ডিএসইর লেনদেন ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতায় কেটে যাওয়ায় ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে শেয়ারবাজার
মাসুদ মিয়া: দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় কেটে যাওয়ায় টানা ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে শেয়ারবাজার। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবারও সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণও। এদিন ডিএসইতে লেনদেন ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর আগে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে ১০ ডিসেম্বর কী হবে তা নিয়ে সাধারণ মানুষ যেমন উদ্বিগ্ন ছিলেন, তেমনি উদ্বিগ্ন ছিলেন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরাও। যার ফলে টানা দরপতনের সঙ্গে শেয়ারবাজারে দেখা দেয় লেনদেন খরা। ধারাবাহিকভাবে লেনদেন কমতে কমতে ডিএসইতে ২০ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ অবস্থায় চলে যায়। তবে বিএনপির সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হওয়ার পর রোববার শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মিলে। সূচক বাড়ার পাশাপাশি বাড়ে লেনদেনের পরিমাণও। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসের মতো দ্বিতীয় কার্যদিবসেও সবকটি সূচক বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে যেওয়া ঊর্ধ্বমূখী ধারায় ফিরেছে। এটা বাজারের জন্য ভালো। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বর্তমানে শেয়ারবাজার ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা উচিত কমে করেন। তারা মনে করেন,অনেক বিনিয়োগকারীর টাকা আটকে আছে সে জন্য লেনদেন কম হচ্ছে। এটি স্থিতিশীল বাজারের জন্য কাম্য নয়।
অবশ্য দাম বাড়া বা কমার তুলনায় ডিএসই ও সিএসইতে দাম অপরিবর্তিত থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি রয়েছে। দাম অপরিবর্তিত থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনি¤œ দাম) আটকে রয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের ক্রেতার দেখা তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না।
গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। সেই সঙ্গে দাম বাড়ার ধারা ধরে রাখে ফ্লোর প্রাইসের বাইরে থাকা বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৭৪ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭টির। আর ২৬৫টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৭ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৬৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২১৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৭২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৬৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪১৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১৫৪ কোটি ৫ লাখ টাকা।
সূচক ও লেনদেন বাড়ার দিনে ডিএসইতে টাকার অংকে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে স্যালভো কেমিকেলের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বসুন্ধরা পেপারের ২৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন।
লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- সালভো কেমিক্যাল, বসুন্ধরা পেপার, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং, অরিয়ন ইনফিউশন, অরিয়ন ফার্মা, বিএসসি, ইস্টার্ন হাউজিং, আমরা নেটওয়ার্ক, জেনেক্স ইনফোসিস ও বেক্সিমকো ফার্মা।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- মনোস্পুল পেপার, কোহিনুর কেমিক্যাল, সোনালী আঁশ, পেপার প্রসেসিং, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, বসুন্ধরা পেপার, অরিয়ন ইনফিউশন, বিডিকম অনলাইন, ইস্টার্ন হাউজিং ও জেমিনী সী ফুড।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, মুন্নু এগ্রো, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মুন্নু সিরামিক, বিডি থাই ফুড, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বেঙ্গল উইন্ডসোর, বাটা সুজ ও সী পার্ল বীচ।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৮৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৪২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭টির এবং ৮২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।