ইজতেমা মাঠ পূর্ণ, লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে জুমার নামাজ আদায়
এস.ইসলাম জয় : বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম দিন ছিল শুক্রবার। প্রথমদিনে মাঠে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জুমার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে জুমার এ জামাত শুরু হয়। নামাজের ইমামতি করেন বাংলাদেশের মাওলানা জোবায়ের।
ইজতেমায় যোগদানকারী মুসল্লি ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে রাজধানী ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার লাখ-লাখ মুসল্লি ইজতেমাস্থলে হাজির হন। ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে ইজতেমা মাঠের দিকে মানুষের ঢল নামে। দুপুর ১২টার দিকে ইজতেমা মাঠ কানায়-কানায় পূর্ণ হয়ে আশপাশের খোলা জায়গা অবস্থান নেয়। এতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়।-বাসস
এছাড়া টঙ্গীর বিভিন্ন বাড়ির ছাদ থেকে মুসল্লিরা জুমার নামাজে শরিক হন। বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠের দিকে ছুটে আসেন জুমার নামাজ আদায় করার জন্য। মাঠে স্থান না পেয়ে মুসল্লিরা মহাসড়ক ও অলি-গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন হোগলা পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে নামাজে শরিক হয়েছেন। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মূল ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে না পেরে সড়কে জুমার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। আজ শুক্রবার দুপুরে গাজীপুরের টঙ্গীতে মূল ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে না পেরে সড়কে জুমার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। তুরাগতীর ও আশপাশের সড়ক, অলিগলিতে তখনো মুসল্লিদের হাঁটাচলা। কেউ কেউ খুঁজছিলেন বসার জুতসই জায়গা। এর মধ্যেই মাইকে ঘোষণা এল জুমা নামাজের। মুসল্লিদের মধ্যে শুরু হলো ছোটাছুটি। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন নামাজের জায়গা খুজে নিতে।
এ সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের অংশগ্রহণে কানায় কানায় ভরে যায় পুরো ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকা। স্থবির হয়ে পড়ে ঢাকাময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল। ইজতেমার জামাতের সঙ্গে জুমার নামাজে অংশ নিতে মুসল্লিরা আসছেন দলে দলে আসছেন। নামাজে অংশ নিতে আসা মুসল্লিরা প্রথমে মূল ইজতেমা ময়দানে প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু ভেতরে জায়গা না পেয়ে তাঁরা রাস্তায় অবস্থান করেন। পরে নামাজ শুরুর আগমুহূর্তে তাঁরা ছোটাছুটি করেন। একপর্যায়ে নামাজ আদায় করতে তাঁরা সড়কের ওপরই কাগজ, জায়নামাজ, চট, পাটি ইত্যাদি বিছিয়ে বসে পড়েন। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আমবয়ানে শুরু বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব, জুমার নামাজে যোগ দিতে দলে দলে আসছেন মুসল্লিরা।
মো. হাসান ইব্রহিম বলেন, ইজতেমার জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার অন্য রকম আনন্দ। তা ছাড়া এবার ৩ বছর পর ইজতেমা হচ্ছে। তাই ভালো লাগাটাও অনেক বেশি। মাঠের ঢুকতে পারেনি, তবু মনে আনন্দ কম না। ইজতেমা মাঠে জায়গা খালি নেই। তাই নিরুপায় হয়ে অনেকেই সড়কের পাশে অবস্থান নিয়েছেন। এর আগে আজ ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ইজতেমা। আগামী রোববার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে প্রথম পর্বের ইজতেমা। এবার প্রথম পর্বের ইজতেমায় অংশ নেন মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। শুক্রবার ফজরের পর মাঠে আম-বয়ান করেন রায়বেন্ডের মাওলানা জিয়াউল হক। সকাল ১০টায় স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উদ্দেশে বিশেষ বয়ান করেন আলীগড়ের প্রফেসর সানাউল্লাহ। একই সময় স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বয়ান করেন পাকিস্তানের ড. নওশাদ। মাঠে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উদ্দেশে বয়ান করেন ভারতের হায়দরাবাদের মাওলানা আকবর শরীফ। আরব জামাতের উদ্দেশে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইবরাহীম দেওলা।
জুমার আগের বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোদরা, জুমার খুতবা পড়েন বাংলাদেশের মাওলানা জোবায়ের। তিনিই জুমার নামাজের ইমামতি করেন। জুমার পর মাঠের মূলমঞ্চ থেকে বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোদরা। বাদ আসর বয়ান করবেন- মাওলানা যোবায়ের ও বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা আহমদ লাট বয়ান করবেন। বয়ান অনুবাদ করবেন বাংলাদেশের মাওলানা উমর ফারুক।
উল্লেখ্য, মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের অংশগ্রহণে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরু হবে ২০ জানুয়ারি থেকে। শেষ হবে ২২ জানুয়ারি।