২ হাজার টাকার কোভিড পরীক্ষা হবে ২৫০ টাকায়
অর্থনীতি ডেস্ক : দেশে চলমান কোভিডকালীন সংকটে দ্রæততম সময় ও স্বল্পখরচে কোভিড শনাক্তে বিসিএসআইআর-কোভিড কিট নামক দেশীয় কিটের উৎপাদন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় এই কিট উদ্ভাবিত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এই কিট কোভিড-১৯ শনাক্তকরণের জন্য একটি সহজ এবং সাশ্রয়ী পদ্ধতি।
মঙ্গলবার বিএসএমএমইউয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিসিএসআইআর-কোভিড কিটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আফতাব আলী শেখের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, বিশেষ অতিথি অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আহসান। অনুষ্ঠানে কিটের বিষয়ে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এই কিটের ন্যূনতম শনাক্তকরণ ক্ষমতা ১০০ কপি ভাইরাস/মি.লি. যেখানে অন্যান্য আমদানিকরা কিটগুলোর ন্যূনতম শনাক্তকরণ ক্ষমতা ১০০০ কপি ভাইরাস/মি.লি.। অর্থাৎ এই কিট দ্বারা খুব ন্যূনতম ভাইরাসকেও শনাক্ত করা যাচ্ছে। ফলে রোগের উপসর্গ প্রকাশের আগেই ভাইরাসের উপস্থিতি জানা সম্ভব হবে। বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, কোভিড শনাক্তকরণে আরটিপিসিআর টেস্টকে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়। কিন্তু এই ধরনের কিট অত্যন্ত ব্যয়বহুল, প্রতিটি পরীক্ষায় খরচ হয় আনুমানিক তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। তবে, বিসিএসআইআর যে কিট উদ্ভাবন করেছে, এতে অত্যন্ত স্বল্প খরচে পরীক্ষা করা সম্ভব। প্রতিটি শনাক্তকরণ টেস্টে খরচ হবে মাত্র ২৫০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, বিসিএসআইআর-কোভিড কিট কোভিড-১৯ শনাক্তকরণের জন্য একটি সহজ, দ্রæত এবং সাশ্রয়ী পদ্ধতি। দেশের ঔষধশিল্পে জড়িত বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রæত এই কিটটি উৎপাদনে গেলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি দেশের জনগণ উপকৃত হবে। এক্ষেত্রে বিসিএসআইআরের বিজ্ঞানীবৃদ্ধ কারিগরি সহায়তা প্রদানে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। অধ্যাপক ড. আফতাব আলী শেখ বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং বিস্তার নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্রæত ও নির্ভুলভাবে শনাক্তকরণ খুবই গুরত্বপূর্ণ। করোনা মহামারি এখনো চলমান এবং বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি কোটি ৩১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৬৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক শনাক্তকরণ কিট সম্পূর্ণটাই আমদানি করতে হয়, যা আমাদের দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস ঘনঘন তার জিনগত পরিবর্তন ঘটাচ্ছে, যার ফলে বাণিজ্যিক কিটগুলোর শনাক্তকরণ সংবেদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে, যা অনেক ক্ষেত্রে ভুল ফলাফল দিতে পারে। এছাড়া জীনগত পরিবর্তনের ফলে যদিও সংক্রমণ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, কিন্তু ভবিষ্যতে নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে যেকোন সময় নতুন ওয়েভ সৃষ্টির সম্ভাবনা থেকে যায়। এর ফলে যেকোন চিকিৎসা কিংবা ভ্রমণের পূর্বে নিয়মিত করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
বিসিএসআইআর-কোভিড কিটের বৈশিষ্ট- বিসিএসআইআর-কোভিড কিটটি এম জিনকে টার্গেট করে করা হয়েছে। এম জিনের মিউটেশন তুলনামূলক কম ও বিশ্বে প্রথম এম জিনকে টার্গেট করে কোভিড ডিটেকশন কিট আবিষ্কৃত হয়েছে। ওই কিটটির জন্য যে প্রাইমার এবং প্রোব ব্যবহার করা হয়েছে তা বিসিএসআইআরের বিজ্ঞানীদের ডিজাইন করা, এজন্য কিটটি বাজারে প্রচলিতগুলোর চেয়ে ইউনিক।
উদ্ভাবিত কিটের নির্দিষ্টতা, সংবেদনশীলতা এবং যথার্থতা গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডের সমমান ও বাণিজ্যিক কিটগুলোর থেকে উন্নতমানের।
কিটটির ন্যূনতম শনাক্তকরণ ক্ষমতা ১০০ কপি ভাইরাস/মি.লি. যা বাজারে প্রচলিত কিটের চেয়ে অনেক কম, তাই কিটটি ইনফেকশনের শুরুতেই কোভিড-১৯ শনাক্ত করতে সক্ষম। এই কিটটি সব ধরনের ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করতেও সক্ষম। ওই কিটটি গøাইকোজেন ব্যবহার করে আরএনএ এক্সট্রাকশন পদ্ধতি উদ্ভাবন করায় সল্প খরচে কোভিড-১৯ টেস্ট করতে সক্ষম। সূত্র : ঢাকাপোস্ট