বিশ্বের সেরা ১০০ সবুজ শিল্পকারখানার ৫০টিই বাংলাদেশে
মো. আখতারুজ্জামান : শিল্পকারখানার আন্তর্জাতিক এক জরিপমতে, এবার অনন্য এক অর্জনের সাক্ষী হলো বাংলাদেশ। জরিপ বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে সেরা ১০০টি শিল্পকারখানার ৫০টিরই মালিক বাংলাদেশ। আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা চীনে আছে মাত্র ১০টি কারখানা। সোমবার বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল এ তথ্য জানান।
মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ১০ বছরের ধারাবাহিক চেষ্টার ফল হিসেবেই এসেছে এ সাফল্য।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (লিড) সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছি। কারণ, আমাদের উদ্যোক্তারা সঠিক সময়ে বুঝতে পেরেছিলেন যে আমাদের পরিবেশবান্ধর কারখানা করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এটি কাজে দেবে। সবাই বুঝতে পেরেছে বিধায় উদ্যোগ নিয়েছে ও নিচ্ছে।
মহিউদ্দিন বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমি আনন্দের সঙ্গে বলতে পারি যে বিশ্বের সেরা ১০০ কারখানার মধ্যে ৫০টিই হচ্ছে বাংলাদেশে। আজ নতুন করে আরও একটি কারখানা দেশের প্ল্যাটিনাম সনদ পেয়েছে। সেটি হচ্ছে চট্টগ্রামের কে ডি এস আইডিআর লিমিটেড। অর্থাৎ, বিশ্বের সেরা ১০০টি কারখানার মধ্যে ৫০টিই বাংলাদেশি কারখানা। সুতরাং, এটি অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের বিষয়।
১০টি কারখানা নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন। আর সম্পূর্ণ কমপ্লায়েন্ট ৯টি কারখানা নিয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে আছে পাকিস্তান, ৬টি করে কারখানা আছে ভারত ও শ্রীলঙ্কায়। রফতানিতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিপক্ষ ভিয়েতনাম আর তাইওয়ানে সেরা ১০০টিতে থাকা কারখানার সংখ্যা মাত্র ৪টি করে।
এর মধ্যে নতুন বছরের শুরু দিকেই দেশের চারটি প্রতিষ্ঠান সবুজ কারখানা বা গ্রিন ফ্যাক্টরির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ১৮৭টি কারখানা এই স্বীকৃতি পেলো। সবশেষ লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (এলইইডি) সনদটি পেয়েছে কেডিএস আইডিআর লিমিটেড।
এর আগে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে জেএল ফ্যাশন ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে প্লাটিনাম সনদ পায়। এই কারখানাটি গাজীপুর সদর ভবানীপুরে অবস্থিত। অন্যদিকে একই সময়ে জেকেএল কারখানাও গ্রিন ফ্যাক্টরির সনদ পায়। এটি চট্টগ্রামের কালুরঘাটে অবস্থিত। বিভিন্ন সূচকে কারখানাটির অর্জিত পয়েন্ট ৮৪। এছাড়া গত ২২ জানুয়ারি আমানত শাহ ফেব্রিকস ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে গোল্ড সনদ অর্জন করে।
দেশে এই সনদ পাওয়া সবুজ কারখানার মধ্যে রয়েছে প্লাটিনাম ৬৩টি, গোল্ড ১১০টি, সিলভার ১০টি ও সার্টিফাইড চারটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ‘ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল এ সনদ দেয়। বাণিজ্যিক ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনার ক্ষেত্রেও সনদ দেয় সংস্থাটি। তবে শিল্প কারখানার ভবন নির্মাণ থেকে পণ্য উৎপাদন পর্যন্ত সব পর্যায়ে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি বিশ্লেষণ করে সর্বোচ্চ মানের কারখানাকে এ সনদ দেওয়া হয়।
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, সবুজ কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের গায়ে গ্রিন ট্যাগ সংযুক্ত থাকে। অর্থাৎ পণ্যটি সবুজ কারখানায় উৎপাদিত। বিশ্ব বাজারে ক্রেতার কাছেও আলাদা কদর রয়েছে এর। এতে বিদেশি ব্র্যান্ড এবং ক্রেতার কাছে আস্থা বাড়ে। উৎপাদিত পণ্য নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষিতেও এগিয়ে থাকা যায়। মূল কথা হলো এ সনদ দেশ ও পোশাকখাতের ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়াতে সহায়তা করে।