গ্যাস বিদ্যুতে আর কত ভর্তুকি দেওয়া যায়: প্রধানমন্ত্রী
এস. ইসলাম জয় : বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এত বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নবনির্মিত ‘বিনিয়োগ ভবন’ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ আহŸান জানান। বহুতল বিনিয়োগ ভবনটি তিনটি সংস্থা-বিডা, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) এর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইংল্যান্ড ১৫০ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এটা সবার মনে রাখতে হবে। আমরা কিন্তু সেই পর্যায়ে যাইনি। গ্যাস-বিদ্যুৎ দেওয়া যাবে ক্রয়মূল্যে। আর কত ভর্তুকি দেওয়া যায়। আর এ ক্ষেত্রে কেন দেব। আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি কৃষিতে, খাদ্য উৎপাদনে। ১ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১২ টাকা খরচ হয় উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘সেখানে আমরা নিচ্ছি মাত্র ৬ টাকা। তাতেই আমরা অনেক চিৎকার শুনি। গ্যাস-বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেওয়া যাবে, যদি সবাই ক্রয়মূল্য যা হবে, সেটা দিতে রাজি থাকে। তাহলে দেওয়া যাবে। তা ছাড়া আর কত ভর্তুকি দেওয়া যায়।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা করোনা মোকাবিলা করতে বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি, যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকারখানা চালু থাকে। প্রণোদনা দেওয়ার ফলেই অর্থনীতির গতিটা সচল রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্যই ছিল প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পোঁছে দেওয়ার। আমরা পৌঁছে দিয়েছি। জেনারেটরের ওপর যে ট্যাক্স ছিল, সেই ট্যাক্স আমি প্রত্যাহার করে নিয়েছি। শিল্প-কলকারখানা যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, সেই ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একটা কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। কারও সহযোগিতা বা সমর্থন পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু সমর্থন আমার জনগণ দিয়েছে। ফলে আমরা সফলতার সঙ্গে নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু তৈরি করেছি। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশে বিনিয়োগের জন্য সবার প্রতি আহŸান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, সবাই বিনিয়োগ করলে নিজেরাও লাভবান হবেন, আবার দেশটাও লাভবান হবে।
শেখ হাসিনা খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে, বিশেষ করে সারা দেশে গড়ে ওঠা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহŸান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৪ বছরে আপনাদের ব্যবসায়ী বান্ধব পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি। শান্তিপূর্ণভাবে আপনারা ব্যবসা করেন এখন আর ওই হাওয়া ভবনের পাওয়াও দিতে হয় না। কোনো কিছুই করতে হয় না সেই পরিবেশ আমরা তৈরি করে দিয়েছি। আর আমাদের উন্নয়নের লক্ষ্য একদম তৃণমূলের মানুষ। তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে, আমাদের নিজস্ব বাজার হচ্ছে, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে আমাদের আশপাশের যে দেশগুলো রয়েছে, তাদের সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ স্থাপন করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভুটান, নেপাল, ইন্ডিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার—সব ক্ষেত্রেই চমৎকার একটি যোগাযোগের জায়গা। তা ছাড়া এই দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের বাজার, এই সুবিধা যে কেউ নিতে পারে। তা ছাড়া আমরা কক্সবাজারে অন্তর্জাতিক মানের এয়ারপোর্ট করে দিচ্ছি, ঢাকার সঙ্গে সরাসরি রেললাইন করা হয়েছে, আমরা সড়কের উন্নয়ন করেছি। সে ক্ষেত্রে আমার মনে হয় যে ইস্ট ও ওয়েস্টের মধ্যে একটা ব্রিজ হতে পারে বাংলাদেশ। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলছি। আমরা মনে করি, আমাদের ভৌগলিক যে অবস্থান, সেটাও অত্যন্ত অনুক‚লে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাতারবাড়িতে ইতিমধ্যে ডিপসী পোর্ট কার্যক্রম শুরু করেছে, পায়রা পোর্টের উন্নতি হচ্ছে, মোংলা পোর্টকে আমরা উন্নত করছি, বে টার্মিনালসহ আরও অনেক সুবিধা আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এ টুকু বলল, সবাই বিনিয়োগ করুন এতে নিজেরাও লাভবান হবেন, আবার আমার দেশটাও লাভবান হবে। আমাদের রপ্তানি বাস্কেট বাড়াতে হবে। কিছু নতুন নতুন পণ্য এবং বাজার আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। কাজেই দেশি বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে আমাদের দেশ আরও উন্নত হোক, ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা চাই বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ হবে। পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা আমরা প্রণয়ন করে দিয়েছি এবং তারই ভিত্তিতে পঞ্চবার্ষিকি পরিকল্পনাও আমরা করে যাচ্ছি। বাসস