আখ চাষ ও রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিশিল্পে সংকট কেন(৩)
মোশাহিদা সুলতানা
ও কল্লোল মোস্তফা
চিনি আমদানি উদারীকরণ
দেশের চাহিদার সাথে স্থানীয় জোগানের পার্থক্য থাকলে আমদানি ছাড়া দেশের চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। চিনির স্থানীয় চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশকে সব সময়ই আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। তবে এই আমদানি কখন কার দ্বারা কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে তা প্রভাবিত করেছে বর্তমান চিনিকলগুলোর সাফল্যের সম্ভাবনাকে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং বাংলাদেশ পুষ্টি কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী মাথাপিছু বার্ষিক চিনির চাহিদা ৮.৫ কেজি। সেই হিসাবে বর্তমানে দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন বলে মনে করা হয় (বিএসএফআইসি, ২০১৪ক)। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চিনি উৎপাদন হয়েছে ৭৭ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন। এবং ওই একই বছর চিনিকলগুলোতে চিনির প্রারম্ভিক মোট মজুদ ছিল ১.৮ লাখ মেট্রিক টন (বিএসএফআইসি, ২০১৫খ)। অর্থাৎ স্থানীয় ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে মিলগুলো থেকে উৎপাদিত চিনির পরিমাণ ছিল প্রায় ২.৬ লাখ মেট্রিক টন। সাধারণভাবে হিসাব করলে দেশের চাহিদা মেটাতে আমদানি করার প্রয়োজন ছিল প্রায় ১১.৪ লাখ মেট্রিক টন। অথচ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে র-সুগার আমদানির পরিমাণ ছিল ১৯.৫ লাখ মেট্রিক টন (বিএসএফআইসি, ২০১৫ক)। অর্থাৎ ১৫টি মিল দেশীয় চাহিদা পূরণ করার পর যা অতিরিক্ত প্রয়োজন তার ৭০ শতাংশ (৮.১ লাখ মেট্রিক টন) বেশি র-সুগার আমদানি করা হয়। যখন এই অতিরিক্ত চিনি আমদানি হয়, তখন আমরা দেখি মিলের চিনি অবিক্রীত পড়ে আছে, কিছু কিছু মিলে শ্রমিকের বেতন সময়মতো পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এবং কৃষকরা আখ চাষে নিরুৎসাহ হচ্ছে। এই সংকটের পেছনে রয়েছে সরকারের আমদানি উদারীকরণ নীতি।
২০০২ সালে বেসরকারি উদ্যোগে চিনি আমদানি অনুমোদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় চিনিশিল্প উদারীকরণ। ২০০৪ সাল থেকে রিফাইনারিগুলো উৎপাদনে আসার আগে নিবন্ধনপত্রে শর্ত রয়েছে উৎপাদিত পণ্যের ৫০ শতাংশ রপ্তানি করা হবে (বিএসএফআইসি, ২০১৪ক)। কিন্তু এই শর্ত প্রতিপালিত হচ্ছে না। উপরন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত র সুগার আমদানি করার সময় মূলত দুটি যুক্তি দেওয়া হয়Ñ১. বেসরকারি রিফাইনারিগুলো বাড়তি র সুগার আমদানি করে দেশে রিফাইন করে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে। ২. বেসরকারি রিফাইনারিগুলো এই বাড়তি মজুদ করা চিনি প্রয়োজনের সময় বাজারে ছেড়ে চিনির মূল্য নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে। কিন্তু দেখা গেছে, এই প্রাইভেট রিফাইনারিগুলো বিদেশে তো রপ্তানি করছেই না, বরং স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেশের ১৫টি চিনিকলে উৎপাদিত চিনির বাজারের কাছে হুমকিস্বরূপ আবির্ভূত হচ্ছে। এবং দেশি চিনিকলগুলোর অবিক্রীত চিনির মজুদ ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে।
