ডলার এনডোর্সমেন্টে নতুন শর্ত দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
মাসুদ মিয়া: দেশের বাজারে ডলারের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে পাসপোর্টে ডলার এনডোর্সমেন্টে নতুন শর্ত দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে গ্রাহকের ব্যয় করা ডলারের পরিমাণ অনলাইনে যাচাই করে পাসপোর্টে এনডোর্স করতে হবে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ অপারেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, বিদেশ ভ্রমণের আগে পাসপোর্টের পাতা ও অনলাইনের তথ্য যাচাই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ এক বছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার বিদেশে খরচ করার বৈধতা রয়েছে। এক্ষেত্রে নগদ ও কার্ডের মাধ্যমে নেওয়া ডলার খরচের পরিমাণ যেন আইনিসীমা অতিক্রম না করে এ জন্যই নতুন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই অনুমোদন দেয় সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারগুলো। ডলার খরচ কমাতে এখন থেকে যাচাই-বাছাই করে পাসপোর্টে ডলার ব্যবহারের অনুমোদন দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি কী পরিমাণ ডলার খরচ করা হয়েছে, তা-ও যাচাই করে দেখতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের কার্ডের পাশাপাশি মানি চেঞ্জার ও ব্যাংকের অনুমোদিত ডিলারের তথ্য যাচাই করতে বলেছে। পাশাপাশি একই বছরে দুটি পাসপোর্ট ব্যবহার করা হলে আগেরটিও যাচাই করে নতুন পাসপোর্টে ডলার ব্যবহারের অনুমতি দিতে বলা হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলো পাসপোর্টের মেয়াদ থাকা পর্যন্ত ডলার ব্যবহারের অনুমোদন দিয়ে থাকে। ডলার কিনলেই পাসপোর্টে ডলার ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারগুলো। বিদেশে যেতে ডলারের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ব্যবহার করেন বাংলাদেশিরা। সে ক্ষেত্রে সব ধরনের মুদ্রার হিসাবায়ন করা হয় ডলারে।
এই নির্দেশনার প্রভাব কী হতে পারে, জানতে চাইলে সরকারী খাতের রূপালী ব্যাংকের পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্টের সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, যখন এনডোর্সমেন্ট করা হয়, তখন আগের পাসপোর্ট অবশ্যই দেখা হয়। সেটা দেখেই সীমার মধ্যে এনডোর্সেমেন্ট করা হয়। যখন কাউকে ভারতে ভ্রমণের জন্য পাঁচ হাজার ডলার এনডোর্সমেন্ট করা হয়, তখন সেই তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দাখিল করা হয়। তিনি দুই হাজার ডলার খরচের পর বাকিটা ব্যাংকের কাছে বিক্রি করলে পরবর্তী সময়ে বাকি ডলার খরচ করতে পারেন। কিন্তু বিদেশ থেকে এসে সাধারণত কেউ ব্যাংকে ডলার বিক্রি করেন না। বাইরে দাম বেশি হওয়ায় খোলাবাজারে বিক্রি করে দেন।
একজন নাগরিক কত ডলার খরচ করলেন, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায় না। সে জন্য তিনি মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনার কোনো প্রভাব পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্টে পড়বে না। আগের মতোই চলবে। ব্যাংকের পাশাপাশি মানি চেঞ্জারগুলো পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্ট ও ডলার বিক্রি করে। ব্যাংকগুলো এসব ক্ষেত্রে যতটা সচেতন, মানি চেঞ্জারগুলো ততটা নয়। দেশে এখন বৈধ মানি চেঞ্জার আছে ২৩৫টি। এর বাইরে আরও অনেক মানি চেঞ্জার বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত। স¤প্রতি কয়েকটি অবৈধ মানি চেঞ্জার বন্ধ করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আবার বৈধ মানিচেঞ্জারগুলোকে নিয়মের মধ্যে পরিচালনা করতে নানা নির্দেশনা দিয়েছে।
মানি চেঞ্জারগুলো পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্ট করলে সেই তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দাখিল করে। তবে ব্যাংক কোন পাসপোর্টের বিপরীতে কী পরিমাণ ডলার এনডোর্সমেন্ট করেছে বা কোন গ্রাহক কার্ডে কত ডলার খরচ করেছেন, তা দেখার সুযোগ নেই মানি চেঞ্জারগুলোর। আবার মানি চেঞ্জারগুলো কোনো ব্যক্তির কাছে সীমার বেশি ডলার বিক্রি করলেও তা দেখার সুযোগ কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, যাঁরা আনুষ্ঠানিক অনুমোদন নিয়ে কার্ডে বা নগদে ডলার খরচ করেন, তাদের তথ্য যাচাই করা সম্ভব হবে। আর হাতে হাতে সীমার বেশি ডলার নিয়ে গেলে তা যাচাইয়ের সুযোগ নেই। কার্ডের মাধ্যমে ডলার যেন কম খরচ হয়, সেটাই এই নির্দেশনার মূল উদ্দেশ্য।