জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার দেবে কানাডা
এস.ইসলাম জয় : কানাডা জীববৈচিত্র্য এবং প্রতিবেশ সংরক্ষণে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক ঋণ সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। ২০২২ সালে ডিসেম্বরে কানাডার মন্ট্রিলে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জীববৈচিত্র্য সম্মেলনে জানানো হয়, গেøাবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি কর্তৃক ২০২৩ সালের মধ্যে গেøাবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্ক তহবিল (জিবিএফ ফান্ড) প্রতিষ্ঠা করা হবে। কানাডা প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এ ঘোষণা দেন। তিনি পরিমাণ সহায়তা বাড়ানো এবং বিশ্বের মোট জিডিপি-এর অন্তত ১ভাগ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ব্যয় করতে আহবান জানান।
এবারের সম্মেলনে ২০৫০ সালের মধ্যে লিভিং হারমোনি উইথ নেচার রূপকল্প এবং ২০৩০ সালের মধ্যে জীববৈচিত্র্য ও ইকোসিস্টেমের ক্ষতিসাধন রোধ ও রক্ষার অভিলক্ষ্য নিয়ে কুনমিং-মনট্রিল গেøাবাল বায়োডাইভার্সিটি ফ্রেমওয়ার্ক গৃহীত হয়। ওই ফ্রেমওয়ার্কে ৪টি অভীষ্টের আওতায় ২৩টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী ৩০ ভাগ স্থল এবং জলজ পরিবেশকে সংরক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা। এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সকল উৎস হতে প্রতি বছর কমপক্ষে ২০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার অর্থায়ন নিশ্চিত করা। উন্নত বিশ্ব হতে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত বিশ্বে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর কমপক্ষে ২০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর কমপক্ষে ৩০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন নিশ্চিত করা। ওই ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় দেশের ন্যাশনাল বায়োডাইভার্সিটি স্ট্রাটেজি এন্ড একশন প্ল্যান আপডেট করা হবে।
রোববার মন্ত্রণালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে সরকারিভাবে বাংলাদেশকে বিপজ্জনক জৈব রাসায়নিক কীটনাশক ডিডিটি মুক্ত ঘোষণা এবং সদ্য সমাপ্ত বিশ্ব জীববৈচিত্র্য সম্মেলনে অর্জন বিষয় সাংবাদিকদেও ব্রিফকালে এসব তথ্য জানান।
মন্ত্রী জানান, পরবিশে, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গেøাবাল এনভাইরনমেন্ট ফেসিলিটি এর অর্থায়ন এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কারিগরি সহায়তায় পেস্টিসাইড রিস্ক রিডাকশন ইন বাংলাদেশ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পটির মাধ্যমে কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রমের ফলে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সত্তে¡ও ১০ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে এ বিষাক্ত পদার্থ সম্পূর্ণভাবে ফ্রান্সে রপ্তানী করা সম্ভব হয়। এই রপ্তানীর ফলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষা সম্ভব হয়েছে। স্টকহোম কনভেনশন কর্তৃক নিষিদ্ধ পণ্য ডিডিটি রপ্তানীর সাথে বাংলাদেশের একটি আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূর্ণ হলো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১৯৮৫ সালে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ৫০০ টন ডিডিটি পেস্টিসাইড আমদানি করেছিল। নি¤œমান বিবেচনায় আমদানিকৃত অব্যবহৃত বিপজ্জনক জৈব রাসায়নিক পেস্টিসাইড ডিডিটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদস্থ মেডিকেল সাব-ডিপোতে মজুদ রাখা হয়। মন্ত্রণালয় কর্তৃক চট্টগ্রামের মেডিকেল সাব-ডিপো হতে সাফল্যজনকভাবে ৫০০ টন ডিডিটি অপসারণ এবং বিশ্ব জীববৈচিত্র সম্মেলনে অর্জন উপলক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, সাসটেইনেবল ওয়াইল্ডলাইফ ম্যানেজমেট, নেচার এন্ড কালচার, কোস্টাল এন্ড মেরিন বায়োডার্ভিসিটি, বায়োডার্ভিসিটি এন্ড এগ্রিকালচার, বায়োডাইভার্সিটি এন্ড ক্লাইমেট চেইঞ্জ, ইনভেসিভ এলিয়েন স্পেসিজ, সিন্থেটিক বায়োলজি ইত্যাদি শিরোনামে আরও কয়েকটি ডকুমেন্টস গৃহীত হয় ওই ডকুমেন্টস নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, সংস্থার সঙ্গে সভা করে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে। উন্নত বিশ্ব যাতে পর্যাপ্ত আর্থিক, কারিগরি এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা পেতে পারে, সে লক্ষ্যে এগিয়ে আসে সেজন্য বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের সাথে একাত্ম হয়ে সম্মেলনে আহবান করেছে। সে প্রেক্ষাপটে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য সম্মেলনে এ মর্মে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, গেøাবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি কর্তৃক ২০২৩ সালের মধ্যে গেøাবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্ক তহবিল প্রতিষ্ঠা করা হবে।
অনুষ্ঠানে উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব ডক্টর ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব মিজানুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডক্টর আব্দুল হামিদ ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।