২০০৩-০৪ অর্থবছরে সাদা ও র সুগার নির্বিশেষে আমদানি পর্যায়ে সিএফআর (কস্ট অ্যান্ড ফ্রেইট বা পরিবহন খরচসহ আমদানিমূল্য) মূল্যের ওপর রেগুলেটরি ডিউটি (সংরক্ষণমূলক আমদানি শুল্ক) আরোপিত ছিল। পরে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে পৃথকভাবে সাদা চিনি ও র সুগার আমদানি পর্যায়ে স্পেসিফিক ডিউটি আরোপের মাধ্যমে শুল্ক সুবিধা দেওয়া হয়। ২০১৪-১৫ সাল পর্যন্ত এই শুল্কহার সাদা চিনিতে টনপ্রতি ৪৫০০ টাকা এবং র-সুগারে ২০০০ টাকা নির্ধারিত ছিল। ২০১৫ সালের আগস্ট থেকে স্পেসিফিক ডিউটি বা নির্ধারিত শুল্কের পাশাপাশি পুনরায় রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করা হয়। সাদা চিনির জন্য প্রতি টন টারিফ মূল্য ৪০০ ডলার ও ২০ শতাংশ ডিউটি (শুল্ক) এবং র সুগারের জন্য প্রতি টন ৩২০ ডলার ও ২০ শতাংশ ডিউটি (শুল্ক) প্রযোজ্য হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমদানীকৃত চিনির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব দেয়, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই আমদানিকারকরা চিনির দাম স্থানীয় বাজারে বাড়িয়ে দেয়। কেজি প্রতি চিনির মূল্য ৩৯-৪২ টাকা থেকে একলাফে ৪৪-৪৬ টাকা হয়ে যায় (বণিক বার্তা, ২০১৫)। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, প্রাইভেট রিফাইনারিগুলো আগের মজুদ করা পূর্বের দামে কেনা চিনি বর্ধিত ডিউটি (শুল্ক) ও ভ্যাটের অজুহাত দেখিয়ে বেশি দামে বাজারে ছেড়েছে। এই উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, ২০০২ সাল থেকে যখন চিনি আমদানি অবাধ করে দেওয়া হয়, তখন থেকে শুরু করে সরকার চিনির মূল্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং ২০১৫-এর শেষের দিকে এসে যখন পুনরায় ডিউটি (শুল্ক) আরোপ করে আমদানি সীমিত করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার, ততদিনে বেসরকারি আমদানিকারকরা বাজারের ওপর এত বেশি নিয়ন্ত্রণ অর্জন করে ফেলেছে যে এখন সরকার চাইলেও বেসরকারি রিফাইনারিগুলোর আমদানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। অর্থাৎ নি¤œ শুল্কে আমদানি সহজ হওয়ার পর থেকে অতিরিক্ত আমদানি বেসরকারি রিফাইনারিগুলোকে নির্বিচারে ক্ষমতায়ন করেছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের ২৩ তারিখে চিনির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয় এবং ভবিষ্যতে এর ফলে চিনির দাম বাড়বে। দেখা যাচ্ছে, সরকার আমদানিকারকদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে দায় চাপিয়ে দিচ্ছে ভোক্তার ওপর দেশের বেসরকারি চিনি রিফাইনারিগুলো মূলত বড় বড় কনগোমারেটের মালিকানাধীন। বিতরণ ও বিপণনে তারা অনেক আগে থেকেই দক্ষভাবে খাদ্যদ্রব্য বাজারজাত করার সক্ষমতা অর্জন করে এসেছে। অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের বিতরণে অভিজ্ঞ এইসব বেসরকারি উদ্যোক্তা অল্প পরিশ্রমে ও সাশ্রয়ে এই বিপণন ও বিতরণ করায় প্রতিযোগিতার বাজারে তারা এখন আগ্রাসী ভূমিকা পালন করে আসছে। আর এ কারণে বাজার উদারীকরণের আগে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থা বাজারে যেমন মূল্য নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা রাখতে পেরেছিল, এখন তা পারছে না। অর্থাৎ প্রতিযোগিতা সৃষ্টির নামে অসম প্রতিযোগিতার একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বেসরকারি ব্যবসায়ীদের বাজারের ওপর দখল বৃদ্ধি করে। ১.১ নম্বর চিত্রে দেখানো হয়েছে প্রতিবছর বিক্রয়যোগ্য চিনির মজুদ আমদানি উদারীকরণের পর থেকে কিভাবে বেড়ে চলেছে। এবং অন্যদিকে শুল্ক সুবিধা ব্যবহার করে বেসরকারি রিফাইনারি কোম্পানিগুলো প্রয়োজনের তুলনায় ক্ষেত্রবিশেষে এমনকি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত আমদানি করেছে।
