দেশে যক্ষা চিকিৎসায় সাফল্য ৯৭ ভাগ : ডা. আয়শা আক্তার
শাহীন খন্দকার : বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩ লাখ ৬০ হাজারের অধিক মানুষ যক্ষায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এরমধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ যক্ষারোগী শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এরপরও যক্ষা চিকিৎসায় বাংলাদেশের সাফল্য শতকরা ৯৭ শতাংশ। দেশের যক্ষা রোগীদের বিনামুল্যে উন্নত চিকিৎসা দিচ্ছে সরকার।
শ্যামলী ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, যক্ষা রোগীদের মধ্যে জনসচেতনতার অভাব রয়েছে। সামাজিক কুসংস্কারের কারণে যক্ষারোগীদের মধ্যে একটি অংশ শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক অনুষ্ঠানে বলেন, দেশেই য²া রোগের ওষুধ তৈরি হচ্ছে। দেশে ব্যবহারের পাশাপাশি এগুলো বিদেশেও রপ্তানি করা হবে। সা¤প্রতিক সময়ে দেশে যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার কমেছে। ২০১৫ সালে যেখানে ৭০ হাজারের অধিক মৃত্যু ছিল, এখন তা ৪০ হাজারে নেমে এসেছে। ব্যাপক ভিত্তিতে টিবি স্ক্রিনিং কার্যক্রম চলছে।
ডা. আয়শা আক্তার আরো বলেন, আমাদের সব হাসপাতালে য²া পরীক্ষার যন্ত্রপাতি রয়েছে। মানুষ এখন কুসংস্কার এড়িয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে যাচ্ছেন। আর তাদের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হচ্ছেন। আমরা চাই মানুষ চিকিৎসা নিতে আসুক। তাদের চিকিৎসা দেওয়ার সব ব্যবস্থা রয়েছে।
তিনি বলেন, জাতীয় য²া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কার্যক্রম মূল্যায়নের জন্য প্রতি তিন বছর অন্তর দেশে জেএমএম কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। য²া নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত হয়। দেশে বিদ্যমান জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর মধ্যে য²া একটি প্রধান সমস্যা, তাই বাংলাদেশ সরকার সব নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে য²া রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, ২০২১ সালের এক জরিপে নতুনভাবে ফুসফুসের যক্ষায় আক্রান্ত রোগীদের ৯৫ ভাগ শনাক্তকরণ এবং তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ সম্ভব হয়েছে। ২০১৫ সালে প্রতি ১ লাখ জনসংখ্যায় যক্ষা সংক্রমণের হার ছিল ২২৫ জন। ২০২১ সালে এই সংক্রমণের হার কমিয়ে ২১৮ জনের মধ্যে আনা সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশ ২০১২ সালে জিন এক্সপার্ট নামে একটি উন্নত স্বয়ংক্রিয় য²া শনাক্তকারী পরীক্ষা চালু করেছিল। যা এখন ৫১০টি স্থানে স্থাপন করা হয়েছে এবং ২০২৫ সালে মধ্যে সকল য²া অনুমানকারীর জন্য এ পরীক্ষাটি নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করেছে।
টিবি হাসপাতালের সহকারি পরিচালক বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সর্ব প্রথম স্বল্পমেয়াদি ওষুধ প্রতিরোধী য²ার চিকিৎসা পদ্ধতি চালু করেছে। বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে য²া সম্পর্কে সচেতনতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ সরকার লক্ষ্যকে একটি বাধ্যতামূলক লক্ষণীয় রোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। কাগজভিত্তিক রেকর্ডিং এবং রিপোর্টিংয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক রেকর্ডিং এবং রিপোর্টিং চালু করা হয়েছে।
বাংলাদেশ য²া নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন করলেও বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এখনো ধারণা করা হচ্ছে য²ায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ শনাক্তকরণ সম্ভব হয়নি। এই লক্ষ্যে নবম জেএমএম-এ য²া কর্মসূচির অগ্রগতি পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন প্রস্তাবিত হয়েছে।
তিনি বলেন, মূল চ্যালেঞ্জগুলো খুঁজে বের করে ২০১৮ সালের মধ্যে বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনে চিকিৎসক গবেষকরা কাজ করেছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে টিবি মহামারির একটি টেকসই সমাপ্তির জন্য য²া কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে অর্জনযোগ্য সমাধানগুলো চিহ্নিত করা জরুরি বলেও তিনি জানান। সম্পাদনা : মাজহারুল ইসলাম