বিশ্বকাপে ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ ঘটবে
অর্থনীতি ডেস্ক : ২০২১ সালে প্রকাশিত গ্রিনহাউস-গ্যাসের পরিসংখ্যানবিষয়ক রিপোর্টে, ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা ও কাতারের আয়োজকরা অনুমান করে বিশ্বকাপে ৩ দশমিক ৬মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ ঘটবে। বড় খেলার ইভেন্টগুলোতে কার্বন নির্গমন অনুমান করা একটি অপেক্ষাকৃত নতুন অনুশীলন ও এ ক্ষেত্রে তত্ত¡ও পরিবর্তিত হতে পারে। তবে এই পরিমাণ নিঃসরণ সম্প্রতি বিশ্বকাপ হওয়া অলিম্পিকের চেয়েও বেশি।
২০০৯ সালে কাতার যখন বিশ্বকাপ ফুটবল স্বাগতিকের খাতায় নাম লিখিয়েছিল তখনই প্রতিশ্রæতি দেয় একটি কার্বন-নিরপেক্ষ ইভেন্ট আয়োজনের। তবে তখনই মরুভূমির রাজ্যে নবনির্মিত স্টেডিয়ামগুলোতে কয়েক হাজার করে দর্শককে হোস্ট করার মাধ্যমে উৎপন্ন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনকে নিরপেক্ষ করার সম্ভাবনা কল্পনাপ্রসূত মনে হয়েছিল। এটি এখন প্রমাণিত হচ্ছে।
এটি উল্লেখযোগ্যভাবে অবমূল্যায়নও হতে পারে। ২০২২ সালের মে মাসে একটি জলবায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থা, কার্বন মার্কেট ওয়াচ-এর ২০২২ এর একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্টেডিয়ামগুলো থেকে নির্গমনের পরিমাণ, সরকারি পূর্বাভাসের সঙ্গে সঠিকভাবে হিসাব করে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফিফা জোর দিয়ে বলে এই পদ্ধতিটি ‘অনুশীলনে সর্বোত্তম’ কারণ নির্গমনের সিংহভাগ (৫২ শতাংশ) আসবে কাতারে ভ্রমণকারী ও খেলোয়াড়দের কাছ থেকে, যেখানে ২৫ শতাংশের কম আসবে নির্মিত স্টেডিয়াম থেকে। কার্বন মার্কেট ওয়াচ ধারণা করে এই ধরনের যুক্তি সুদূরপ্রসারী। বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে কাতার সাতটি নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ করেছে। এরমধ্যে একটি, স্টেডিয়াম ৯৭৪, সম্পূর্ণ শিপিং কনটেইনার ও মডুলার ইস্পাতে নির্মিত এবং টুর্নামেন্টের পরে এটা সরিয়ে ফেলা হবে। অন্য স্টেডিয়ামগুলো অবশ্য থেকেই যাবে।
ফিফা ও কাতার অন্ততপক্ষে কার্বন ক্রেডিট কেনার মাধ্যমে তাদের পূর্বাভাস দেওয়া ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন নির্গমনের প্রতিশ্রæতি দিচ্ছে। এটি করার জন্য, কাতার গ্লোবাল কার্বন কাউন্সিল (জিসিসি) প্রতিষ্ঠা করেছে, যেটি একটি নিবেদিত কার্বন পর্যবেক্ষণ সংস্থা। বিশ্বকাপে কার্বন নির্গমনের বিষয়টি সমন্বয় করার বাইরে, জিসিসি ‘কম কার্বনের নির্গমনের ভবিষ্যৎ’ এর পথকে উন্নীত করবে। বিশ্বের বড় খেলার ইভেন্টের চেয়ে কার্বন নির্গমন তুচ্ছ মনে হতে পারে। এমনকি কাতারের এই আয়োজনে কার্বন মার্কেট ওয়াচ এর অনুমান, ৫ মিলিয়ন টন যা বিশ্বের বার্ষিক নির্গমনের শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ এরও কম।কিন্তু খেলার দল ও সংস্থাগুলো তাদের কার্বন-নিরপেক্ষ প্রমাণপত্রের একটি বড় কৌশল তৈরি করেছে। স্পোর্টস ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন ফ্রেমওয়ার্ক (এস৪সিএ) এ উচ্চাভিলাষী কার্বন নির্গমন হ্রাস লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করে। ফিফাসহ প্রায় ২০০টি দল ও সংস্থা ইউএন স্পোর্ট ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন ফ্রেমওয়ার্কে স্বাক্ষর করেছে। এটি ক্রীড়া সংস্থাগুলোকে তাদের কার্বন নির্গমন কমাতে সাহায্য করার একটি বড় উদ্যোগ।
তবে এর মধ্যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগসহ ৯৩টি সংস্থা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমন অর্ধেক করার প্রতিশ্রæতি দিয়ে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে নেট-শূন্য নির্গমন অর্জন করার জন্য। যদিও ফিফা সেই প্রতিশ্রæতিতে অংশ নেয়নি। এর কারণ সম্ভবত, ২০২৬ সালে পরবর্তী বিশ্বকাপের আয়োজনে, আমেরিকা, কানাডা, মেক্সিকোর মধ্যে একটি যৌথ প্রচেষ্টায় টুর্নামেন্ট ৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করবে, যা কাতারের চেয়েও বেশি। সূত্র : জাগো নিউজ