গার্মেন্ট ব্যবসায় বায়ারের সঙ্গে বৈঠক করুন নিজেই না হলে ঠকে যাবেন
লাবণ্য ইসলাম
আমি খুব মর্ডান এটা কিন্তু বলছি না । তবে আপনারা যারা এখনো মান্ধাতা আমলে পড়ে রয়েছেন তাদের জন্য একরাশ সমবেদনা। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শিখুন। না পারলে ডিজিটাল যুগে জন্ম নেওয়াটাই বৃথা। গার্মেন্ট ব্যবসার একটা গোপন কথা বলছি। যখন কোন ইউরোপিয়ান বা অন্যদেশের বায়ার আপনার কোম্পানির সঙ্গে মিটিং করতে আসবে। তখন বিষয়টি সিক্রেট রাখবেন। এসব মিটিংগুলো অফিসে করবেন না। কারণ অফিসিয়ালি কিছু খোঁজারু থাকে। এই খোঁজারুগুলো আপনার কোন না কোন ওয়ার্কার। যারা নিজের কোম্পানির বায়ারের খোঁজ সাথে সাথেই অন্য গার্মেন্টসের ম্যানেজারকে দিয়ে দিবে। সরিষার মধ্যে ভূত বুঝতে পারছেন। অথচ কত কাঠ খড় পুড়িয়ে একজন বায়ারকে নিজের প্রতিষ্ঠানে আনতে হয়। কারখানার মালিক মনে মনে আশার জাল বুনে ফেলে। এইবার আমার প্রোডাক্ট নেবে আমি বিশাল অংকের একটা টাকা পাবো। এই টাকা দিয়ে আমার ব্যবসা আরো বড় হবে। প্রোডাক্ট নিতে থাকবে ডে বাই ডে। তারপরে আমি এটা করব ওটা করবো। বাচ্চাদের নিয়ে ট্যুরে যাব। ওয়াইফকে একটা নেকলেস কিনে দিবো। একটা নিউ গাড়ি নিব।একটা নিউ ফ্ল্যাট।কিছু হীরে কিছু গোল্ড গোল্ড । যমুনা ফিউচার পার্কে গিয়ে কিছু শপিং করব। সিঙ্গাপুরে যাব মালয়েশিয়া যাব দুবাইতে গিয়ে গহনা নিয়ে আসবো ।স্বপ্নে বিভোর থাকার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন আপনার সিধঁ কেটে চোরে সব নিয়ে গেছে । এখন বায়ার আসার সময় হয়েছে। লাঞ্চ আওয়ারে লাঞ্চ করবে। স্যাম্পল দেখবে। সাভার ফ্যাক্টরি ভিজিট করবে। লং টাইম থাকবে। আপনি অফিসে বিশাল অ্যারেঞ্জের ব্যবস্থা করলেন। দেশি খাবার থেকে শুরু করে চাইনিজ কন্টিনেন্টাল কি নাই মেনুতে । যার দ্বারা রুজি রোজগার সে তো ভগবান। আপনিও সকাল-সকাল অফিসে উপস্থিত। ঘন্টার পর ঘন্টা, ঘন্টার পর ঘন্টা বসে আছেন বায়ার ই আসছে না। আপনার ম্যানেজারের ওই দিন মহা শরীর খারাপ । আগের দিন রাত থেকে শুরু হয়েছে কোনক্রমেই সে বিছানা থেকে উঠতে পারছে না। আপনাকে অনুনয়-বিনয় করে বলছে স্যার আজকের মত এমন একটা দিনে আমি আপনার পাশে থাকতে পারছি না। আজকে আপনার কাছে থাকা আমার বিশেষ ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও আমি আসতে পারছি না। আমার কি যে কষ্ট হচ্ছে বুকের পাঁজর ভেঙ্গে যাচ্ছে। আপনার বিশ্বস্ত ম্যানেজারকে আপনি কোনদিনও অবিশ্বাস করতে পারবেন না । তার মনটা এত পবিত্র আপনার কাছে জমজম ক‚পের পানি দিয়ে ধোঁয়ার মত। ওদিকে আপনার কর্মচারীরা বলছে স্যার খাবারগুলো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে । মুচকি হেসে আপনি হয়তো বলছেন,এইতো চলে আসলো বলে। ওয়ার্কারদের বলছেন যান তো একটু গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন বা একটু দেখে আসুন। আপনার অস্থিরতা বাড়ছে এই বুঝি আসছে এই বুঝি আসছে। মানে আপনার ধারণা ইনশাল্লাহ সে আসবেই। ফরেনার বা ভিনদেশী বায়াররা এক কথার মানুষ। এখন আমার সাথে যেটা হয়েছে সেটা বলছি। আমার বায়ার কে আমার কোম্পানির ম্যানেজার যেটা বলেছিল । তা মোটামোটি এরকম স্যার ,আপনি তো একচুয়ালি জানেন না আমাদের কোম্পানিতে যে প্রোডাক্টগুলো রয়েছে ! আমরা অন্য কোম্পানি থেকে সংগ্রহ করে আপনাকে দিচ্ছি। আপনি যদি মেইন কোম্পানি থেকে প্রোডাক্ট সংগ্রহ করেন তাহলে আপনি আরো কমে সাশ্রয়ী দামে প্রোডাক্ট সংগ্রহ করে বিজনেসে ভালো মুনাফা সংগ্রহ করতে পারবেন । তো বায়ার বলেছিল আমি তো কমিটেড এটা পসিবল নয় ।আমি অন্য কোথাও থেকে প্রোডাক্ট নিব না।আমার ম্যানেজার তখন বায়ারকে বলছে, এই মুহূর্তে আপনাকে প্রোডাক্ট দিতে পারবো না । আমার মালিক আমাকে জানিয়ে দিয়েছে। আর উনি আপনাকে ফোন দিয়ে তাকে বিরক্ত করতে বারণ করেছে। তো রাত পৌনে বারোটায় ,আমার ফ্রান্সের বায়ার আমাকে ফোন দিল আপনি এবার প্রোডাক্ট দিতে পারেননি তাতে কি হয়েছে নেক্সটে আমি আপনার থেকেই নিব। আমি তো হতভম্ব। বায়ার তখন আমাকে বললো,আপনার ম্যানেজার বলেছে আপনি অন্য কোম্পানি থেকে প্রোডাক্ট আনছেন। ফ্রেশ অর্ডার হয়নি। আপনি ওনাকে বলেছেন আমি যেন আপনাকে বিরক্ত না করি। এই হলো গার্মেন্টে বায়ার ভাগানোর গল্প। ডাল মে কুচ কালা হে । তাই যারা গার্মেন্ট ব্যবসা করবেন তাদের বলছি, বায়ার মিটিং সব সময় বড় বড় হোটেলে করবেন। ম্যানেজারকে সঙ্গে নিবেন না। অফিসেও মিটিং করবেন না।