উত্থানে ফিরলেও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি নেই
মাসুদ মিয়া: দেশের শেয়ারবাজার টানা তিন কার্যদিবস দর পতনের পর সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস উত্থানে ফিরেছে। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। তবে লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি নেই। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। এ খবরে শেয়ারবাজারে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ার কথা ছিল। লেনদেনের গতি আরও বাড়ার কথা ছিল। শেয়ারবাজারের চাঙ্গা মিলবে এমন প্রত্যাশায় ছিলেন বিনিয়োগকারী। কিন্তু সূচক বাড়লেও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর পতনে হতাশ হতে হলো বিনিয়োগকারীদের। এ বিষয়ে বিনিয়োগকারী বাচ্চু বলেন, ২০২২ সাল শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই খারাপ গেছে। চলতি বছরও ঘুরে ফিরে সেই পতনই দেখতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা খুব সমস্যায় আছে। গত এক বছরে শেয়ারবাজার থেকে লাভ করা বিনিয়োগকারীর সংখ্যা খুবই কম। বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই লোকসান করেছেন। এখন দিন যত যাচ্ছে লোকসানের পাল্লায় ভারী হচ্ছে।
এবিষয়ে বিনিয়োগকারী জামান বলেছেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ কমে যাওয়ায় দরপতন হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশও বাজারে নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। শুরুতে দেখা দেওয়া এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বড় হতে থাকে দরপতনের তালিকা। এতে লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে তার তিনগুণের বেশি। এরপরও বেড়েছে সব কয়টি মূল্যসূচক।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৪০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৬টির। আর ১৬৪টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৭৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট বেড়ে দুই হাজার ২২৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৬৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫৮০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৫৭৩ কোটি ৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৮৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের লেনদেন হয়েছে ৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার। ৩৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আমরা নেটওয়ার্ক, শাইনপুকুর সিরামিক, ওরিয়ন ফার্মা, বসুন্ধরা পেপার, আইটি কনসালটেন্ট, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- জেনেক্স ইনফোসিস, জেএমআই হাসপাতাল রিকুইস্টি ম্যানুঃ, শাইনপুকুর সিরামিকস, আইটিসি, আমরা নেটওয়ার্ক, আমরা টেকনোলজি, বিএসসি, এডিএন টেলিকম, মুন্নু সিরামিকস ও জেমীনি সী ফুড।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল হাউজিং, বাটা সু কোং, ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও ইন্ট্র্যাকো রিফুওেয়লিং।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৬০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫১টির এবং ৭৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।