শেয়ারবাজারে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিস্ক্রিয় থাকায় পতনের সঙ্গে লেনদেনের খরা
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার দর পতনের সঙ্গে লেনদেনের খরা চলছে। গতকাল সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবারও দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন দুই শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক কমেছে। আর আগের দিন রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এক বছর ৮ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ লেনদেন হয়। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ফ্লার প্রাইস বা সর্বনি¤œ দামে আটকে রয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ক্রেতার অভাবে দিনের পর দিন লেনদেন হচ্ছে না। কমে এসেছে লেনদেনও। প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশও বাজারে নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা আরও মনে করেন, সরকারবিরোধী একটি চক্রের পাঁয়তারায় এসব বিনিয়োগকারী নিস্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। সব কিছু মিলে এক ধরনের চাপের মধ্যে রয়েছে শেয়ারবাজার। গতকাল মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। অবশ্য লেনদেন তিনশো কোটি টাকার ঘরেই আটকে আছে। একই সঙ্গে বড় হয়েছে দাম কমার তালিকা। ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় যে কয়টি প্রতিষ্ঠান স্থান করে নিয়েছে, তার দ্বিগুণের বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে দাম কমার তালিকায়।
গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের প্রথম আধাঘণ্টায় সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে।
তবে এরপরই বদলে যেতে থাকে বাজারের চিত্র। দরপতনের তালিকায় নাম লেখাতে থাকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান। যা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। ফলে সবকটি সূচক কমে দিনের লেনদেন শেষ হয়। একই সঙ্গে বড় হয় দরপতনের তালিকা।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ২৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৫টির। আর ২২১টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২১২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৯৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৫৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার দিনে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৪৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৩১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৩১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বসুন্ধরা পেপারের শেয়ার। কোম্পানিটির ২০ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেনেক্স ইনফোসিসের ১৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আমরা নেটওয়ার্ক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ফার্মা, ওরিয়ন ইনফিউশন, নাভানা ফার্মা, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, এডিএন টেলিকম এবং অগ্নি সিস্টেম। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৭৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১২৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪২টির এবং ৭২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।