সোহেল রহমান : আয়কর কর্মকর্তার ‘ডিসক্রিশনারি পাওয়ার’ কমিয়ে বাংলায় হচ্ছে নতুন আয়কর আইন। ফলে কর কর্মকর্তারা আগামীতে নিজেদের ইচ্ছামাফিক আয়কর নির্ধারণ করতে পারবেন না। আইনে নির্ধারণ করে দেয়া ফর্মুলা অনুযায়ী আয়কর নির্ধারণ হবে। এ লক্ষ্যে ‘আয়কর আইন, ২০২৩’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমান যে ইনকাম ট্যাক্স আইন, এর মূল আইনটি ছিল ইংরেজিতে, ১৯২২ সালের। পরবর্তীকালে ১৯৮৪ সালে একটা অধ্যাদেশ করা হয়, সেটা দিয়েই এখন চলছে। এটাকেই বাংলা ও সহজবোধ্য করা হয়েছে। ভাষা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে। বিশেষ করে যেখানে জটিলতা বেশি ও অস্পষ্টতা ছিল, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার একটা সিদ্ধান্ত ছিল সামরিক শাসনের সব আইন এবং ইংরেজিতে যে আইনগুলো আছে, সেগুলো পরিবর্তন করে যুগোপযোগী করে প্রণয়ন করা। সে কারণে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক আইনটির একটি খসড়াটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
সূত্রমতে, নতুন আইনে আয়কর কর্মকর্তাদের যে অবাধ ‘ডিসক্রিশনারি পাওয়ার’ ছিল, তা সীমিত করা হয়েছে। একজন করদাতার ওপর কত ট্র্যাক্স ধার্য হবে, আগে আয়কর কর্মকর্তারা কিছুটা ডিসাইড করতেন। আয়কর কর্মকর্তার কাছে যেটা যৌক্তিক বলে মনে হতো, সেটা উনি করতে পারতেন। না মানলে করদাতারা তখন আপিলে চলে যেতেন। এতে আপিলের সংখ্যা বেড়ে যেতো। এখন যেটা করা হয়েছে ওই কর্মকর্তার সাবজেক্টিভ জাজমেন্টের ওপর নয় বরং একটা ফর্মুলা করা হয়েছে। সেখানে অবজেক্টিভ ইনফরমেশনগুলো দেয়া হলে ফর্মুলাই সব ক্যালকুলেট করে দেবে। এতে হয়রানির সুযোগ কমে যাবে। ডিসক্রিশনারি পাওয়ার বিষয়ে অন্তত ২০টি ক্ষেত্রে, আগে অফিসারের নিজের ক্ষমতা বলে যেটা যৌক্তিক মনে করতেন সেটা করতেন। এখন সেখানে গাণিতিক ফর্মুলা দেয়া হয়েছে। ওই ফর্মুলায় যে রেজাল্ট আসবে, সেটাই হবে তার জন্য নির্ধারিত ট্যাক্স। অফিসার নিজে ইচ্ছা করলেই বাড়াতে বা কমাতে পারবেন না। পাশাপাশি পুরো কাজ যেন আন্তর্জাতিক মানদÐের সঙ্গে তুলনা করা যায়, সেদিকে নজর দেয়া হয়েছে। কর ভিত্তি যাতে স¤প্রসারণ হয়, সেই সুযোগ রাখা হয়েছে। এছাড়া আয়কর রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে যেসব কাগজপত্র দরকার হবে, বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে সেগুলো সহজতর করা হয়েছে।
সূত্রমতে, নতুন আইনে ইনকাম ট্যাক্স পদ্ধতি হবে আইসিটিনির্ভর এবং এটাকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি খুব বড় একটা আইন। সম্ভবত ৩৪৮টি ধারা রয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে অন-লাইনে আয়কর দেয়া আরও সহজ হবে। অন-লাইনে এখন যেভাবে তথ্য দেয়া হয়, যেভাবে প্রশ্নগুলো আসে, সেগুলো অনেক সহজ করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে কেবলমাত্র উৎসে কর কর্তন সংক্রান্ত ২৯টি রিটার্ন ও বিবরণী দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেটি প্রস্তাবিত আইনে ১২টি করা হয়েছে।