শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু
মাসুদ মিয়া: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন। তার মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি রাষ্ট্রপতি পদে একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় এখন আর ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না। এক প্রতিক্রিয়ায় মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি পদে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কারণ, তিনি আমাকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন। এ মুহূর্তে আমার প্রতিক্রিয়া এটুকুই। সব অনুমান, নানা জল্পনাকল্পনা ভুল প্রমাণ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী মনোনীত করল আওয়ামী লীগ। জাতীয় নির্বাচনের আগে এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে সবার নজর ছিল। কে হচ্ছেন নতুন রাষ্ট্রপতি এনিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকের নাম নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছিল। কিন্তু সব আলোচনা ছাপিয়ে অনেকটা চমকের মতো এসেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নাম।
বিধান অনুযায়ী, আজ সোমবার প্রার্থিতা বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ বিবেচিত হলে নির্বাচন কমিশন তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে। এখন শুধু প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পালা।
নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের নির্ধারিত সময় বিকেল চারটা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া আর কারও মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি। সোমবার দুপুরের মধ্যে প্রার্থিতা বাছাইয়ের পর নির্বাচন কমিশন তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। এর আগে রোববার বেলা ১১টায় নির্বাচন কমিশনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামÐলীর সদস্য। তিনি ১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহŸায়ক ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাÐের পর সাহাবুদ্দিন কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগ দেন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদেরও সদস্য। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী সাহাবুদ্দিন একাধারে আইনজীবী, অধ্যাপক, সাংবাদিক ও বিচারক ছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার তিনি। ৭৫’র পরে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় ২০ আগস্ট সামরিক আইনের ৭ ধারায় আটক হয়ে প্রায় তিন বছর কারাগারের কাটিয়েছেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। তার জন্ম ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায়। তার বাবা মরহুম শরফুদ্দীন আনসারী এবং মা মোসাম্মৎ খায়রুন্নেছা। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। ছাত্রাবস্থায় ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। স্বাধীন বাংলা ছাত্রপরিষদের পাবনা জেলার নেতা হিসেবে পাবনায় স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলনকারীদের অন্যতম মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। পাবনা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৭১ সালে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগদান করেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। ১৯৯৫ সালে জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। কর্মজীবনে তিনি সহকারী জজ, যুগ্ম জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ ও জেলা জজ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। শহীদ বুলবুল কলেজের অধ্যাপকও ছিলেন তিনি। অধুনালুপ্ত বাংলার বাণী পত্রিকার পাবনা জেলা প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। পাবনা প্রেস ক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির আজীবন সদস্য এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার। এছাড়া প্রেষণে আইন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি হিসেবে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আইন সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন সাহাবুদ্দিন। ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন। ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তার স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে সরকারের যুগ্ম সচিব থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। তাদের একমাত্র সন্তান মো. আরশাদ আদনান একটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।