শেয়ারবাজারে নতুন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন
মাসুদ মিয়া: দেশের শেয়ারবাজার টানা তিন কার্যদিবস দরপতনের পর গতকাল সপ্তাহের তৃতীয় কর্মদিবস মঙ্গলবার সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক বেড়েছে ১৩ পয়েন্ট। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বেড়েছে ৪৫ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এর আগে গত বৃহস্পতিবার, রোববার ও সোমবার টানা তিন দিন শেয়ারবাজার দরপতন হয়েছিল। গতকাল ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪৬২ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার টাকা শেয়ার ও ইউনিটের। যা নতুন বছর ২০২৩ সালের মধ্যে শেয়ারবাজারে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে।
এদিকে সবকটি মূল্যসূচক বাড়লেও দুই বাজারেই দাম বাড়ার থেকে দাম কমার তালিকায় রয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। অবশ্য দুই বাজারেই দাম বাড়া বা কমার তুলনায় দাম অপরিবর্তিত থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি রয়েছে। এর আগে নতুন বছর ২০২৩ সালের প্রথমদিন রোববার সবকটি মূল্যসূচকের পতন হয়। সেই সঙ্গে ডিএসইতে দুইশ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়। বছরের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবারও সবকটি সূচকের পতন হয়। আর লেনদেন কমে দেড়শ কোটি টাকার নিচে নেমে আসে। এতে ২০২০ সালের ৭ জুলাইয়ের পর সর্বনি¤œ লেনদেনের ঘটনা ঘটে।
বছরের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার এসে শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক ও লেনদেন উভয় বাড়ে। তবে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ দুইশ কোটি টাকার নিচেই থাকে। পরের কার্যদিবস বুধবারও মূল্যসূচক ও লেনদেন বাড়ে। তবে লেনদেন তিনশ কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করতে পারেনি।
আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন তিনশ কোটি টাকার ঘরে গেলেও পতন হয় মূল্যসূচকের। ফলে বছরের প্রথম সপ্তাহ হতাশা দিয়েই পার করতে হয় শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীদের।
বছরের দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসও বিনিয়োগকারীরা হতাশ হন। মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি কমে লেনদেনের পরিমাণ। তবে দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে তিনশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে মূল্যসূচকে ছিল মিশ্র প্রবণতা।
এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার লেনদেন শুরুর দিকে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমলেও সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে। তবে লেনদেনের সারাক্ষণ দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় থাকে বেশি প্রতিষ্ঠান।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৬৬ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৬টির। আর ১৭৪টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। এরপরও ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২০৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৯৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৫৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৬২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৩৩৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১২৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ১৯ ডিসেম্বরের পর ডিএসইতে চারশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো।
লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- বিএসসি, ওরিয়ন ফার্মা, বসুন্ধরা পেপার, জেনেক্স ইনফোসিস, জেএমআই হসপিটাল, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সী পার্ল বীচ, অরিয়ন ইনফিউশন ও আমরা নেট।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- জেএমআই হসপিটাল, ইন্দো বাংলা ফার্মা, এসকে টিমস অ্যান্ড ইন্ডাঃ, নাভানা সিএনজি, ওরিয়ন ফার্মা, বিডিকম অনলাইন, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, বিএসসি, ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও মুন্নু এগ্রো।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- এডিএন টেলিকম্যূনিকেশন, সী পার্ল বীচ, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রূপালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, জুট স্পিনার্স, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, সাভার রিফ্রেক্টরীজ ও লিব্রা ইনফিউশনস।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই ৪৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৪৭ পয়েন্টে। এদিন বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৩০ লাখ ৯৩ হাজার টাকার শেয়ার। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৭ কোটি ২৮ লাখ ২৫ হাজার টাকার শেয়ার।
সিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৪৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ৩৮টির ও ৬৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।