উদারীকরণ ও আখের বাজারে নিয়ন্ত্রণহীনতা
উদারীকরণের ফলে আরো যে বিষয়টি দৃশ্যমান হচ্ছে তা হলো দিন দিন আখ চাষে ব্যবহৃত জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। আখ চাষ কমে যাওয়ার পেছনে আরো অন্যান্য কারণের ওপর পরবর্তী অংশে আলোকপাত করা হয়েছে। তবে এই চাষ কমে যাওয়ার সাথে বাণিজ্য উদারীকরণেরও একটি সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিবছর লোকসানের শিকার হয়ে রাষ্ট্রীয় মিলগুলো কৃষকদের আখ চাষে উৎসাহিত করতে পারছে না। ২০০৩-০৪ অর্থবছরের আগে আখ চাষকৃত জমির পরিমাণ কিছুটা হলেও স্থির ছিল। কিন্তু ২০০৩-০৪-এর পর থেকে জমির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। এবং লক্ষ করলে দেখা যাবে, আখ চাষের আওতাধীন মিলের জমি ২০০৩-০৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৫-১৬-তে এসে প্রায় ৩৫% হ্রাস পেয়েছে (বিএসএফআইসি,২০১৫ক)। বেসরকারি খাতে চিনি আমদানির ওপর নির্ভরতা যত বাড়তে থাকবে, দেশীয় চিনি বিদেশি চিনির সাথে প্রতিযোগিতায় বাজার হারাবে। দেশীয় মিলগুলোর পক্ষে কৃষকদের আখ চাষে উৎসাহিত করা তত বেশি কঠিন হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যেই চিনিশিল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল আখের উৎপাদন ও বাজার উভয়ই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে শুরু করেছে। চিনিশিল্পের জন্য এই পরিবর্তন আশু সমস্যা সমাধানে একটি বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
চিনিশিল্পের উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাগত সংকটের কারণ অনুসন্ধান
রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলোর সংকটের একটা বড় কারণ হলো চিনির উৎপাদন খরচ আমদানি করা চিনির বাজারদরের তুলনায় অনেক বেশি। শুধু আমদানি করার সুগার বা অপরিশোধিত চিনিই নয়, পার্শ্ববর্তী ভারতে যেখানে বাংলাদেশের চিনিকলগুলোর মতোই সরাসরি আখ থেকে ‘প্লান্টেশন হোয়াইট সুগার’ বা সাদা চিনি উৎপাদন করা হয়, সেখানেও চিনির উৎপাদন খরচ আমাদের চিনিকলগুলোর তুলনায় অনেক কম, কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৩২ রুপি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বৃহৎ চিনিকল থেকে উৎপন্ন র-সুগারের দাম সাধারণভাবেই প্লান্টেশন হোয়াইট সুগারের চেয়ে কম পড়ে বলে ভারতেও আখ থেকে চিনি উৎপাদনকারী অনেক চিনিকল বাজারের প্রতিযোগিতায় সংকটে পড়ে; কিন্তু ভারতীয় চিনিকলগুলোর চিনির উৎপাদন খরচ বাংলাদেশের মতো এত বেশি নয় বলে সেই সংকটও বাংলাদেশের চিনিকলগুলোর মতো মারাত্মক নয়। ভারতীয় চিনিকলের উৎপাদন খরচের সাথে বাংলাদেশের চিনিকলগুলোর উৎপাদন খরচের এই বিপুল পার্থক্যের কারণ হলো, একদিকে আমাদের চিনিকলগুলো মাড়াই করার মতো পর্যাপ্ত আখ পায় না, যে কারণে বছরের একটা বড় সময়জুড়ে চিনিকলগুলো বন্ধ থাকে, যদিও বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন স্থির খরচ সারা বছরই বহন করতে হয় চিনিকলগুলোকে। অন্যদিকে মাড়াই করার জন্য যে আখ পাওয়া যায় তা থেকে চিনি আহরণের পরিমাণ ভারতের চেয়ে অনেক কম, যে কারণে ভারতে প্রতি টন আখ থেকে যে পরিমাণ চিনি আহরণ করা হয় তার মাত্র অর্ধেক আহরণ করা হয় বাংলাদেশের চিনিকলগুলো থেকে।
