ডিএসইর লেনদেন ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
মাসুদ মিয়া: দেশের শেয়ারবাজার আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় গতকাল সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস বূধবারও সূচকের ঊর্ধমুখী প্রবণতার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর লেনদেন ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আর লেনদেন খরা থেকে বেরিয়ে আসার আভাস দিচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার।
এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ধারাবাহিকতায় ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকার কারণে বিনিয়োগকারীরা অন্য কোন শেয়ারে মুভমেন্ট করতে পারছিল না। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কথা চিন্তা কওে বিএসইসি কিছু কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া এবং বøক মার্কেটে লেনদেনের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করার কারণে লেনদেন বাড়তে শুরু করেছে। আর শেয়ারবাজারে লেনদেনের উর্ধ্বমূখী প্রবণতায় আশার আলো দেখছেন দেখছেন মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়েছে ৫শ কোটির বেশি। যা শেয়ারবাজারের লেনদেনের গতি বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর শেয়ারবাজারে লেনদেনের গতি বৃদ্ধি ফেলে বাজার এখান থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। কারণ বিনিয়োগকারীরা এক শেয়ার থেকে অন্য শেয়ারে এন্ট্রি নিতে পারলেই বাজার স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। বিনিয়োগকারীরা যখন এক শেয়ার থেকে অন্য শেয়ারে মুভ করবে ঠিক তখন লেনদেনের গতি বাড়বে। আর লেনদেনের গতি বাড়লে বাজার ক্রমাগত ভালো হতে থাকবে। আর সাইড লাইনে বসে থাকা অনেক বিনিয়োগকারীই তখন আবারও বাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল ডিএসইতে সূচক বাড়লেও অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) কমেছে। তবে, বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। আর দুই বাজারেই দাম বাড়ার থেকে দাম কমার তালিকায় রয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান।
ডিএসইতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে কমেছে তার তিনগুণের বেশি। অবশ্য দুই বাজারেই দাম বাড়া বা কমার তুলনায় দাম অপরিবর্তিত থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি রয়েছে। এদিন লেনদেন শুরুর দিকে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। এতে লেনদেনের ১০ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে, লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বড় হতে থাকে দরপতনের তালিকা। লেনদেনের এক পর্যায়ে সূচক ঋণাত্মকও হয়ে পড়ে। অবশ্য শেষ ২০ মিনিটের লেনদেনের ওপর ভর করে সূচক সামান্য বেড়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়। কিন্তু বড়ই থাকে দরপতনের তালিকা। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৪০ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৭টির। আর ১৬৭টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে।
এরপরও ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২০৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৯৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৪৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৫৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫৩২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪৬২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৬৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে প্রায় এক মাস বা গত বছরের ১৩ ডিসেম্বরের পর ডিএসইতে পাঁচশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪১ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বসুন্ধরা পেপারের ৩২ কোটি ২৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২২ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেনেক্স ইনফোসিস।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- জেএমআই হসপিটাল অ্যান্ড রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, ওরিয়ন ফার্মা, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, ইস্টার্ন হাউজিং, নাভানা ফার্মা এবং ওরিয়ন ইনফিউশন। অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৮টির এবং ৬০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।