপি’ একটি ডিজিটাল টোকেন। তবে ভারতে এই ডিজিটাল রুপিকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হবে।ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো ডিজিটাল রুপির দর ওঠানামা করবে না। কাগজের নোট এবং খুচরো কয়েনের সমান দামেই চালু হবে ডিজিটাল রুপি। ‘ডিজিটাল রুপি’ কী ভাবে কাজ করবে? তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে অনেকের মনে। বর্তমানে অনলাইন জালিয়াতি এবং টাকা তছরুপের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিজিটাল টাকা ব্যবহার কতটা নিরাপদ হবে তা নিয়েও উঠছে একাধিক প্রশ্ন। আরবিআই ব্যাখ্যা করেছে, এই ডিজিটাল মুদ্রা গ্রাহক এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কের দেওয়া ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোন বা ডিভাইসে রাখা ডিজিটাল মুদ্রার মাধ্যমে এই লেনদেন করতে পারবেন।আরবিআই ব্যাখ্যা করেছে, এই ডিজিটাল মুদ্রা গ্রাহক এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কের দেওয়া ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোন বা ডিভাইসে রাখা ডিজিটাল মুদ্রার মাধ্যমে এই লেনদেন করতে পারবেন। আরবিআই আরও নিশ্চিত করেছে, ‘ডিজিটাল রুপি’তে লেনদেন দু’জন গ্রাহক এবং এক জন গ্রাহক ও ব্যবসায়ীর মধ্যে হতে পারে।অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাপের লেনদেনের মতোই সুবিধা রয়েছে ‘ডিজিটাল রুপি’র ব্যবহারেও। ব্যবসায়ীদের কাছে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করে এই ডিজিটাল মুদ্রা দিতে পারবেন সাধারণ মানুষ। ডিজিটাল এই মুদ্রা ব্যবহার করা যথেষ্ট নিরাপদ হবে বলেও আরবিআইয়ের দাবি।আরবিআইয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে ‘নগদ টাকার যা যা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, ‘ডিজিটাল রুপি’তেও একই বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নগদ টাকার মতোই ‘ই-রুপি’ মানুষকে টাকার লেনদেনে সাহায্য করবে। তবে ব্যাঙ্কে নগদ জমা রাখলে যেমন সুদ পাওয়া যায়, এ ক্ষেত্রে সে রকম কোনও সুদ পাওয়া যাবে না। ব্যাঙ্কগুলিতে এই ডিজিটাল মুদ্রা আমানত রূপেও জমা রাখতে পারবে।আরবিআই আরও জানিয়েছে ‘ডিজিটাল রুপি’ তৈরি, বিতরণ এবং ব্যবহারের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সঠিক ভাবে পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতেও ডিজিটাল রুপি বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে আরও উন্নত করার চেষ্টা চলবে। মানুষের যাতে খুব সহজে ই-রুপি ব্যবহার করতে পারে সে দিকেও বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি ‘ডিজিটাল রুপি’ ব্যবহারে নিরাপত্তার দিকও খতিয়ে দেখছে আরবিআই।এখনই সব জায়গায় ‘ডিজিটাল রুপি’ দিয়ে লেনদেনের সুযোগ মিলবে না। প্রথমে দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু এবং ভুবনেশ্বরে এই পরিষেবা শুরু করছে আরবিআই।আপাতত চারটি শহরে পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হলেও পরে আমদাবাদ, ইনদওর, হায়দরাবাদ, লখনউ, কোচি, গ্যাংটক, পটনা, গুয়াহাটি এবং শিমলায় এই পরিষেবা চালু করা হবে। পরে ক্রমশ সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে এই পরিষেবা। চারটি ব্যাঙ্ককে আপাতত ‘ডিজিটাল রুপি’ বিতরণে অংশীদার করা হয়েছে। তবে পরবর্তী কালে ব্যাঙ্ক অফ বরোদা, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক এবং কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক থেকেও ডিজিটাল রুপি বিতরণের কথা ভাবছে আরবিআই। প্রয়োজন এবং ব্যাবহারের পরিসর অনুযায়ী আরও ব্যাঙ্ককে এই পরিষেবা চালু করার অনুমতি দেওয়া হবে বলেও আরবিআইয়ের তরফে জানানো হয়েছে। দেশে ক্রিপ্টোর রমরমা কমাতে বিকল্প কোনও ব্যবস্থার কথা চিন্তা করছিল শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তারই ফল এই ডিজিটাল মুদ্রা। প্রয়োজনে লেনদেনের উপর সরকার নজরও রাখতে পারবে সহজে। খুচরো টাকার লেনদেনে যা করা অসম্ভব।