শেয়ারবাজারে ১ বছর আট মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার আগের কার্যদিবস উত্থান হলেও গতকাল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন শেয়ারবাজারের সব সূচক কমেছে। সূচকের সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেনও কমেছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টাকার পরিমাণে লেনদেন এক বছর ৮ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ লেনদেন হয়েছে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এর আগে গত বছর ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ২৩৬ কোটি টাকা। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ফ্লার প্রাইস বা সর্বনি¤œ দামে আটকে রয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ক্রেতার অভাবে দিনের পর দিন লেনদেন হচ্ছে না এসব সিকিউরিটিজের। কমে এসেছে লেনদেনও। প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশও বাজারে নিস্ত্রিয় ভূমিকা পালন করছে মনে করেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা আরও মনে করেন, সরকারবিরোধী একটি চক্রের পাঁয়তারায় এসব বিনিয়োগকারী নিস্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। সব কিছু মিলে এক ধরনের চাপের মধ্যে রয়েছে শেয়ারবাজার।
এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে লেনদেন খরা আরও প্রকোট হলো। তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোরপ্রাইসে (সর্বনি¤œ দাম) আটকে থাকায় এ লেনদেন খরা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, নানা ইস্যুতে কয়েক মাস ধরেই শেয়ারবাজারে দরপতন চলছে। এ দরপতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোরপ্রাইস বেঁধে দিয়েছে। ফ্লোরপ্রাইসের নিচে দাম কমার সুযোগ না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশের শেয়ার বা ইউনিটের লেনদেন হচ্ছে না। ফলে প্রতিনিয়ত লেনদেন কমছে। গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই দরপতনের আভাস পাওয়া যায়। লেনদেনের শুরুতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৫ পয়েন্ট বাড়লেও ১৫ মিনিটের মধ্যে সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের শেষদিকে দরপতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ফলে সবকটি সূচক কমে দিনের লেনদেন শেষ হয়। সেইসঙ্গে বড় হয় দরপতনের তালিকা।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ২২ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৪টির। আর ২১৪টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২০ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২২৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২০৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৬৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার দিনে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ২০ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ অবস্থায় চলে গেছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ২০২১ সালের ৫ এপ্রিলের ডিএসইতে এত কম লেনদেন আর দেখা যায়নি। ডিএসইর এক সদস্য বলেন, লেনদেন চিত্র দেখে মনে হচ্ছে শেয়ারবাজারের ওপর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ওঠে গেছে। নানা ইস্যুতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। এমনিতেই বৈশিক পরিস্থিতির কারণে কয়েক মাস ধরেই শেয়ারবাজারে মন্দা চলছে। এর মধ্যে ১০ ডিসেম্বর কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মাঠ উত্তাপ হবে কিনা তা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও শঙ্কিত। এছাড়া অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান এখন ফ্লোরপ্রাইসে আটকে রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিনিয়োগকারীরা বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে তাদের বিনিয়োগ আটকে গেছে। সবকিছু মিলেই শেয়ারবাজরে লেনদেন খরা দেখা দিয়েছে। শেয়ারবাজারে লেনদেন খরা দেখা দিলেও আপাতত ফ্লোরপ্রাইস না তোলার পক্ষে বিএসইসি। এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ফ্লোরপ্রাইস তুলে নেওয়ার বিষয়ে বিএসইসি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমরা মনে করছি, ধীরে ধীরে বাজার পরিস্থিতি ভালো হবে। এখন ধীরে ধীরে লেনদেনের গতি বাড়ছে। আশাকরি, সামনে বাজারও ভালো হবে।
এদিকে লেনদেন খরার দিনে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৮ কোটি ৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বসুন্ধরা পেপারের ১৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেনেক্স ইনফোসিস।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে— জীবন বিমা কোম্পানি চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, ই-জেনারেশন, নাভানা ফার্মা ইস্টার্ন হাউজিং এবং অলেম্পিক।
অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৮ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৩৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৫টির এবং ৭৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।