
বিশ্ববাজারে আর্থিক মন্দা সৎত্ত্বেও প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়েছে মৎস্য ও মৎস্য পণ্যের রপ্তানি আয়

মতিনুজ্জামান মিটু : বর্তমান সরকারের কার্যকর উদ্যোগে ২০২১-২২ অর্থবছরে মৎস্য ও মৎস্যজাজাত পণ্য রপ্তানিতে দেশের আয় হয়েছে পাঁচ হাজার ১৯১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। যা আগের বছরের চেয়ে ২৬.৯৬ শতাংশ বেশি। ২০২১ -২২ অর্থবছরে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি হয় ৭৪, ০৪২.৬৭ টন। মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক জানান, মৎস্য ও মৎস্যপণ্য বাংলাদেশের রপ্তানির অন্যতম প্রধান খাত।
দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় মৎস্যখাতের সাফল্য তুলে ধরে তিনি জানান, নিরাপদ ও মানসম্পন্ন মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের উৎপাদন এবং মান নিশ্চিত করা মৎস্য অধিদপ্তরের অন্যতম ম্যান্ডেড। এলক্ষ্যে বর্তমানে দেশে চিংড়ি উৎপাদনের সব স্তরে উত্তম মাছচাষ অনুশীলন এবং প্রক্রিয়াকরণের সব স্তরে হ্যাজার্ড এনালাইসিস এন্ড ক্রিটিক্যাল কন্ট্রোল পয়েন্ট(এইচএসিসিপি) পদ্ধতি কার্যকর করা হয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তর নিরাপদ মৎস্য ও মৎস্যপণ্য উৎপাদন নিশ্চিতে ২০০৮ সাল থেকে ন্যাশনাল রিসিডিউ কন্ট্রোল প্লান (এনআরসিপি) বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং সেঅনুযায়ী মাছ ও চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষণ করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ হতে প্রধানত গলদা, বাগদা, হরিণাসহ বিভিন্ন জাতের চিংড়ি; রুই, কাতলা, মৃগেল, আইড়, টেংরা, বোয়াল, পাবদা, কৈসহ স্বাদুপানির বিভিন্ন মাছ এবং ভেটকি, দাতিনা, রুপচাঁদা, কাটল ফিস, কাঁকড়াসহ নানাজাতের সামুদ্রিক মাছ রপ্তানি হয়ে থকে। এছাড়াও শুঁটকি মাছ, মাছের আঁইশ এবং চিংড়ির খোলসও রপ্তানি হয়ে থাকে। বর্তমানে চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত কাঁকড়াসহ প্রাকৃতিক উৎস হতে আহরিত কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রপ্তানি হচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকরা মৎস্যপণ্যের প্রায় ৭০ ভাগ ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্টস। এদেশ হতে সাধারণত আইকিউএফ, কুকড, ফিস ফিলেটসহ বিভিন্ন ভ্যালু অ্যাডেড মৎস্যপণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)দেশগুলো, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, রাশিয়া, চিনসহ বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশের মাছ ও মাছজাত পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো এদেশের মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের প্রধান বাজার।
বর্তমানে দেশের মোট ১০৭টি মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা লাইসেন্স পেয়েছে। এরমধ্যে ৭৭টি ইইউ ভুক্ত দেশগুলোতে মাছ রপ্তানি করে। পাঙ্গাস ও তেলাপিয়ার উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য ময়মনসিংহের ত্রিশালে মেসার্স ভার্গো ফিস অ্যান্ড এগ্রো প্রসেস লিমিটেড ও মেসার্স সেভেন ওশানস লিমিটেড এবং গাজীপুরে মেসার্স আর্থ এগ্রো ফার্মস লিমিটেড নামের তিনটি মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপন করা হয়েছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারসহ আন্তর্জাতিক বাজারে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ মৎস্য ও মৎস্যাপণ্য সরবরাহ নিশ্চিতে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় তিনটি আন্তর্জাতিক মানের মৎস্য মাননিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরি পরিচালিত হচ্ছে এবং ল্যাবরেটরি তিনটি অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ডের দেওয়া অ্যাক্রিডিটেশণ সনদ অর্জনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে। মৎস্যচাষ পর্যায়ে ঔষধের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যাকোয়াকালচার মেডিশিনাল প্রোডাক্টস নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা করা হয়েছে।
