কর্ণফুলী পেপার মিলে উৎপাদন বন্ধ ৩ হাজার টন কাগজের ক্রেতা নেই
অর্থনীতি ডেস্ক : প্রায় ৭০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী কাগজ উৎপাদন কারখানা কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম)। এক সময়ের জনপ্রিয় এ কারখানাটি রুগণ যন্ত্রপাতি, প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্তহীনতা, পাল্প সংকট প্রভৃতি কারণে এখন পুরোপুরি বন্ধ। সবশেষ পুরোনো কাগজ থেকে কিছু উৎপাদন হয়েছিল গত আগস্ট মাসে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ কারখানাটি দেনায় জর্জরিত। এর মধ্যে আবার আছে তিন হাজার টন অবিক্রীত কাগজের বোঝা। দেশে চরম কাগজ সংকটের সময়ও পাঠ্যবই ছাপার উপযোগী এসব কাগজ কাজে লাগানো হচ্ছে না। ঘুরে দাঁড়াতে নতুন প্ল্যান্ট বসানোর চেষ্টা চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। মিল কর্তৃপক্ষ বলছে, পুরোনো যন্ত্রপাতিগুলো প্রায় অকেজো হওয়ার পথে। অনেকগুলো মেশিন অকেজো হয়ে গেছে। তাই মিলের বর্তমান স্থাপনার মধ্যে নতুন প্ল্যান্ট বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন প্ল্যান্ট স্থাপনে সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম চলছে। চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে।
কর্ণফুলী পেপার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী স্বপন কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের প্ল্যান্টটি অনেক পুরোনো। তাছাড়া পাল্পের সংকট রয়েছে। কয়েক বছর ধরে দেশীয় সোর্স থেকে পাল্প পাওয়া যাচ্ছে না। বিদেশ থেকেও আমদানি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে পাল্পের দামও অনেক বাড়তি। যে কারণে এখন প্ল্যান্ট বন্ধ।’ মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, মিলের কাঁচামাল হিসেবে নিজস্ব কূপ এরিয়ায় স্থানীয়ভাবে বাঁশ উৎপাদন হয়। ৪-৫ টন বাঁশ থেকে এক টন পাল্প তৈরি করা হয়। বাঁশ থেকে কাগজ উৎপাদনে প্রতি টনে ১৮-২০ হাজার টাকা ব্যয় হতো। ২০১৭ সালে নানান সমস্যা দেখিয়ে নিজস্ব কূপ থেকে আহরিত কাঁচামাল বাঁশ ও পাল্পউড দিয়ে কাগজ উৎপাদন বন্ধ করে কেপিএম। এতে বন্ধ হয়ে যায় নিজেদের কেমিক্যাল প্ল্যান্টও (সিসি প্ল্যান্ট)। বাঁশ ও পাল্পউড সংগ্রহ বন্ধ করে পুরোনো কাগজ ও আমদানি করা পাল্প ব্যবহার করার কারণে কাগজের উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
তাছাড়া বিদেশি পাল্প সরবরাহের জন্য টেন্ডার করে কার্যাদেশ (ওয়ার্ক অর্ডার) দিলেও সরবরাহ দিতে ব্যর্থ হন সরবরাহকারীরা। আবার নতুন করে টেন্ডার ডাকা হলেও অর্থ সংকট থাকায় নতুন সরবরাহকারীও পাচ্ছে না কেপিএম। গত অর্থবছর (২০২১-২২) পাল্প আমদানির জন্য তিন দফা টেন্ডার আহ্বান করা হলেও কেউ টেন্ডারে অংশ নেননি। ফলে পাল্পের অভাবে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় কারখানাটির। জানা যায়, কর্ণফুলী পেপার মিলে বর্তমানে ২২০ জনের অধিক স্থায়ী শ্রমিক ও কর্মকর্তা রয়েছেন। অস্থায়ী লোকবল রয়েছে সাড়ে তিনশ জনের মতো। বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিকদের বেতনসহ প্রতিষ্ঠানটির মাসিক খরচ পাঁচ কোটি টাকার মতো। কর্ণফুলী পেপার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বপন কুমার সরকার বলেন, কেপিএমে নতুন একটি প্ল্যান্ট বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যেহেতু কেপিএম অনেক পুরোনো মিল তাই আমরা নতুন মিলটি বসানোর দিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় ধরে ধীরে ধীরে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় কেপিএম। গত কয়েক বছর আগে থেকে সংকট এড়াতে সরকারি প্রয়োজনের সব ধরনের কাগজ কেপিএম থেকে কেনার নির্দেশনা দেয় সরকার। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) তাদের বইয়ের জন্য সব কাগজ কেপিএম থেকে সংগ্রহ করতো। প্রতি বছর এনসিটিবি কর্ণফুলী থেকে আড়াই থেকে তিন হাজার টন কাগজ নিতো। এনসিটিবিকে প্রয়োজনীয় কাগজ সরবরাহ দেওয়ার লক্ষ্যে অর্ডার ছাড়াই প্রায় পাঁচ হাজার টন কাগজ তৈরি করে কেপিএম। ২০২০-২১ অর্থবছরে এনসিটিবি এক হাজার টন কাগজের অর্ডার দেয়।
পরবর্তীসময়ে দুই অর্থবছরে কাগজ অর্ডার বন্ধ করে দেয় এনসিটিবি। যে কারণে বর্তমানে প্রায় তিন হাজার টন কাগজ নিয়ে বিপাকে পড়েছে কেপিএম। কেপিএমের মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন) প্রকৌশলী মঈদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পাল্পের অভাবে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে আগের উৎপাদিত প্রায় তিন হাজার টন কাগজ এখনো অবিক্রীত রয়ে গেছে। সূত্র : জাগো নিউজ