বাংলাদেশের চিনিকলগুলোতে সরাসরি আখ থেকে খাওয়ার উপযোগী সাদা চিনি বা প্লান্টেশন হোয়াইট সুগার উৎপাদন করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় আখ থেকে চিনি উৎপাদনের জন্য আখ কেটে রোলার মিলের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে রস আহরণ করা হয়। এরপর রস নানাভাবে ছাঁকন ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ করে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে ঘন সিরাপে পরিণত করা হয়। ঘন সিরাপকে এরপর ‘ভ্যাকুয়াম প্যান’-এ পাঠানো হয়, যেখানে ‘ভ্যাকুয়াম প্যান বয়েলিং’-এর মাধ্যমে চিনির সিরাপে ক্রিস্টাল বা স্ফটিকের আবির্ভাব ঘটে। এই ক্রিস্টালসমৃদ্ধ ঘন দ্রবণ থেকে ক্রিস্টালাইজার ও সেন্ট্রিফিউগাল মেশিনের মাধ্যমে গুঁড়ো চিনি আহরণ করা হয়, সেই সাথে উপজাত হিসেবে পাওয়া যায় ঝোলাগুড় বা মোলাসেস। চিনির রস আহরণের পর থেকে যাওয়া ছোবড়া বা বাগাসে (নধমধংংব) বয়লারের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় (শর্মা ও কুমার, ২০১৫)।
২০১১-১২ সালে চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের ১৫টি চিনিকলে মোট ১৫.৬৩ লাখ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে গড়ে ৬.৮৫ শতাংশ হারে চিনি আহরণের মাধ্যমে মোট ১.০৭ লাখ টন চিনি উৎপাদিত হয়। এই চিনি উৎপাদনে কাঁচামাল ও মৌসুমি শ্রমশক্তিসহ মোট অস্থায়ী খরচ হয় ৪৯৭.৩২ কোটি টাকা এবং স্থায়ী শ্রমিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা, কারখানার যন্ত্রপাতির অবচয়, ঋণের সুদ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, বিমা, প্রাশাসনিক খরচসহ মোট অপরিবর্তনশীল খরচ হয় ৪৪১.৭৭ কোটি টাকা। এভাবে ১.০৭ লাখ টন চিনি উৎপাদনের মোট খরচ হয় ৯৩৯.০৯ টাকা। ঝোলাগুড়সহ বিভিন্ন উপজাত বিক্রি করে আয় হয় ৪৭.৪৫ কোটি টাকা। বিভিন্ন উপজাত বিক্রি বাবদ আয় বাদ দিয়ে চিনি উৎপাদন বাবদ প্রকৃত খরচ দাঁড়ায় ৮৯১.৬৪ কোটি টাকা, অর্থাৎ প্রতি কেজি চিনি উৎপাদনে খরচ ৮৩.২৪ টাকা। এখন চিনি আহরণের হার একই রেখে যদি একই সময়ে ২০০৬-০৭ মৌসুমের মতো ২৩.৩৫ লাখ টন আখ মাড়াই করা সম্ভব হতো, তাহলে অপরিবর্তনশীল খরচ আগের মতোই থাকত এবং পরিবর্তনশীল খরচ হতো ৭৪২.৮৯ কোটি টাকা। কিন্তু আখ মাড়াই বেশি হওয়ার কারণে চিনি উৎপাদন হতো ১.৬০ লাখ টন ও বিভিন্ন উপজাত বিক্রি বাবদ আয় হতো ৭০.৮৫ কোটি টাকা। ফলে ১.৬ লাখ টন চিনি উৎপাদনের জন্য প্রকৃত খরচ হতো ১ হাজার ১৮৪.৬৬ কোটি টাকা, অর্থাৎ প্রতি কেজি চিনি উৎপাদনে খরচ পড়ত ৭০.৮৫ টাকা। আবার একই সাথে চিনি আহরণের হার যদি ১ শতাংশ বেশি হতো, অর্থাৎ ৭.৮৫% হতো, তাহলে ৭৪২.৮৯ কোটি টাকা খরচ করে ১.৬ লাখ টনের বদলে ১.৮৩ লাখ টন চিনি উৎপাদিত হতো। ফলে প্রতি কেজি চিনি উৎপাদনের খরচ ৬০.৭৬ টাকায় নেমে আসত। এভাবে দেখা যায়, চিনি আহরণের পরিমাণ যত বাড়ে, কেজি প্রতি চিনির দাম তত কম পড়ে। ২৩.৩৫ লাখ টন আখ মাড়াই করে যদি ভারতের মহারাষ্ট্রের চিনিকলগুলোর কাছাকাছি হারে চিনি আহরণ করা যেত তাহলে কেজি প্রতি চিনির খরচ বাজারদরের প্রায় কাছাকাছি চলে আসত। যেমনÑচিনি আহরণের হার ১০.৮৫ শতাংশ করা সম্ভব হলে কেজি প্রতি চিনির দাম পড়ত ৪৩.৯৬ টাকা। (আনু মুহাম্মদ সম্পাদিত সর্বজন কথা থেকে নেয়া)