আমরা উন্নয়নমুখী আর বিএনপির লক্ষ খুন ও দুর্নীতি : প্রধানমন্ত্রী
এস.ইসলাম জয় : আমরা উন্নয়নমুখী আর বিএনপির লক্ষ খুন ও দুর্নীতি। গতকাল রোববার চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য ও বিদ্যুত নিয়ে দেশের মানুষের কোনো সমস্যা হবে না। আমাদের বিদ্যুত নিয়ে কিছু দিন কষ্ট হয়েছিল। ভবিষ্যতে আর হবে না ইনশাল্লাহ। তবে আপনাদের কাছে অনুরোধ, সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করতে হবে। আপনারা জানেন না, এই শীতকালে ইউরোপের ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের কী অবস্থা। তারা মানুষ গরম পানি পাচ্ছে না। তারা রুম হিট করতে পারছে না। এক রুমের মধ্যে সমস্ত পরিবার নিয়ে থাকতে হচ্ছে। দোকানে গেলে জিনিস কিনতে পারে না। হয়তো এক প্যাকেট জিনিসের বেশি একটি পরিবার কিনতে পারবে না। এমন অবস্থা তাদের। আমি বলতে চাই, বাংলাদেশে এই অবস্থা হবে না। আমরা মানুষের সবরকম সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখবো কিন্তু আপনাদের সহযোগিতা চাই। তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। বিমানবাহিনী- সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসারকে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগের মৌলবি সৈয়দকে তুলে নিয়ে দিনের পর দিন নির্যাতন করে হত্যা করে। এ রকম আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ঠিক একইভাবে খালেদা জিয়াও তার আমলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। অনেক লাশ গুম করেছে। আমি তাদের সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর এই চট্টগ্রামের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কেউই তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। সারা দেশেই এই তাÐব চালিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। তারা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বেশি কিছু দিতে পারে না। আমরা উন্নয়ন করি, আর বিএনপি মানুষ খুন করে। এই চট্টগ্রামে বিএনপি বারবার বোমা ও গ্রেনেড মেরেছে। বিএনপি মানুষের শান্তি চায় না।’
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ারা পারে মানুষ হত্যা করতে। আওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ্বাস করে। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে জনগণ শান্তিতে থাকে। বিএনপির দুইটা গুণ আছে- ভোট চুরি আর মানুষ খুন। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, সেই ১০ ডিসেম্বর বিএনপির খুব প্রিয় একটা তারিখ। বোধ হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পদলেহনের দোসর ছিল বলেই ১০ ডিসেম্বর তারা ঢাকা শহর নাকি দখল করবে। আর আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করবে। আমি তাদের বলে দিতে চাই, খালেদা জিয়া ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল। আর ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল বলেই তাকে বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেয়নি। সারা বাংলাদেশ ফুঁসে উঠেছিল। জনতার মঞ্চ করেছিলাম আমরা। খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে। দেড় মাসও যায়নি, খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। সে কথা বিএনপির মনে রাখা উচিত। জনগণের ভোট যদি কেউ চুরি করে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয় না। ওরা তা ভুলে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ভোট কেউ চুরি করলে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয় না। ওরা ভোটে যেতে চায় না। কারণ জিয়াউর রহমান জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতায় এসেছিল। গণতান্ত্রিক ধারা তাদের পছন্দ না। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের উন্নতি হয়। বাংলাদেশ আজ উন্নতি হচ্ছে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকার কারণে। জিয়াউর রহমান একটি ভাঙা সুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি রেখে গিয়েছিলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে হাওয়া ভবন খুলে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করেছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়া আজ জেলে কেন। এতিমের নামে টাকা এনে নিজে আত্মসাৎ করেছে। জিয়া ট্রাস্টের টাকা চুরি করেছে বলেই সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিদেশ থেকে টাকা এসেছে এতিমের জন্য। সেই টাকা এতিমের হাতে আর যায়নি। সব নিজেরা পকেটস্থ করেছে। তার জন্য ২০০৭ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময় মামলা হয়েছে আর সেই মামলায় ১০ বছরের সাজা হয়েছে। টাকা চুরি করেছে বলেই সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তার ছেলে একটা তো মারা গেছে। যে অর্থ পাচার করেছিল, সিঙ্গাপুর থেকে কিছু অর্থ আমরা উদ্ধার করে আনতে পেরেছি। আরেকজন এখন লন্ডনে বসে আছে। ২০০৭ সালে কেয়ারটেকার সরকারের কাছে আর কোনো দিন রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়েছিল। এখন সেখানে রাজার হালে থাকে আর দেশের ভেতরে যত বোমাবাজি, খুন-খারাবি, নাশকতা পরিচালনা করে, বলেন শেখ হাসিনা। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অধিকার আছে, এই আইন জাতির পিতা করে গেছেন। কিন্তু বিএনপি এই আইন ও অধিকার বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়নি। জিয়ার জন্ম কলকাতায় আর পড়াশোনা করেছে করাচিতে। এরপর সেনাবাহিনীতে আসে। আমরা সেই সমুদ্র জয় করেছি। আজ সেগুলো আমাদের কাজে লাগছে। এই চট্টগ্রামে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যা আমরা তৈরি করে দেইনি। প্রত্যেকটা উপজেলায় সরকার কলেজ-স্কুল আমরা করে দিয়েছি; আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখা-পড়া শিখবে। মানুষের মতো মানুষ হবে। তারা বিএনপি-জামায়াতের মতো খুনী, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা হবে না। তারা সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমী নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।
চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠ থেকে ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ছাড়াও আরও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এসব প্রকল্প চট্টগ্রামবাসীর জন্য উপহার বলে মন্তব্য করেন সরকার প্রধান। আমাদের গড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ করোনার সময় আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে। কাজেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখনও পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে মজবুত। সারা বিশ্বব্যাপী এখন খাদ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের অভাব। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আমাদের দেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। জামায়াত-বিএনপিকে দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আপনারা ভোট দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করবে। আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন। আপনারাই আমার পরিবার, আপনারাই আমার সব।