আইএমএফ প্রতিবেদন বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির হার ও মাথাপিছু আয় বাড়লেও বৈষম্য বেড়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) তিনগুণ বেড়েছে। কিন্তু বৈষম্যও বেড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়লেও তিনটি দেশের বৈষম্য গত আড়াই দশকে ব্যাপক বেড়েছে। এই তিন দেশের তালিকায় রয়েছেÑ বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা। আবার বৈষম্যও কমেছে তিনটি দেশে। দেশগুলো হচ্ছেÑ ভূটান, মালদ্বীপ ও নেপাল।
স¤প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কর্তৃক প্রকাশিক ‘সাউথ এশিয়াস পাথ টু রেজিলিয়েন্ট গ্রোথ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে ‘করোনা-পরবর্তী দক্ষিণ এশিয়ার টেকসই উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার’ নামক প্রবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। প্রবন্ধে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির ধারা ও ইতিহাস, বৈষম্য, করোনার প্রভাবÑ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়া মানব উন্নয়ন সম্ভব নয়। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেশ উল্লেখযোগ্য। গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের জিডিপি তিনগুণ বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এশিয়ার গড় হার থেকে কম। ১৯৯০-এর দশক থেকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকে। ২০০০ ও ২০১০ দশকের প্রবৃদ্ধির হার দ্রæত হয়। এদিকে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও বৈষম্য বেড়েছে বাংলাদেশে। ১৯৯১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বৈষম্য বেশি বেড়েছে।
তবে বৈষম্য বাড়লেও প্রতিবেদনে বাংলাদেশের কিছু অর্জনের প্রশংসা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০২১ সালে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে কেবল বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ২০১৯ সালের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ কোভিড মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ এই অঞ্চলে সবচেয়ে ভালো করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭০-এর দশকে বাংলাদেশ ও ভারতের মাথাপিছু জিডিপি স্থিতিশীল ছিল। এরপর ১৯৮০-এর দশকে ভারত বাজার উদারীকরণ কর্মসূচি হাতে নেয় এবং ১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশ সেই পথে হাঁটে। ফলে ২০০০-এর দশকে ভারত এবং ২০১০-এর দশকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার দ্রæত বেড়ে যায়। অর্থাৎ বাজার উদারীকরণের সঙ্গে প্রবৃদ্ধির হারের সম্পর্ক আছে।
উল্লিখিত দেশের প্রবৃদ্ধির হার বাড়ার ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই সময়ে দেশগুলোর পণ্য ও সেবা রপ্তানির হারও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তা সত্তে¡ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে জিডিপি ও রপ্তানির অনুপাত চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে কম। এসব দেশের প্রবৃদ্ধিতে রপ্তানি খাতের বড় ভূমিকা ছিল। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জিডিপি-রপ্তানির অনুপাত গত কয়েক দশকে উল্টো কমেছে। ১৯৯৫-৯৯ সালে শ্রীলঙ্কার জিডিপি-রপ্তানির অনুপাত ছিল ৩৬ শতাংশ, কিন্তু ২০১৫-১৯ সালে তা নেমে আসে ২২ শতাংশে। একই সময়ে নেপালের জিডিপি-রপ্তানির অনুপাত ২৪ শতাংশ থেকে কমে ৮ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের কিছু দেশের উৎপাদনশীল খাতের সংকোচন হয়েছে।
আইএমএফ বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার রপ্তানি কমে যাওয়ার মূল কারণ হলো উন্নত দেশগুলোর রপ্তানি নীতির পরিবর্তন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ এশিয়ার তৈরি পোশাক খাত যে কোটা–সুবিধা পেত, তা ১৯৯৪-২০০৫ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। তখন কম্বোডিয়া, চীন ও ভিয়েতনাম এই বাজারের প্রবেশাধিকার পায়। ২০০০ সালের পর পোশাকের বাজারে মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার বাজার হিস্যা কমে যায়। তবে এই অঞ্চলের মধ্যে পোশাকের বাজারে কেবল বাংলাদেশেরই হিস্যা বেড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ছাড়া আর কোনো দেশ উচ্চ প্রযুক্তিভিত্তিক রপ্তানির দিকে যেতে পারেনি।