জমে উঠেছে বাণিজ্যমেলা
মো. আখতারুজ্জামান : সোমবার হাড় কাঁপানো শীতের প্রতিক‚ল পরিবেশেও ক্রেতা দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর ছিল পূর্বাচলের বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণ। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার সব ধরনের দর্শনার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল।
সরকারি ছুটির দিনে ঠান্ডাকে দূরে ঠেলে হাজির হয়েছিলেন চাকরীজীবি, গৃহিণী, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীসহ নানাবয়সী ও পেশার হাজারো মানুষ। দলবেধে বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভিড় করা তরুণ তরুণীদের হই হুল্লোড়, দৌড়াদৌড়ি ও সেলফি তোলার দৃশ্যে শীত যেন পালিয়েছে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে।
শীত নিয়ে বিক্রেতাদের শঙ্কা কাটিয়ে প্রথম সপ্তাহে ক্রেতা দর্শনার্থীদের বিপুল আগ্রহ তাদের চমকে দিয়েছে। দুপুরের পর থেকে বিক্রয় কর্মীদের হাঁকডাক, ক্রেতাদের দরদাম এবং স্টল থেকে স্টলে পছন্দের পণ্যে খোঁজে ঘুরে বেড়ানো মেলাকে করে তুলেছে জমজমাট। দুপুরের দিকে দেখা যায়, মেলাপ্রাঙ্গণসহ পাশের এলাকা অনেকটাই কুয়াশায় ঢাকা। এতটা বেশি যে কিছুটা দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছে না। উত্তরী হিমেল হাওয়ায় কনকনে শীতের মধ্যেই সাধ্যমত গরম সোয়েটার, জ্যাকেট ও টুপিতে শরীর-মাথা মুড়িয়ে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকা থেকে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। কেউ এসেছেন প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে আবার অনেকেই এসেছেন পুরো পরিবার নিয়ে। বড়রা একা এসেছেন তা নয়, অনেকেই ছোট শিশুদেরও নিয়ে এসেছেন মেলায়। তিন বছরের সন্তান রিমন ও স্ত্রী রিনাকে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মেলায় এসেছেন জহির সিকদার। কিনেছেন শীতের কাপড়, জামা, বেডশিট আর বাচ্চার খেলনা। দুপুরের পর এসেছেন, বিকাল গড়িয়ে গেলেও চষে বেড়াচ্ছেন মেলা প্রাঙ্গণ; আরও নতুন কিছু কেনার খোঁজে রয়েছেন। জহির বলেন, পূর্বাচলে মেলা হওয়ায় এখন আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। যানজট ঠেলে আগারগাঁও যেতে হচ্ছে না। মেলার কেনাকাটায় ডাবল খুশির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমত ছবির মত সুন্দর এই এক্সিবিশন সেন্টারের প্রদর্শনীতে হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলায় সামিল হওয়া। আবার তুলনামুলক কম দামে পাওয়া যায় পছন্দের জিনিস।
গাড়ি রাখার জায়গায়, টয়লেট ও হালকা বিশ্রামের জায়গা রেখে স্থায়ী এ প্রদর্শনী কেন্দ্রের সাজানো ব্যবস্থাপনাও তার ভালো লেগেছে বলে জানান।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, শীতবস্ত্রের দিকেই ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশি। বেøজার, জ্যাকেট, কাশ্মিরি শালের মত গরম কাপড়ের দোকানগুলোতেই ক্রেতাদের ভিড় বেশি। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের প্ল্যাটফর্ম জয়িতার সুপরিসর প্যাভিলিয়নে নানা ধরনের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ২৬ উদ্যোক্তা। এদের মধ্যে অনেকেই এসেছেন বিভিন্ন জেলা থেকে। রাজশাহী থেকে আসা উদ্যোক্তা নাসিমা আক্তার জানান, অনেক বছর ধরেই তিনি মেলায় অংশ নিচ্ছেন। সাধারণত প্রথম সপ্তাহে তেমন একটা জমে না। কিন্তু এবার প্রথম থেকেই অনেকটা জমে উঠেছে। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ভারত থেকে আসা হাউজ অব কাশ্মিরের ইনচার্জ মোবাশ্বের বলেন, শীতের মৌসুমে বাংলাদেশের এ বাণিজ্য মেলায় অংশ নেওয়া আমাদের জন্য বিশেষ কিছু। কারণ শীতবস্ত্রই আমাদের প্রধান উৎপাদন। আর মেলাটি শীতকালে হওয়ায় আমাদের পণ্যের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। কয়েকদিন ধরে জেঁকে বসা শীতে বেশি বিক্রির কথা জানালেন তিনি।
আদনান ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী মিরাজ জানালেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তিনি বলেন, মেলায় সৌন্দর্য ও ভ্রমণ পিপাসু মানুষের আনাগোনা বেশি হলেও বিক্রি তেমন একটা বাড়েনি। মেয়ে বন্ধুকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসা আমির উদ্দিন বলেন, উনার আবদারে আসলাম। এবছরই প্রথম। সবকিছু মিলে ভালোই লাগছে। চার ঘণ্টা কীভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। সবচেয়ে মজা লাগছে প্রিয় মানুষকে খুব প্রিয় একটি জিনিস কিনে দিতে পেরেছি।