গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করবে বিএনপি ডিএমপি অনুমোদনের পর নেতাকর্মীদের ঢল
মাসুদ আলম : বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সায়েদাবাদ সংলগ্ন এই মাঠে অনুমতি পাওয়ার বিষয়টি দলের পক্ষ থেকে জানানোর পর সোয়া চারটার আগেই নেতা-কর্মীদের প্রথম দলটে পৌঁছে যায় মাঠে। সরকারবিরোধী নানা ¯েøাগান দিতে দিতে মিছিল নিয়ে ঢুকতে থাকে তারা।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মাঠে বাড়তে থাকে ভিড়। সেখানে তারা ‘খালেদা জিয়ার অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন, তারেক রহমানের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি নানা ¯েøাগান দিয়ে মাঠ মাতাচ্ছে।
নেতা-কর্মীরা সেখানে পৌঁছে গেলেও মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। আর বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে শনিবার বেলা ১১টায় সেখানে জনসভা শুরু হবে।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারসহ নানা দাবিতে গত ১২ অক্টোবর থেকে প্রতি শনিবার দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে বিএনপির সমাবেশের প্রতিটিতেই এই চিত্র দেখা গেছে। কোথাও জনসভার আগের দিন, কোথাও এমনকি দুই বা তিন দিন আগে থেকেই সভাস্থলে নেতা-কর্মীদের ভিড় দেখা গেছে। ধারাবাহিক সমাবেশের অংশ হিসেবে রাজধানীতে ১০ ডিসেম্বর জনসভার ডাক দেয়া হলেও এটি হবে কি না, এ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় জনসভার স্থল নিয়ে বিরোধের কারণে।
শনিবার বেলা ১১টায় গোলাপবাগে সমাবেশ শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। তবে এর আগের ৯টি বিভাগীয় সমাবেশেও দেখা গেছে আগের দিন থেকেই নেতা-কর্মীরা মাঠে অবস্থান নেন
বিএনপি এই সমাবেশটি করতে চেয়েছিল নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে। কিন্তু পুলিশ অনুমতি দেয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে নয়াপল্টনেই জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে বুধবার ব্যাপক সংঘর্ষ হয় সেখানে। প্রাণ হারান একজন।
রাজধানীর সায়েদাবাদে এলাকার গোলাপবাগ মাঠে শনিবার বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ একটি প্রতিনিধি দল।
ডিবি কার্যালয়ের সামনে ডা. এ জেড এম জাহিদ বলেন, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশ রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তরফ থেকে দলের আবেদনের প্রেক্ষিতে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কমলাপুর স্টেডিয়াম চেয়েছিলাম, কিন্তু সেখানে খেলা চলায় সম্ভব না। পুলিশের কাছে তারপর আমরা গোলাপবাগ মাঠের কথা বলেছিলাম, পুলিশ লিখিতভাবে অনুমতির জন্য আবেদন করতে বলেছিল, আমরা লিখিত আবেদন করেছি। তারা অনুমতি দিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এটা আইনগতভাবে মোকাবিলা করব। আমাদের সমাবেশ হবে। পুলিশ সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আশ্বস্ত করেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, বিএনপির প্রস্তাবিত দাবির প্রেক্ষিতে তাদের গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপি বিভিন্ন বিভাগীয় শহরগুলোতে গণসমাবেশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার ঢাকায় সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পুলিশ নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। এর বদলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলা হয় বিএনপিকে। তবে বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশে অনড় থাকে।
একপর্যায়ে বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীরা জমায়েত হলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এতে মকবুল নামে একজন মারা যান। আহত হন অনেকে। এরপর বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীসহ গ্রেফতার করা হয় প্রায় ৪০০ নেতাকর্মীকে। সবশেষ শুক্রবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার দেখায় ডিবি।