শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসতে ঢাকায় বাড়াতে হবে সবুজায়ন
মতিনুজ্জামান মিটু : সবুজের চাদরে ঢেকে দিতে হবে ঢাকা মহানগরকে। আকড়ে ধরতে হবে নগর কৃষিকে। কৃষি ও পরিবেশবিদদের মতে বাংলাদেশের সর্বত্র এখন দৃশ্যমান উন্নয়ন হচ্ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এরই মধ্যে টানা আট দিন বিশ্বের দূষিত শহরের শীর্ষে রয়েছে রাজধানী। এপ্রভাব মোকাবেলায় সবুজ বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত¡ বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এইচ এম সোলায়মানের বরাতে কৃষি তথ্য সার্ভিসের একটি সূত্র জানান, মহানগরে সবুজ বাড়ানোর কারিগরদের মধ্যে নিঃশব্দে যারা কাজ করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন ছাদ-বাগানিরা। যাদের প্রায় শতকরা ৮০ ভাগই গৃহিণী বা মহিলা। যাদের বলা হয় সবুজ আর্মি (গ্রীন আর্মি)। পরিকল্পিত ও মডেল ছাদ-বাগান কখনই ছাদ বা পরিবেশ নষ্ট করে না বরং ছাদ ঠান্ডা ও পরিবেশবান্ধব ভাবেই শহরকে রক্ষা করে। এছাদ বাগানগুলো মহানগরের বায়ুদূষণ কমানোর লক্ষণীয় রক্ষাকবচের ভূমিকা পালন করছে।
ঢাকা শহরে অন্তত সাড়ে চার লাখ ছাদ রয়েছে (সাড়ে চার হাজার হেক্টরের বেশি)। যা দেশের কোন একটি উপজেলার সমান বা বেশি। বিল্ডিং কোডে ২০ শতাংশ সবুজ থাকার কথা। তা মানার বিষয়টি আশাব্যঞ্জক নয়। নগরে সবুজের পরিমাণ বাড়ছে, কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে। নগরে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপখাওয়াতে সক্ষম সবজি চাষের জন্য ছাদ-বাগানসহ নতুন নতুন প্রযুক্তি ও কলাকৌশল নগরে টেকসই ও জনপ্রিয় করা দরকার। এছাড়া আধুনিক কৃষির এক প্রত্যাশিত লাভজনক ও নিরাপদ ফসল উৎপাদনের অনন্য বিষয় হতে পারে নগর কৃষি।
একবিংশ শতাব্দীতে আরও দ্রæত নগরায়ণের এবং জনসংখ্যা ২০৫০ সালে ৮.৩ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। নির্দিষ্ট কৃষি জমি ফলে বাণিজ্যিক ভার্টিক্যাল চাষাবাদ ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। যা অবশ্যই নগর কৃষির অন্তর্গত। গবেষকদের ধারণা অনুযায়ী সুউচ্চ ৩০ তলা ভবনে ২৭ কোটি ৮০ লাখ বর্গমিটার ভার্টিক্যাল ফার্ম স্থাপন করা যায়, যা দিয়ে ৫০ হাজার মানুষকে খাওয়ানো যাবে। যেখান থেকে প্রত্যেক জনকে ২০০০ ক্যালরি প্রতিদিন দেওয়া সম্ভব। ভবিষ্যতের জন্য একমাত্র মাধ্যম হবে নগর ভার্টিক্যাল কৃষি ফার্ম।
বাণিজ্যিক নগর কৃষি টেকসই করা সম্ভব কারণ এত সেচের পানির অপচয় ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ কমিয়ে এনে ৩ থেকে ৪ গুণ ফলন বাড়ানো যায়। যেখানে হাইড্রোপনিক্যালি পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ পানিকে অটোমেটিক এবং জলবায়ু-নিয়ন্ত্রিত বিল্ডিংয়ে সংরক্ষণের মাধ্যমে আবার ব্যবহার করা হয়। যদিও আধুনিক এই প্রযুক্তির ইনডোর ভার্টিক্যাল ফার্মিংয়ে স্বয়ংক্রিয় ড্রিপ সেচ ব্যবহারের কারণে এককালীন খরচ বেশি মনে হলেও তা কিন্তু ক্যাপিটাল খরচ অর্থাৎ প্রথম বছরই এই খরচ হবে, এর পরের বছর থেকে কমপক্ষে ৫ থেকে১০ বছর তা ব্যবহার করা যায় এবং উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন থাকে বিধায় লোকসান নেই এবং সব স্থাপনা ও প্রযুক্তি স্থানীয় উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরি করা যায়।
বাণিজ্যিক নগর ভার্টিক্যাল ডিভাইস, গ্রিনহাউস হাইড্রোপনিক, একুয়াপনিক্স, ছাড়াও স্মার্ট ফার্মিং ডিভাইস, স্বয়ংক্রিয় সেচসমৃদ্ধ ভার্টিক্যাল লাইন ডিভাইস, স্বয়ংক্রিয় ছাদ-বাগান ঠান্ডাকরণ ডিভাইস ইত্যাদি ব্যবহার করে টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বিদেশি ব্রাসেলস স্প্রাউট, লেটুস, লাল টমেটো, কালো টমেটো, শসা, লালশাক, ডাঁটাশাক, ধনিয়াপাতা, ক্যাপসিকাম, চাইনিজ বাঁধাকপি, ছাড়াও সালাদ অনুসঙ্গ পুদিনা, সেলেরি, পিয়াজপাতা সবজি চাষাবাদ এখন এদেশেই সম্ভব।