আজ থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু ২০০ কোটি টাকার অধিক স্পর্ট অর্ডারের প্রত্যাশা : বাণিজ্যমন্ত্রীর
সোহেল রহমান : এবারের বাণিজ্য মেলা থেকে ২০০ কোটি টাকার বেশি স্পর্ট অর্ডার পাওয়া যেতে পারে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি।
নতুন বছরের প্রথম দিন তথা রোববার থেকে রাজধানীর উপকণ্ঠ পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টার (বিবিসিএফইসি)-এ শুরু হচ্ছে ২০২৩ সালের ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলার উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার মেলা প্রাঙ্গনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী এমন প্রত্যাশার কথা জানান। তিনি বলেন, বাণিজ্য মেলা আসলে আয়ের জন্য নয়। মূল বিষয় হলো পণ্য প্রদর্শন করে রপ্তানি বাণিজ্যকে আমরা কতোখানি কাজে লাগাতে পারি। স্পট অর্ডার যেটা গত বছর ২০০ কোটি টাকার অর্ডার পেয়েছিলাম, এ বছর সেটা আরও বেশি হবে বলে আমি আশা করছি। আমাদের উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক অঙ্গণে পরিচয় করিয়ে দেয়াই মেলার মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। আর সার্বিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বাড়ানো। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের পণ্যের মান উন্নত এবং মূল্য কম হবার কারণে প্রতি বছর আমাদের রপ্তানি বাড়ছে। গত বছরও রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি রপ্তানি হয়েছে। গত বছর আমাদের ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলারের রপ্তানির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আমরা ৬ হাজার কোটি ডলার রপ্তানি করতে পেরেছি। এ বছর রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তারপরও কোভিড পরবর্তী অবস্থা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও আমরা আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরী পোশাক এর পাশাপাশি আরও ১০টি পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আইসিটি আমাদের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় পণ্য, অল্পদিনের মধ্যে এ খাতের রপ্তানি ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি ডলার আশা করছি। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে বিশ্ব বাজারে। মেলা প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ বছর মেলার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে মেলার আকারও বাড়বে এবার। গত বছরের তুলনায় ১০০টির বেশি স্টল অংশ নিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মেলায় খাদ্যপণ্যের মান এবং মূল্যের বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। খাদ্য পণ্যের মূল্য নির্দিষ্ট থাকবে। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর মেলায় অভিজান পরিচালনা করবে। মেলায় যাতায়াতে যাতে কোন ধরনের নিরাপত্তার ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য পুলিশ প্রশান প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মেলায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য গতবারের মতো সার্টেল সার্ভিসের ব্যবস্থা থাকবে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে এক্সিবিশন সেন্টার পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ৭০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করবে, প্রয়োজনে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। বাসের ভাড়া ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। মেলা চলাকালীন বাসগুলো চলাচল করবে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে, তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। এবারে মেলায় প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্য ২০ টাকা। মেলার টিকেট অনলাইনে কিনলে ৫০% ডিসকাইন্টের সুযোগ থাকবে। মেলায় প্রায় ১ হাজার গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
জানা যায়, এবারের বাণিজ্য মেলায় দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্সস, পাট ও পাট জাত পণ্য, চামড়া/আর্টিফিশিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়া জাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর, ফার্নিচার ইত্যাদি পণ্য প্রদর্শীত হবে।
প্রসঙ্গত: দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন, উৎপাদনে সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এবার দ্বিতীয়বারের মতো স্থায়ী ভেন্যু রাজধানীর উপকণ্ঠ পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে সবগুলো মেলা হয়েছে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অস্থায়ী কেন্দ্রে। চীনের অর্থায়নে পূর্বাচলে স্থায়ী বাণিজ্যমেলা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এখন থেকে প্রতিবছর এখানেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আসর বসবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, এবার দেশি-বিদেশি মিলে মোট ৩৫১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন থাকবে। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২২৫টি। মেলায় বিদেশী প্রতিষ্ঠানের জণ্য ১৭টি প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টল রয়েছে। দেশি ও বিদেশী প্রতিষ্ঠানের জন্য দু’টি হলের বাইরে মিলে মোট ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনিপ্যাভিলিয়ন রয়েছে। মেলায় সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, ভারতসহ ১০টি বিদেশি রাষ্ট্রের ১৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। বাকিগুলো দেশীয়।
উল্লেখ্য, মেলায় বিদেশী প্রতিষ্ঠানের জণ্য ১৭টি প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টল রয়েছে। দেশি ও বিদেশী প্রতিষ্ঠানের জন্য দু’টি হলের বাইরে মিলে মোট ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনিপ্যাভিলিয়ন রয়েছে।