
বেজার সঙ্গে ৩টি প্রতিষ্ঠানের জমি বরাদ্দের চুক্তি
মো. আখতারুজ্জামান : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং ৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর ও জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে মোট ২৩ একর জমি বরাদ্দে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বুধবার বেজা কার্যালয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতিষ্ঠানসমূহ হল- সোয়ান ইন্টারন্যাশনাল (প্রা.) লিমিটেড, পিনাকল সাইকেল গেজ ও বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। অনুষ্ঠানে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বেজার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সোয়ান ইন্টারন্যাশনাল (প্রা.) লিমিটেড দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসা পরচালনা করে আসছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে প্রতিষ্ঠানটি প্রথম পর্যায়ে ১০ একর জমিতে টায়ার উৎপাদন কারখানা স্থাপন করবে। এতে প্রায় ১৩.১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হবে বলে প্রতিষ্ঠানটি আশা করছে। এ সার্বিক কর্মকাÐে প্রায় ১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বরাদ্দকৃত জমিতে প্রশাসনিক ভবন, ওয়্যারহাউস, লজিস্টিক এলাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সড়ক, ডরমিটরি, স্বাস্থ্য সেবা, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং সবুজায়ন করা হবে। পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব রোধে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। তারা সকল ধরনের যানবাহনের চাকা উৎপাদন ও বিক্রয় করে থাকে।
পিনাকল সাইকেল সম্রাট কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে প্রতিষ্ঠানটি ৮ একর জমিতে বাইসাইকেল উৎপাদন কারখানা স্থাপন করবে। তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব থেকে জানা যায়, এতে প্রায় ২১.৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হবে এবং ১০০০ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন উপস্থিত সকল বিনিয়োগকারীকে এবং বিটাক-কে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বেজা বাংলাদেশে বিনিয়োগ-বান্ধব সুস্থ্য পরিবেশ গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, মিরসরাইতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্প নগর নির্মিত হচ্ছে। ফলে এদেশে শিল্পায়নের অভ‚তপূর্ব বিপ্লব সাধিত হবে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ পূরণ হবে।
তিনি বলেন, বিটাক একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিল্পের বিকাশে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টিতে ভ‚মিকা রাখছে যা বেজা’র সামগ্রিক লক্ষ্য পূরণে অনেকাংশে সহায়তা করবে, তিনি উল্লেখ করেন বেজা ইতোমধ্যে বিটাক-কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ১০ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে এবং তার ধারাবাহিকতায় জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলেও ৬ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হলো। তিনি আশা প্রকাশ করেন বিটাকের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র জামালপুরে স্থাপিত হলে আশপাশের জনগণের মধ্যে কর্মসংস্থানের নতুন প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে।
তিনি জানান, বেজা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২২ হাজার দক্ষ জনবল গঠনে কাজ করছে। তিনি উল্লেখ, করেন টায়ার ও বাইসাইকেল শিল্প স্থাপনের ফলে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরের মাধ্যমে রপ্তানী বাজার আরো সমৃদ্ধ হবে বলে নির্বাহী চেয়ারম্যান আশা প্রকাশ করেন।
সোয়ান ইন্টারন্যাশনাল (প্রা.) লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমজাদ খান বলেন, বাংলাদেশে টায়ার শিল্পে তার প্রতিষ্ঠান সুনামের সাথে কাজ করে চলেছে এবং দেশের চাহিদা মিটিয়ে তারা বিভিন্ন দেশে তা রপ্তানী হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে শিল্প স্থাপন তার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি মাইলফলক বলে তিনি উল্লেখ করেন। পিনাকল সাইকেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইখতিয়ার খান এ চুক্তি স্বাক্ষরে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন তারা শিল্প স্থাপনের দ্রæত শুরু করবেন বলে আশা করছেন। বিটাক’র মহাপরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, বিটাক বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ জনবল গঠনে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ কবে আসছে। আমাদের এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামীকে অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের দক্ষ জনবল গঠনে সহায়ক ভ‚মিকা করতে বিটাকা বদ্ধপরিকর।
বেজার পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন নির্বাহী সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আলী আহসান। সোয়ান ইন্টারন্যাশনাল (প্রা.) লিমিটেডের পক্ষে মো. আমজাদ খান, পিনাকল সাইকেলের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইখতিয়ার খান, বিটাক’র পক্ষে মহাপরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী চুক্তি স্বাক্ষর করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুল হাসান।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই ও ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় প্রায় ৩৩ হাজার ৪০০ একর জমির উপর একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্প শহর- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। শিল্প নগরটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হতে মাত্র ১০ কিলোমিটার ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম হতে মাত্র ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ শিল্প নগরে বিশ্বমানের সকল সুবিধাদি থাকবে যেমন- বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, সমুদ্র বন্দর, কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি শোধনাগার, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল ইত্যাদি। এ লক্ষ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতায় সংযোগ সড়ক, ভ‚মি উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা বাঁধ, ব্রিজ নির্মাণ, গ্যাস সংযোগ লাইনসহ বিনিয়োগ বান্ধব সকল স্থাপনা নির্মাণ কাজ শেষ করেছে।
