জেরিন আহমেদ : চলে গেলেন ব্রাজিলের ফুটবল কিংবদন্তি পেলে। ৮২ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে ওপারে পাড়ি দিলেন ফুটবলের রাজা। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন পেলে। এর আগে গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে থাকতে নিজের ‘শেষযাত্রা’ বিষয়ে বলে গেছেন পেলে। যেতে চেয়েছেন সান্তোস ক্লাব স্টেডিয়ামে।
পেলের ইচ্ছানুযায়ী, তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে সাও পাওলো রাজ্যের ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। এর আগে, আইন রীতি অনুযায়ী, সমাহিতের জন্য মরদেহ প্রস্তুত করা হবে আলবার্ট আইনস্টাইন স্টেডিয়ামে।
সেখান থেকে আগামী সোমবার সকালে কফিন নিয়ে যাওয়া হবে সান্তোস প্রাঙ্গণে। সান্তোসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্টেডিয়ামের মাঝমাঠে ২৪ ঘণ্টা পেলের মরদেহ রাখা হবে। সেখানেই ফুটবল রাজাকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে পারবেন জনসাধারণ। ৩ জানুয়ারি সকালে পেলের মরদেহ নিয়ে ‘শেষযাত্রা’ হবে সান্তোসের রাস্তায়। কফিন বহন করে নিয়ে যাওয়া হবে কেলেস্তের সড়ক দিয়ে, যেখানে পেলের মা থাকেন। ১০০ বছর বয়সী পেলের মা শয্যাশায়ী।
অগস্ত্যযাত্রা শেষে পেলেকে মেমোরিয়া নেকরোপোল একিউমেনিকা নামের সমাধিস্থলে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে সমাহিত করা হবে। সমাহিত করার অনুষ্ঠানটিতে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার থাকবে না। এরই মধ্যে পেলের মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বোলসোনারো।
ব্রাজিলের ফুটবলকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন পেলে। তার এই যাত্রা শুরু সাও পাওলোর রাস্তায়। মোজার ভেতরে কাগজ ভরে ফুটবল বানিয়ে তাতে লাথি দিয়ে শুরু। ফুটবলের সেরাদের তালিকায় শুধু তার পাশে প্রয়াত ডিয়েগো ম্যারাডোনা, লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নাম উল্লেখ করা হয়। সব মিলিয়ে তার নামের পাশে গোল ১২৮১টি।
বিশ্বে দ্য কিং হিসেবে পরিচিতি পান মাত্র ১৭ বছর বয়সে। সুইডেনে ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে টুর্নামেন্টের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে জেতেন ট্রফি। ফাইনালে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে ব্রাজিলের ৪-২ গোলের জয়ে দুটি গোল করে সতীর্থদের কাঁধে চড়ে বিশ্বজয়ের হাসি কখনও ভুলে যাওয়ার নয়। পরের বিশ্বকাপ শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে ইনজুরির কারণে মাত্র দুটি ম্যাচ খেলেন পেলে। কিন্তু মেক্সিকোতে ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ জয়ে তিনি ছিলেন নায়ক। ইতালির বিপক্ষে ৪-১ গোলে ফাইনাল জয়ে গোল করেন এবং করান কার্লোস আলবার্তোকে দিয়ে।
১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর মিনাস গেরাইসের ছোট শহর ট্রেস কোরাকোয়েসে জন্ম পেলের। ফুটবলের সরঞ্জাম কিনতে জুতা পালিশ করতেন। ১১ বছর বয়সে দৃষ্টি কাড়েন তিনি। একজন পেশাদার খেলোয়াড় তাকে সান্তোসের যুব দলে নিয়ে যান। সিনিয়র দলে ঢুকতে বেশি সময় লাগেনি। ১৯৫৬ সালে ১৬ বছর বয়সে ব্রাজিলিয়ান ক্লাবে অভিষেক এবং বিশ্বব্যাপী পরিচিত।সূত্র: বিবিসি, রাইজিং বিডি