নভেম্বরে এশিয়াজুড়ে শিল্পোৎপাদন কার্যক্রম সংকুচিত
অর্থনীতি ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে রেকর্ড উচ্চতায় মূল্যস্ফীতির চাপ। কিছু দেশে ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) বাড়ার গতি ধীর হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলেও তা এখনো আশঙ্কাজনক পর্যায়ে রয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আগ্রাসীভাবে সুদের হার বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। সব মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দায় পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন অনেক বিশ্লেষক। এ অবস্থায় বিশ্বজুড়ে চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে নভেম্বরে এশিয়াজুড়ে শিল্পোৎপাদন কার্যক্রম সংকুচিত হয়েছে। বেসরকারি সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। রয়টার্স, বণিক বার্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি ভোগ ব্যয় ধীর করে দিয়েছে। ফলে এশীয় পণ্যের চাহিদাও কমে গিয়েছে। এতে আগামী বছর এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
চীনে নতুন করে লকডাউন আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যাহত করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন কভিডজনিত বিধিনিষেধ শিথিল করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে মনোযোগ দিয়েছে। তখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এখনো লকডাউন, গণপরীক্ষা ও কোয়ারেন্টিনের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ চালিয়ে যাচ্ছে। এসব পদক্ষেপ দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আঘাত করেছে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বিপর্যয়ে ফেলে দিচ্ছে। এ কারণে গত মাসে চীনের কারখানা কার্যক্রম সংকুচিত হয়েছে। এ পরিস্থিতি চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) দুর্বল কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এছাড়া জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ রফতানিনির্ভর অর্থনীতি এবং ভিয়েতনামের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোয় উৎপাদন কার্যক্রম নি¤œমুখী হয়েছে। বিশ্বজুড়ে দুর্বল চাহিদা এবং কাঁচামালের উচ্চ ব্যয়ে ক্ষতির মুখে পড়ার কথা জানিয়েছে উৎপাদন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের অর্থনীতিবিদ লরা ডেনম্যান বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ খরচের চাপ এবং দুর্বল চাহিদা নভেম্বরে কারখানা কার্যক্রম সংকোচনের প্রধান কারণ ছিল।
চীনের কাইশিন/এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের উৎপাদন খাতের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) গত মাসে ৪৯ দশমিক ৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অক্টোবরে এ সূচক ৪৯ দশমিক ২ পয়েন্টে ছিল। যদিও ৩০ নভেম্বরে প্রকাশিত সরকারি জরিপে উৎপাদন খাতের পিএমআই ৪৮ পয়েন্টে নামার কথা বলা হয়েছে। এ হার গত সাত মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ। পিএমআই ৫০ পয়েন্টের নিচে ওই খাতের সংকোচন এবং এর ওপরে প্রসারিত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
জাপানের এইউ জিবুন ব্যাংকের উৎপাদন খাতের পিএমআই গত মাসে ৪৯ পয়েন্টে নেমেছে। এ পিএমআই অক্টোবরের ৫০ দশমিক ৭ পয়েন্টের চেয়ে অনেক কম। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির উৎপাদন কার্যক্রম ২০২০ সালের নভেম্বরের পর প্রথমবারের মতো সংকুচিত হয়েছে।
এদিকে নভেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ায় কারখানা কার্যক্রম টানা পঞ্চম মাসের মতো সংকুচিত হয়েছে। তবে এ খাতের মন্দা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে। সম্ভবত দেশটির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সবচেয়ে খারাপ সময় শেষ হতে যাচ্ছে। তার পরও নভেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার রফতানি গত আড়াই বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে। চীনসহ বিশ্ববাজারে চাহিদা দুর্বল হওয়া এবং সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে মন্দার কারণে দেশটির রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বেসরকারি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, গত মাসে তাইওয়ানের উৎপাদন খাতের পিএমআই ৪১ দশমিক ৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। যদিও এ সূচক অক্টোবরের ৪১ দশমিক ৫ পয়েন্ট থেকে সামান্য উন্নতি হয়েছে। পাশাপাশি ভিয়েতনামের শিল্পোৎপাদন খাতের পিএমআই অক্টোবরের ৫০ দশমিক ৬ থেকে নভেম্বরে ৪৭ দশমিক ৪ পয়েন্টে নেমেছে। যেখানে ইন্দোনেশিয়ার পিএমআই এখনো ইতিবাচক রয়ে গিয়েছে। দেশটির উৎপাদন খাতের কার্যক্রমের সূচক আগের মাসে ৫১ দশমিক ৮ থেকে গত মাসে ৫০ দশমিক ৩ পয়েন্টে নেমেছে। তবে উল্টো পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে ভারতে। নভেম্বরে দেশটির শিল্পোৎপাদন কার্যক্রম গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। উৎপাদন খরচের চাপ ধীর হওয়ায় এবং ভোক্তা পণ্যের উচ্চ চাহিদা কারখানা কার্যক্রম বাড়াতে সহায়তা করেছে। সম্পাদনা: মাজহারুল ইসলাম