পাঁচ দশকে দেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ছয় গুণ
মতিনুজ্জামান মিটু: দেশের মোট জিডিপি’র ৩. ৫৭, কৃষিজ জিডিপির ২৬.৫০ এবং রপ্তানি আয়ের ১.২৪ শতাংশ মৎস্য উপখাতের অবদান। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার ২০২১ সালের হিসেবে এখাতে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ৫.৭৪শতাংশ। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় মৎস্যখাতের অবদান প্রসঙ্গে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক জানান, এসময় দেশে মাথাপিছু মাছ গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে দিনে ৬২.৫৮ গ্রামে উন্নীত হয়েছে। যা আগে ছিল ৬০গ্রাম। সরকারের মৎস্যবান্ধব কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং চাষি ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক লাগসই কারিগরি পরিসেবা দেওয়ায় ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে মাছ উৎপাদন হয় ৪৬.২১ লাখ টন। যা ২০১০-১১ অর্থবছরের মোট উৎপাদনের (৩০.৬২ লাখ টন) চেয়ে ৫০.৯১ শতাংশ বেশি। ১৯৮৩-৮৪ অর্থ বছরে উৎপাদন হয়েছিল মাত্র ৭.৫৪ লাখ টন মাছ।
মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য বর্তমানে বিশ্ব পরিমন্ডলেও স্বীকৃত। সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর ২০১৬-১৭ অর্থবছর হতে বাংলাদেশ চাহিদার বিপরিতে মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০২২ সালের প্রতিবেদনের বরাতে তিনি জানান, অভ্যন্তরিন মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ ৩য় স্থান ধরে রেখে বিগত ১০ বছরের অভ্যন্তরীন জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর হারে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে। এছাড়া বদ্ধ জলাশয়ে চাষের মাছ উৎপাদনে ৫ম স্থান গত ছয় বছরের মতোই ধরে রেখেছে। পাশাপাশি বিশেষ সামুদ্রিক ও উপকুলীয় ক্রাস্টাশিয়ান্স ও ফিনফিস উৎপাদনে ৮ম ও ১২তম স্থান অধিকার করেছে। বিশ্বে ইলিশ আহরণকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম, তেলাপিয়া উৎপাদনে বিশ্বে ৪র্থ এবং এশিয়ার মধ্যে ৩য় স্থানে রয়েছে। দেশের প্রায় ১৪ লাখ নারীসহ ১৯৫ লাখ বা শতকরা ১২ ভাগেরও বেশি লোক এসেক্টরের বিভিন্ন কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়োজিত থেকে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। দেশে রুই জাতীয় মাছের উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, কৈ, পাবদা, গুলশা ও শিং-মাগুর মাছ উৎপাদনের ক্সেত্রে নিরব বিপ্লব হয়েছে।
ইলিশ আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল। ইলিশ দেশের জাতীয় মাছ এবং নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ। এদেশের মোট উৎপাদিত মাছের ১২.২২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে। দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান এক শতাংশের বেশি এবং একক প্রজাতি হিসেবে এমাছের অবদান সর্বোচ্চ। ‘বাংলাদেশ ইলিশ’ শীর্ষক ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য নিবন্ধন সনদ (জিআই সনদ) পাওয়ায় নিজস্ব পরিচয় নিয়ে বিশ্ব বাজারে ইলিশ সমাদৃত। বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীংেেশর বেশি ইলিশ আহরণকারী বাংলাদেশ বিশ্বে ইলিশের দেশ হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫.৬৫ লাখ টন ইলিশ উৎপাদন হয়। যা ২০১০-১১ অর্থবছরের ইলিশের মোট উৎপাদনের( ৩.৪০ লাখ টন) চেয়ে ৬৬.১৭ শতাংশ বেশি।