পণ্যের ন্যায়সঙ্গত মূল্য নিশ্চিত করতে কো-অর্ডিনেশন সেল গঠন করা হবে : বাণিজ্যমন্ত্রী
সোহেল রহমান : বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি বলেছেন, আগামী রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের সরবরাহ ও মজুত নিশ্চিত করা হবে। দেশের মানুষ যেন কষ্ট না পান, সেজন্য যা কিছু করা প্রয়োজন সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি পণ্যের মূল্য যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে রাখার জন্য সরকার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি, সরবরাহ, মজুত ও মূল্য বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকার একটি কো-অর্ডিনেশন সেল গঠন করে সার্বিক সহায়তা প্রদান করবে। চলমান বিশ^পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
রোববার সচিবালয়ে ‘বাণিজ্য সহায়ক পরামর্শক কমিটি’র ৮ম সভা শেষে এক ব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সবদিক বিবেচনায় বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতি সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। অপপ্রচারের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। দেশের রপ্তানি বাণিজ্য এগিয়ে যাচ্ছে। পণ্য ও সেবা খাত মিলে চলতি বছরে ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত নভেম্বর মাসে রেকর্ড পরিমান তৈরী পোশাক রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানির চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে আশা করা যায় আমাদের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। অভ্যন্তরীণ বাজারে চিনির মূল্য নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চিনির সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে যিনি এসেছেন, তাকে বলেছিÑ চিনির ওপর ডিউটি (রাজস্ব) যদি একটু কমানো যায় বা কনসিডার করা যায়। তাহলে দামের ওপর প্রভাব পড়বে বা দাম কমে যাবে। তবে একটা কথা ঠিক যে, বাজারে যারা ব্যবসায়ী তারা ফেরেশতা নন। কিন্তু আমরা যে দাম নির্ধারণ করে দেই, সেটা দিতে হবেÑ তা কিন্তু নয়। দাম কত হওয়া উচিত Ñসেটা নির্ধারণ করে দেই। তারপরও দেখি কোথাও কোথাও চিনি নিয়ে সুবিধা নেয়া হয়েছে। তবে আমাদের কাগজপত্র বলে প্রচুর পরিমাণ চিনি রয়েছে, পাইপলাইনেও আছে। ভোক্তা অধিকার বিভিন্ন জায়গায় হানা দিচ্ছে, জরিমানা করছে। এখন আমরা চিন্তা করছিÑ এর বাইরে যদি প্রয়োজন হয়, কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক হলেই চিনির উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, তখন আর কোন সমস্যা হবে না। এছাড়া, চিনির উপর আরোপিত শুল্ক কমিয়ে মূল্য কমানোর এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্যদিকে সয়াবিনের পাশাপাশি ভোজ্যতেল সানফ্লাওয়ার ও ক্যানোলার আমদানি শুল্ক কমিয়ে আমদানি বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। চিনি আমদানির অনুমোদন দেয়া হবে কি নাÑ জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ চিনি আছে। অন্য বছরের তুলনায় প্রচুর চিনি রয়েছে। আমদানি তো চালু আছে। বাজারে যা মজুত আছে Ñসেটা কোনো অবস্থায় দেশের জন্য বিপজ্জনক নয়। এখন সাধারণ মানুষ যাতে কম দামে চিনি পায় Ñসে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, তবে কোথাও কোনো না কোনো সমস্যা আছে। আজ সব কিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আরও ভালো করে দেখার জন্য আমরা চিন্তা করেছি। কিছু নির্ধারিত নির্দেশনা দিয়ে শিগগির একটি সমন্বয় কমিটি করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংককেও বলেছি তারা যদি একটি ক্রাইসিস সেল খোলে। এই সেল দেখবে কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে। কেননা, আমরা লক্ষ্য করছি যতটা না সমস্যা তার থেকে বেশি অপপ্রচার হচ্ছে। পত্রিকায় এসেছেÑ একশ’টি এলসি বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও বলেছে। দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার এলসি হয়। এই ১০০টি এলসি বন্ধ হলো যে কারণে Ñতা হলো অতিমূল্যের জন্য। এই ১০০টির নিউজ বেশি করে হলো। অথচ ৯০০টি যে ভালোভাবে হলো সেটা কেউ প্রচার করলো না। এখানে সচেতন হতে হবে।
বাজারে ঘাটতি থাকলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কী করতে পারেÑ জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটা সংস্থা, ভোক্তা অধিকার আছে, তারা সেটা দেখছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। কে কী বলেছে Ñসেটা আমার দেখার বিষয় নয়। আমার দেখার বিষয়Ñ যে দাম হওয়া উচিত, যেটা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা। আর যে ব্যাপার রয়েছে, সেটা হলো টেকনিক্যাল ব্যাপার, সেটা তো অস্বীকার করতে পারি না।