দেশে হচ্ছে ৭০ ও ৯০ ধরণের ফল-সবজি
মতিনুজ্জামান মিটু: বেড়েছে বিভিন্ন ফল ও সবজি চাষের জমি। উৎপাদনের দিক থেকে বিশে^ শীর্ষ ১০ এ জায়গা করে নিয়েছে এদেশ। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) এর পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: হাফিজুল হক খান ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী জানান, বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির ভূমিকা অনস্বীকার্য যার প্রমাণ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। গত পাঁচ দশকে দেশের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, যা আগের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ বেশি। অথচ বাড়তি জনসংখ্যার বিপরীতে কৃষি জমি কমেছে শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ। তবুও এবাড়তি জনগণের খাদ্য জোগানে কৃষিই রেখে চলেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। গত পাঁচ দশকে খাদ্যশস্যের উৎপাদন আশাব্যঞ্জক বেড়েছে, যা প্রায় ২ দশমিক ৩ গুণ। এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির যথাযথ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে।
প্রক্রিয়াজাত প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রূপান্তরিত কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ প্রসঙ্গে এক পর্যায়ে এই দুই কৃষি বিজ্ঞানী আরও জানান, কৃষির আধুনিকায়ন ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কৃষি তথা সবুজ বিপ্লব হয়েছে। বিভিন্ন ফল ও সবজি চাষে জমি বেড়েছে, বাংলাদেশ উৎপাদনের দিক থেকে বিশে^ শীর্ষ ১০ এ জায়গা করে নিয়েছে। দেশে এখন ৭০ ধরনের ফল ও ৯০ প্রকার সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। এ ছাড়াও ফুল, মসলা, ডাল, তেল, কন্দালজাতীয় ফসলসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদনও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, যা এখন দৃশমান। কিন্তু উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি কৃষিপণ্যের অপচয় সারা বিশে^ বেশি হারে বেড়ে চলেছে। উন্নত দেশের চেয়ে উন্নয়নশীল দেশে কৃষিপণ্যের অপচয়ের পরিমাণ প্রায় ২৫ থেকে ৪৫ ভাগ। এক্ষেত্রে এখানে উৎপাদিত কৃষিজাত দ্রব্যের প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ উদ্যানতাত্তি¡ক ফসল বিশেষ করে ফলমূল ও শাকসবজির ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ, পরিবহন, প্যাকেটজাতকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ে গবেষণার মাধ্যমে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গবেষণা পরিচালনা করছে, যা গুণগত মানবজায় রেখে সংরক্ষণকাল বাড়ানো ও বিদেশে রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে নি:সন্দেহে।
নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় ফল এবং সবজির সংরক্ষণকাল বাড়ানোর জন্য সঠিক পরিপক্বতায় নির্ধারিত ফানজিসাইড যেমন সাইট্রাস জাতীয় ফলের থায়াবেনডাজল, ইমাজলিল প্রয়োগ ও ৫ ডিগ্র্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা ও শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ আর্দ্রতায় লেবুজাতীয় ফলকে দীর্ঘসময় গুণগতমান বজায় রেখে সংরক্ষণ করা যায়। একইভাবে পরিপক্ব আমকে ১৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা ও শতকরা ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ আর্দ্রতায় ২ থেকে ৩ সপ্তাহ, আনারসকে ১১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা ও শতকরা ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ আর্দ্রতায় ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ, সবুজ কলাকে (পরিপক্ব কাঁচা) ফানজিসাইড দ্রবণে পরিশোধন করে ১২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা ও শতকরা ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ আর্দ্রতায় ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত গুণগতমান বজায় রেখে অনায়াসে সংরক্ষণ করা যায়।
এছাড়া পোস্টহারভেস্ট ট্রিটমেন্ট ও মডিফাইড এটমোসফিয়ার প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণকাল বাড়ানো যেতে পারে। ফল ও সবজি যথাযথ পরিপক্বতায় সংগ্রহের পর স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সাধারণত ২ থেকে ৩ দিনের বেশি সতেজ ও খাবার উপযোগী থাকে না। কিন্তু সংগ্রহকরা সতেজ কৃষিপণ্য ২০০ পিপিএম/লিটার ক্লোরাক্স দ্রবণ (২/৩টি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট) দিয়ে ধোয়ার পর শিম ও পালং শাক মুখবন্ধ পলিপ্রপাইলিন প্যাকেটে পুঁইশাক, কাঁচা মরিচ ও লালশাক ৮ দিন, ১০ দিন, ১১ দিন এবং ৭ দিন পর্যন্ত ভালো অবস্থায় সংরক্ষণ করা যায়। একইভাবে ১.৫শতাংশ ও ১.০ শতাংশ ছিদ্রযুক্ত ও মুখবন্ধ পলিপ্রপাইলিন প্যাকেটে ৯ দিন পর্যন্ত ঝিঙা ও ধুন্দুল গুণগতমান বজায় রেখে অনায়াসে সংরক্ষণ করা যায়।
ড্র্রাইং প্রযুক্তি প্রয়োগেও সংরক্ষণকাল বাড়ে। ফল ও সবজিকে নির্দিষ্ট আকারে কেটে টুকরা টুকরা করে বøাঞ্চিং করলে এনজাইম নিষ্ক্রীয় হয়। অতঃপর কিছুক্ষণ ঠান্ডা পানিতে রেখে পরে পোস্টহারভেস্ট ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করে ড্রাইয়ারে নির্দিষ্ট আর্দ্রতায় শুকালে গুণগতমান বজায় থাকে। এভাবে কাঁচা আম, গাজর, পেঁপে, বাঁধাকপি, ফুলকপি ইত্যাদি শুকিয়ে মোড়কজাত করলে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।
মাইক্রোবিয়াল ট্রিটমেন্ট ও নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় ফ্রেশকাট প্রযুুক্তি। ফ্রেশকাট পদ্ধতি হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রক্রিয়া যেখানে খাদ্যসামগ্রিকে সতেজ অবস্থায় প্রয়োজনীয় এবং পরিমাণমতো আকারে কেটে ন্যূনতম পরিচর্যা ও ট্রিটমেন্ট প্রয়োগ করে প্রক্রিয়াজাতকরণের পর মোড়কজাত করে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করা, যাতে খাদ্যসামগ্রির গুণগতমান অক্ষুন্ন থাকে এবং কোন অণুজীবের সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে না। অসমোটিক ডিহাইড্রেটেড প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ফল যেমন: আম, কলা, কাঁঠাল, পেঁপে, আনারস ইত্যাদি অনায়াসে দীর্ঘদিন পুষ্টিমান বজায় রেখে সংরক্ষণ করা যায়।