দেশের জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ২’শ ৩০বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন
এস.ইসলাম জয় : বাংলাদেশের জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) বাস্তবায়ন করতে ২শত ৩০বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। পর্যাপ্ত বিদেশি সহায়তা পেলে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের জন্য বাংলাদেশের ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস করা হবে।
শনিবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত “কপ-২৭ জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে পারে নি” শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্ক অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছেন।
মন্ত্রী জানান, শুধু বৈদেশিক সহায়তায় নয় বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নেও জলবায়ু ঝুকি হ্রাসে কাজ করছে। এলক্ষ্যে ২০০৯ সালে গঠিত বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিল হতে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত প্রায় ৪৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৩ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এই তহবিলের অর্থে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি দপ্তর, সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮ শত ৫০ টির অধিক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। পর্যাপ্ত বিদেশি সহায়তা পেলে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আরও জোরালোভাবে কাজ করতে পারবে। এবারের সম্মেলনে কিছু সীমাবদ্ধ থাকলেও আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। এবারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশের মত জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহকে উন্নত দেশসমূহ কর্তৃক প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এলক্ষ্যে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রæতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। এবারের জলবায়ু সম্মেলনে লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও অর্থায়নের উৎস নির্ধারণ করা হয়নি যা অতিদ্রæত করতে হবে।
এদিকে বায়ুমন্ডল নিয়ে বিজ্ঞানীরা নানা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিভাবে কার্বন নিঃসরণ করা যায়। পৃথিবীর চারদিক ঘিরে থাকা বায়ুমÐল বেশকিছু গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত। এসব গ্যাস মশারির মতো ঘিরে রাখে এই পৃথিবীকে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সেই গ্যাসগুলো হলো অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন, হিলিয়াম ইত্যাদি। এ কথা স্বীকার না-করে উপায় নেই, জীব জগতের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে বায়ুমÐলের গুরুত্ব সীমাহীন। কিন্তু দুশ্চিন্তার কারণ, পৃথিবীকে আবৃত করে থাকা বায়ুমÐল দিন দিন তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলছে। মানুষ তার অপরিণামদর্শী কৃতকর্মের মাধ্যমে বায়ুমÐল দিন দিন অনিরাপদ করে তুলছে। তারপরও পরিবেশ ও প্রকৃতিকে রক্ষার জন্য প্রাকৃতিকভাবেই কিছু রক্ষার নিয়ামক রয়েছে। তার মধ্যে একটি ওজোন স্তর। বায়ুমÐলে অবস্থিত ওজোন আবার দুটি স্তরে বিভক্ত। গবেষণা বলছে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ বেড়ে গেছে মারাত্মকভাবে। কার্বনের এই নিঃসরণ যদি কমিয়ে আনা না-যায় তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে বছরে এক বার করে ৩০ কোটি মানুষ বসবাসের বিশাল এলাকা সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যাবে। উল্লেখ্য ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি সই হয়। বিশ্ব উষ্ণায়নের কথা মাথায় রেখে ওই চুক্তিতে স্থির হয়, অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যাতে বাড়তে না পারে, তার দিকে নজর রাখা হবে। শিল্পবিপ্লব কালের আগে পৃথিবীর তাপমাত্রার নিরিখে দুই ডিগ্রির চরমসীমা তৈরি করা হয়েছিল। দুইশটির মতো দেশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনতে যে ঐক্যমত্য পোষণ করেছে তাকে অনেক পর্যবেক্ষকই ‘ঐতিহাসিক অর্জন’ বলে বর্ণনা করছেন। ১৯৯৭ সালের কিয়োটো প্রটোকলে হাতে গোনা কয়েকটি দেশকে ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ ঠেকানোর লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। কিন্তু সেই প্রটোকল থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। বাকীরাও লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়। অবশ্য বিজ্ঞানীরা বলছেন পৃথিবীতে আসন্ন বিপজ্জনক জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে প্যারিস চুক্তিকে অবশ্যই কার্যকর করতে হবে।