টানা পতনের সঙ্গে শেয়ারবাজারে লেনদেনের খরা আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা
মাসুদ মিয়া: দেশের শেয়ারবাজার টানা দর পতনের বৃত্তে আটকে পরেছে। লেনদেন নেমেছে তলানিতে। গতকাল সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস বুধবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকয়টি মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা ছয় কার্যদিবস দরপতন হলো শেয়ারবাজারে।
এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, টানা দর পতনের ভয়ে আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তাতে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ কমে গেছে বাজারে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী থেকে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা সবার মধ্যেই এখন আতঙ্ক বাড়ছে।
এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও দেশবরণ্যে অর্থনীতিবদ আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারে মন্দায় বিনিয়োগকারীদের লোকসান নিয়মিত বাড়ছে। তবে লোকসান মেনে নিয়ে শেয়ার বিক্রি করতে চাইলেও সে সুযোগ মিলছে না। ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকায় বেশিরভাগ শেয়ারে কোনো ক্রেতা নেই। ফলে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর টাকা আটকে গেছেন। সে জন্য লেনদেনের খরা দেখা দিয়েছে শেয়ারবাজারে। আবু আহমেদ আরও বলেন, ফ্লোর প্রাইস উঠে দেওয়া উচিত। তাহলে লেনদেনও গতি বাড়বে। তিনি বলেন শেয়ারবাজারে কাজ হলো উঠানামা করা। ফ্লোর প্রাইস কারনে আটকে রয়েছে। এদিকে বর্তমানে শেয়ারবাজার আটকে আছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দাম বা ফ্লোর প্রাইসে। বাজারের পতন ঠেকাতে গত জুলাইয়ে এ ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা এরই মধ্যে একাধিক আলোচনায় জানিয়েছেন, আপাতত ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কথা ভাবছেন না তারা।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইসের কারণে বাজারে খুব বেশি শেয়ারের লেনদেন হচ্ছে না। বিষয়টি সামগ্রিকভাবে বাজারের জন্য উদ্বেগজনক। বেশির ভাগ শেয়ারের লেনদেন না হওয়ায় সার্বিকভাবে লেনদেনও তলানিতে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় লেনদেন বাড়াতে নানা ধরনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে। তেমনই একটি উদ্যোগ ফ্লোর প্রাইসের চেয়ে ১০ শতাংশ কমে ব্লক মার্কেটে লেনদেনের সুযোগ তৈরি করা। এটি করা হয়েছে মূলত কিছু কিছু শেয়ারের লেনদেন বাড়াতে।
এদিকে শেয়ারবাজারের জন্য সোমবার একটি সুখবর দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শেয়ারবাজারে যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ আইনি সীমার বেশি রয়েছে, তাদের অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় করতে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার পরও চাঙ্গা হচ্ছে না শেয়ারবাজার। গতকাল লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ে। কিন্তু লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বড় হতে থাকে পতনের তালিকা। ফলে মোটামুটি বড় দরপতন দিয়েই শেষ হয় দিনের লেনদেন। মূল্যসূচকের পতনের সঙ্গে বড় হয় দাম কমা প্রতিষ্ঠানের তালিকা। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৩টির। আর ২০৩টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে।
ফলে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৭ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ১৯৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৯৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৫৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকয়টি মূল্যসূচকের পতন হলেও ডিএসইতে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। তবে লেনদেন তিনশ কোটি টাকার ঘরেই আটকে আছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৩৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৩২২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১১ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে বাজারটিতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে মুন্নু সিরামিকের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার ১৫ কোটি ২৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।
লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) আরও কো¤পানি হলো: মুন্নু এগ্রো, বসুন্ধরা পেপার, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং, এডভেন্ট ফার্মা, জেনেক্স ইনফোসিস, অরিয়ন ইনফিউশন ও বেক্সিমকো ফার্মা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৭৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৪১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫২টির এবং ৮২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।