ওয়াশিংটনে দু’দিনব্যাপী টিকফা বৈঠক শুরু কাল
সোহেল রহমান : বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দু’দিনব্যাপী ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এগ্রিমেন্ট ফোরাম (টিকফা)-এর বৈঠক ওয়াশিংটনে শুরু হচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার। এটি টিকফা’র ষষ্ঠ কাউন্সিল বৈঠক। বৈঠকে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয় (ইউএসটিআর) অংশ নেবে। বাংলাদেশ থেকে বৈঠকে অংশ নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ-এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল রোববার যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। প্রতিনিধিদলের অন্যান্য সদস্যরা হলেনÑ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডবিøউটিও সেল-এর মহাপরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান, কৃষিসচিব মোঃ সায়েদুল ইসলাম, শ্রমসচিব মোঃ এহছানে এলাহী প্রমুখ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এবারের টিকফা বৈঠকে বাংলাদেশের আলোচ্যসূচী হচ্ছে সাতটি। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক এখন যে হারে শুল্ক দিয়ে রপ্তানি হচ্ছে, বাংলাদেশ সেখানে একটু ছাড় চায়। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আরও বেশি পণ্য যাতে রপ্তানি করা যায়, সে জন্য একটু অগ্রাধিকারও চায় বাংলাদেশ। দেশটি থেকে আমদানি করা তুলায় বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের পোশাক তৈরি হয়। এ পোশাক শুল্কমুক্তভাবে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করতে চায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশি ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)-এ নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে। প্রক্রিয়াটিও জটিল। বাংলাদেশ চায় এ প্রক্রিয়া সহজ হোক। অন্যান্যের মধ্যে বৈঠকে বাংলাদেশ মানসম্মত সনদ দেয়ার জন্য অবকাঠামো তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কারিগরি সহায়তাও চাইবে। এছাড়া চাইবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার পর সম্ভাব্য যেসব ঝুঁকির মধ্যে পড়বে, সেগুলো থেকে উত্তরণের জন্য সহায়তা।
সূত্রমতে, টিকফা ফোরাম-এর বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচ্যসূচী ১১টি। বাংলাদেশের মোট তুলা আমদানির ১১ শতাংশ আমদানি করা হয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দেশটি বাংলাদেশে তুলা রপ্তানি বাড়াতে চায়। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করার পর পোকা দমনের জন্য এগুলো কিছুদিন ওষুধ দিয়ে রেখে দিতে হয়। দেশটি এ ব্যবস্থার প্রত্যাহার চায়। যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি হচ্ছেÑ এতে খরচ ও সময় বেশি লাগছে বলে বাংলাদেশি আমদানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কম তুলা আমদানি করছেন।
বাংলাদেশে বীজ রপ্তানি সুবিধা পেতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য দেশটি বীজ আইন প্রভিশন নিয়ে আলোচনা করবে। ডেটা সুরক্ষা আইন ও ডিজিটাল বিধির খসড়া, সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি দর্শকদের কাছে যাওয়া ওভার দ্য-টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্ম এবং অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচ্যসূচীতে।
এছাড়া বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে শ্রমিক অধিকার, শ্রম সংগঠন করার স্বাধীনতা, কারখানায় নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ, শিশুশ্রম, মেধাস্বত্ব ইত্যাদি বিষয় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচ্যসূচীতে।
বাণিজ্য সংশ্লিষ্টদের মতে, আসন্ন টিকফা বৈঠকে পোশাক খাতের জন্য সুবিধা তো বটেই, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের এখন চাওয়া উচিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে দেশটির বিনিয়োগ কীভাবে আসতে পারে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া। অন্যদিকে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক যে সমর্থন চাচ্ছে বাংলাদেশ, এর বিরোধিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আদায়ে বাংলাদেশকে চেষ্টা করতে হবে। আর চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জন্য একটা সুযোগ।
জানা যায়, টিকফা চুক্তি সই করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর। টিকফার আগে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ রূপরেখা চুক্তি (টিফা) নামে ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশকে চুক্তি সইয়ের তাগিদ দিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। টিফা-ই পরে টিকফা হয়। চুক্তিতে বলা হয়, বছরে কমপক্ষে একবার এ ফোরামের বৈঠক হবে। সে অনুযায়ী ২০১৪ সালের এপ্রিলে ঢাকায় প্রথম ও ২০১৫ সালের নভেম্বরে ওয়াশিংটনে দ্বিতীয় বৈঠক হয়। এভাবে ঢাকা-ওয়াশিংটন, ওয়াশিংটন-ঢাকা করে প্রায় প্রতিবছরই টিকফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও প্রত্যাশার তুলনায় অগ্রগতি সামান্যই।