
জনপ্রিয়তা পাচ্ছে সাকুলেন্টের বাণিজ্যিক চাষ

মতিনুজ্জামান মিটু : সাকুলেন্ট হচ্ছে এমনই এক ধরণের উদ্ভিদ যারা নিজেদের দেহে পানি সংরক্ষণ করতে পারে যা কিনা এরা শুষ্ক সময়ে ব্যবহার করতে পারে। বিশ্বের সেরা সাকুলেন্ট প্ল্যান্ট পাওয়া যায় দক্ষিণ আফ্রিকায়। এগুলো মোটামুটি গাছ ও গুল্মজাতীয় হয়ে থাকে। শোভাবর্ধক সাকুলেন্টের উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিটের (বিনা) কৃষি প্রকৌশল বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পার্থ বিশ^াস ও নারী উদ্যোক্তা তিথি মন্ডল জানান, বর্তমানে বাংলাদেশি সৌখিন বাগানীদের কাছে সাকুলেন্ট একটি বহুল প্রচলিত নাম। ছোট থেকে বৃদ্ধ যেকোন বয়সের বাগানী সাকুলেন্টের চিত্তাকর্ষকরূপে মুগ্ধ।
শুধু রূপে নয়, সাকুলেন্ট ঘরের বায়ুকে বিশুদ্ধ রাখে। রাতে অক্সিজেন নির্গত করে ঘুমে ও স্মরণশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। সার্বিকভাবে মনকে প্রফুল্ল রাখাসহ নানা উপকার করে থাকে এউদ্ভিদ। সাকুলেন্ট মূলত শীত প্রধান দেশের গাছ। শীত প্রধান দেশে খোলা পরিবেশে বা শেডের মধ্যে এরা খুব ভালোভাবে জন্মে এবং বেড়ে ওঠে। এদেশের মিশ্র আবহাওয়া বা পরিবেশ সাকুলেন্ট উৎপাদনে কিছুটা প্রতিকূল। তবে সঠিক পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনায় এদেশেও ভালোভাবে সাকুলেন্টের উৎপাদনের পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে সাকুলেন্টের মাধ্যমে উপার্জন করাও সম্ভব। আমদানি নির্ভর হলেও ইতোমধ্যে সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শোভাবর্ধক এউপকারি গাছের উৎপাদন হচ্ছে এবং অনেকে বাণিজ্যিকভাবেও আবাদ করছেন। সীমিত হলেও কেউ কেউ এদেশে সাকুলেন্ট উৎপাদন এবং রপ্তানিও শুরু করেছেন।
বর্তমানে ৪র্থ শিল্প বিল্পবের যুগে বিভিন্ন শ্রেণির পেশা বা উপার্জনের উৎস সৃষ্টি হচ্ছে। সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যবস্থাকে টেকসই এবং সর্বোচ্চ করাই বর্তমান সময়ের অন্যতম লক্ষ্য যা এসডিজি ও বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ এ উল্লেখ আছে। যারা ভাড়া বাড়িতে থাকেন তারা অনেকেই ইচ্ছা করলেই ছাদে গাছ রাখতে পারেননা। সেক্ষেত্রে বাসার জানালা বা বারান্দায় লোহা বা প্লাস্টিকের র্যাকে (উলম্বভাবে) সাকুলেন্ট এর উৎপাদন করা যেতে পারে।
এদেশে সাইজ ও ভ্যারাইটি অনুযায়ী প্রতিটি সাকুলেন্টের মূল্য ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বা এর বেশিও হতে পারে। শখের বাগানীরা এর থেকে অতিরিক্ত চারা উৎপাদন করে অনলাইনে বা সরাসরি বিক্রি করে নিজের শখের গাছগুলো কেনার পাশাপাশি বাড়তি অর্থ উপার্জন করতে পারেন। বাংলাদেশও এক সময় সাকুলেন্ট চাষে সমৃদ্ধ হবে। তখন তাদের আর শীত প্রধান দেশের সাকুলেন্ট নয়, দেশি সাকুলেন্ট বলা যাবে।
শীত প্রধান দেশের গাছ হওয়ায় এরা তুলনামূলক ঠান্ডা ও খোলামেলা পরিবেশ পছন্দ করে। অতিরিক্ত রোদ, গরম, পানি বা সার কোনটাই এদের পছন্দ নয়। অতিরিক্ত রোদে এদের পাতায় সানবার্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বা সাকুলেন্টের গোড়া পচে যায়। তাই গরমকালে ২ থেকে ২.৫ ঘণ্টা এবং শীতকালে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সকালের বা বিকালের রোদ এদের জন্য যথেষ্ট। সাকুলেন্ট এমন একটি প্রজাতির গাছ যারা কান্ড ও পাতায় প্রচুর পানি সঞ্চয় করে রাখতে পারে। আর এজন্যই প্রয়োজনের বেশি পানি এদের পছন্দ নয়। পানির অভাবে সাকুলেন্ট মারা গিয়েছে এমন ঘটনা খুব কম শোনা যায় কিন্তু বেশি পানি দেওয়ায় সাকুলেন্ট মারা যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। কাজেই এ গাছে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে একটু বেশি সচেতন হতে হবে। সপ্তাহে ১ দিন বা কিছু ক্ষেত্রে ২ দিন পানি দেওয়া যেতে পারে।
সাকুলেন্টের চারা মূলত পাতা থেকে করা হয় এবং পাশাপাশি কাটিং এর মাধ্যমেও করা যায়। এদেশের আবহাওয়ায় সাকুলেন্টের চারা সাধারণত অক্টোবরের শেষে বা নভেম্বরের শুরুতে করতে হয়। গাছ থেকে সাবধানে পাতা তুলতে হবে যেন পাতার গোড়ায় ক্ষত না হয়।
