হিরো আলম এক প্রান্তিক মানুষ সে স্বপ্ন দেখতে জানে
মনোয়ার সুলতান
নাম তার আশরাফুল আলম।তারই প্রতিবেশি একজন , ইউটিউব চ্যানেল খুলে দিতে গিয়ে নাম দিয়েছিলো ‘ হিরো আলম ‘।এ নামের জন্য হিরো আলম নাকি তার প্রতিবেশির সাথে মন খারাপ করে তর্ক বিতর্ক ও করেছিলো। হিরো আলমের শুরুটা এক বৃষ্টিমুখর রাত ২ টায় যখন তার পিতা তাকে তার মাসহ বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো।
সেই রাতে সে তার মা সহ নানা বাড়িতে আশ্রয় নেয়। বন্ধ হয়ে যায় তার লেখা পড়া। একদিন পথে সে একটা কানের দুল কুড়িয়ে পায়।
সেটা ৮০০ টাকা বিক্রি করে শুরু করে চানাচুড়ের দোকান, তারপর পানবিড়ি, বিক্রি, তারপর ডিসলাইনের ব্যবসা। তারপর শুরু করে গান রেকর্ডিং, ছোট ছোড ভিডিও বানানো, সিনেমা বানানো, এইসব করে করে সে তার স্বপ্নগুলো বড় করতে থাকে, তার ব্যবসায় আসতে থাকে সফলতা।
হিরো আলম এক প্রান্তিক মানুষ। যে স্বপ্ন দেখেছে, স্বপ্ন পূরণের পথে হেঁটেছে। যারা তাকে নিয়ে ট্রল করে, কৌতুক করে, মন্দ বলে, ঘৃণা করে, নাক সিঁটকায় তারা কেউ ই হিরো আলমের জীবন সংগ্রামকে মূল্যায়ন করে না।
বগুরার উপনির্বাচনে হিরো আলম একটা মর্মান্তিক ভূমিকম্পের সৃষ্টি করেছে। হিরো আলম এম পি হতে পারুক বা না পারুক সাধারণ মানুষের মন জয় করতে পেরেছে।
আমাদের ৩০০ সংসদীয় আসনে যদি একজন করে হিরো আলম থাকতো তাহলে রাজনৈতিক ভন্ডামীর এতো বাড়াবাড়ি থাকতো না। এতো এতো তেলবাজ, চাপাবাজ, গুন্ডা, সন্ত্রাসী, চাদাবাজ, এর জন্ম হতো না।
৫০ বছরে তো কতো এম পি পরিবার, মন্ত্রী পরিবার, চেয়ারম্যান মেম্বার পরিবার সৃষ্টি হলো।
এসব গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য এখণ সময় এসেছে এরকম সাধারণ, নিন্মবিত্ত, স্বপ্ন বান সহজ সরল হিরো আলমদের জন্য যায়গা সৃষ্টি করা। আমাদের জন প্রতিনিধিদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন বিধিমালা রাষ্ট্রের সংবিধানে নেই। বাংলাদেশের বৈধ যে কোন নাগরিক নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারে। চেয়ারম্যান, মেম্বার, এম পি, মন্ত্রী হতে পারে।
গত পঞ্চাশ বছরে কোন সাংবাদিক, কোন এম পি প্রার্থীকে, আপনার যোগ্যতা কী এজাতীয় প্রশ্ন করতে শুনিনি বা দেখিনি। হয়তো প্যাদানী বা চড় থাপ্পর খাওয়ার ভয়ে। জন প্রতিনিধি যারা হতে চান তারা বেশির ভাগই কোন না কোন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী। যে কারণে থ্রি পাশ হাজী সেলিম কে কেউ প্রশ্ন করতে সাহস করনি। কিংবা মমতাজকেও কেউ প্রশ্ন করতে সাহস করেনি।
১৯৮৫সালে ঢাকার বাংলা বজারে একজনের সাথে আমার পরিচয়। আমার বাড়ি যশমাধব শুনে তিনি আমাকে বেশ খাতির যতœ করলেন। এক পর্যায়ে তিনি তার জীবন সংগ্রামের কথা বললেন। তিনি ৮ ম শ্রেণী পাশ করতে পারেন নি। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি নাকি দূর্গাপুর, কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জ, মধ্যনগর এই সব প্রত্যান্ত অঞ্চলে সাইকেলে করে বই নিয়ে যেতেন, এবং বাজারে বাজারে পলিথিন বিছিয়ে বই বিক্রি করতেন। তারপর তিনি নেত্রকোণা তার ভাইয়ের লাইব্রেরিতে সেলসম্যান হিসাবে কাজ করতেন, তারপর কিছুদিন ময়মনসিং তারপর ঢাকায় বাংলা বাজারে বই বান্ডিং শ্রমিকদের নেতা। তখন তিনি নেত্রকোণা জেলা জাতীয় পার্টির সহ সভাপতি। ৯০ এর গণ আন্দোলনের পর তার ভাগ্য খুলে গেল। ৯১ এর নির্বাচনে নেত্রকোণা শহরের বাঘাবাঘা রাজনীতিবিদদের টেক্কা মেরে তিনি বি এন পি র টিকিট নিয়ে মাঠে নামলেন। এবং এই অষ্টম শ্রেণী পাশ না মানুষটি নেত্রকোণা সদর আর বারহাট্টা মিলিয়ে সংসদীয় আসনের এম পি বনে গেলেন। এবং পরবর্তীতে আরও একবার এম পি হলেন।
এই মানুষটির এম পি হবার কী যোগ্যতা ছিল এ প্রশ্ন কেউ কোন দিন করেনি। সংসদে আইন পাশ করার বিষয়ে তার কী ভুমিকা ছিল তাও কেউ জানেনা। তার একটাই যোগ্যতা ছিল, টাকা। হিরো আলমের জীবনের গল্পটা ও তো এরকমই।
সে যদি কোন রাজনৈতিক দলের টিকিট বাগিয়ে নির্বাচন করতো তা হলে তাকে নিয়ে, এতো রঙ তামাশা, কৌতুক, গাল-মন্দ শুনতে হতো না। হাজার হাজার নেতা কর্মী তার পেছনে লাইন করে শ্লোগান দিতো।
জাতীয় সংসদ সংবিধান অনুযায়ী দেশের এবং জনগণের কল্যানে আইন পাশ করার একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের কতোজন আইন সম্পর্কে জানেন?
কতোজন আইনের বিচার বিশ্লেষণ করতে পারেন।
তাদের তো একটাই কাজ টেবিল চাপরানো। আইন তো বানায় আইন মন্ত্রনালয়ের আমলারা।
জয় হেক হিরো আলমের।
জয় হোক বগুরার নিন্মবিত্ত, বিত্তহীন, প্রান্তিক মানুষের।
লেখক পরিচিতি : কবি ও নাট্যকার