ঋণ খেলাপি ও অর্থপাচারের মহোৎসবে খাদের কিনারে ব্যাংকিং খাত : টিআইবি
সোহেল রহমান : ‘ঋণ খেলাপি ও বেনামী ঋণ আর অর্থপাচারের মহোৎসবে দেশের ব্যাংকিং খাত এখন খাদের কিনারে’ বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’ (টিআইবি)। খাদের কিনারা থেকে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতকে উদ্ধারে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের নিরপেক্ষ ও পেশাগত পরামর্শের উপর নির্ভর করে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য কৌশল প্রণয়ণ এবং ব্যাংক খাতে আরো গভীরতর সংকট প্রতিরোধে অবিলম্বে ব্যক্তি মালিকানাধীন খাতে ‘প্রকৃত মালিকানার স্বচ্ছতা’ আইন প্রণয়নসহ আর্থিক লেনদেনের নজরদারিতে সহায়ক ‘কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (সিআরএস)’-এ অবিলম্বে যুক্ত হওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোড়ালো আহŸান জানিয়েছে সংস্থাটি ।
সোমবার টিআইবি’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহবান জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, স¤প্রতি দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে অত্যন্ত ধূর্ততার সাথে ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়ার সংবাদ দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর জন্য ভয়ংকর উদ্বেগজনক। ইসলামী ব্যাংকসহ কমপক্ষে তিনটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ভুয়া ঠিকানা ও অস্তিত্বহীন কোম্পানির বিপরীতে কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে অবিশ্বাস্য দ্রæততায় সরিয়ে নেবার ঘটনা গগনচুম্বি খেলাপী ঋণ ও অর্থপাচারের কারণে ইতোমধ্যে জর্জরিত ব্যাংকিং খাতকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে।
‘সা¤প্রতিক অতীতে ব্যাপক আলোচিত বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি ও পিকে হালদারের জালিয়াতির মাধ্যমে লুণ্ঠন ও অর্থ পাচারের পরও কেন শিক্ষা নেয়া হল না? কেন ব্যাংক খাতের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফেরানোর লক্ষ্যে কোন কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হল না?’ Ñ এমন প্রশ্ন তুলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সাধারণ গ্রাহককে ব্যাংক থেকে ন্যূনতম অংকের ঋণ নিতে গেলেও যে পরিমাণ কাগজপত্র প্রদান করতে হয়, সেখানে কীভাবে ভুয়া কিংবা নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে অবলীলায় হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে তুলে নেয়া হচ্ছে? গত ১৪ বছরে পূর্বের তুলনায় মোট খেলাপী ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬ গুন বেড়েছে। বারবার খেলাপী ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে কিংবা পুনঃতফসিল করেও খেলাপী ঋণ আদায় করা যাচ্ছে না, তখন কাদের স্বার্থে কিংবা কাদের দেখে অস্বাভাবিক দ্রæততার সাথে এমন আগ্রাসী ঋণ প্রদান করা হয়? প্রকৃতপক্ষে কারা এই বিপুল পরিমাণ অর্থের সুুবিধাভোগী? এ প্রশ্নের উত্তর দেশবাসীর জানার অধিকার আছে।
তিনি বলেন, ‘অস্বাভাবিক ও প্রশ্নবিদ্ধ ঋণের উল্লিখিত ঘটনা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার পাশাপাশি কোনভাবেই যেন এসব অর্থ বিদেশে পাচার হতে না পারে, সে বিষয়ে এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টিআইবি মনে করে, যখন-তখন রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের মালিকানায় কিংবা শীর্ষ পদে বদল এসব ব্যাংকের আমানতের অর্থ লোপাটে সহায়ক হয়। ব্যাংকের মালিকপক্ষ বা পরিচালনা পর্ষদই তখন ঋণ জালিয়াতিতে যুক্ত হয় এবং যোগসাজশের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে লুটপাটে জড়িত হওয়ার সুযোগও বহুগুনে বেড়ে যায়।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরও বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে বিদেশে অর্থ পাচারের নির্ভরযোগ্য বহু তথ্য প্রতিনিয়ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রকাশিত হচ্ছে। বিশেষ করে, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে চালান জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ পাচারের ঘটনায় খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, পণ্য আমদানিতে ২০ থেকে ২০০ ভাগ পর্যন্ত বাড়তি দাম দেখানোর শতাধিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। অন্যদিকে গেøাবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই)-এর সর্বশেষ প্রকাশিত হিসাব বলছে, বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতিবছর পাচার হওয়া অর্থের পরিমান ৮২৭ কোটি মার্কিন ডলার। এই অর্থপাচার প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং অর্থপাচারের তথ্য প্রকাশ রোধ করার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থায় তথ্য প্রেরণ স্থগিত করা হয়েছে বলে জানা যায়।’