আউশে ৫৭ কোটি টাকার প্রণোদনা পাচ্ছেন ১০ লাখ কৃষক
মতিনুজ্জামান মিটু: আউশের আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে ৫৭ কোটি ২৫ লাখ টাকার প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশের ১০ লাখ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এপ্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে বীজ ও সার পাচ্ছেন বলে সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. কামরুল ইসলাম ভূইয়া জানান।
তিনি আরও জানান; উচ্চফলনশীল আউশ ধানের উৎপাদন বাড়াতে এপ্রণোদনার আওতায় একজন কৃষক এক বিঘা জমিতে চাষের জন্য প্রয়োজনীয় ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বিনামূল্যে পাচ্ছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বাজেট কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা এবং বীজ ও চারা খাত থেকে এপ্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে অচিরেই এপ্রণোদনা বিতরণ শুরু হবে।
এদিকে কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইং এর কন্ট্রোল রুমের তথ্যের বরাতে কৃষি তথ্য সার্ভিসের একটি সূত্র জানান, বাংলাদেশে তিন মৌসুমে আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমে ধানের চাষ করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩.৩০০ লাখ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদের লক্ষ্য নিয়ে অর্জিত হয় ১১.৬৩১ লাখ হেক্টরে। এসময় আউশ উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল ৩৪.৮৩৬ লাখ টন। উৎপাদন হয় ৩২.৪৪৯ লাখ টন। এসময় হেক্টর প্রতি আউশ ধানের ফলন হয় ২.৭৯০ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৩.০৫০ লাখ হেক্টরে ৩২.৮৪৭ লাখ টন আউশ ধান উৎপাদন হয়। ফলন হয় প্রতি হেক্টরে ২.৫১৭ টন। আউশ ধানের আবাদ বৃষ্টি নির্ভর, এধান উৎপাদনের সেচ খরচ সাশ্রয় হয়। এছাড়া উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের ধান চাষ করলে বেশি ফলন পাওয়া যায়। কয়েক বছর যাবত কৃষি মন্ত্রণালয় আউশ ধানের চাষাবাদ বাড়ানোর জন্য কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা ও ভর্তুকি দিচ্ছে। এতে বেশি সংখ্যক কৃষক আউশ ধান চাষে উৎসাহী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আউশ ধানের বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১৫ থেকে ৩০ চৈত্র (৩০মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল)। রোপা আউশের উফশী জাত হিসেবে বিআর২৬, ব্রি ধান২৭, ব্রি ধান৪৮, ব্রিধান৫৫, ব্রি ধান৮২ ও ব্রি ধান৮৫ এবং বোনা আউশের উফশী জাত হিসেবে বিআর২০, বিআর২১, বিআর২৪, ব্র্রি ধান৪২, ব্র্রি ধান৪৩, ব্র্রি ধান৮৩ আবাদ করা যায় হয়।
দোঁ-আশ ও এঁটেল মাটি বীজতলার জন্য ভালও। বীজতলার জমি উর্বর হওয়া দরকার। যদি অনুর্বর হয় তাহলে প্রতি বর্গমিটার জমিতে ১.০০ থেকে ১.৫ কেজি হারে জৈবসার ছড়িয়ে দিতে হবে এর পর ৫ থেকে ৬ সেন্টিমিটার পানি দিয়ে ২ থেকে ৩টি চাষ ও মই দিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন রেখে দিতে হবে এবং পানি ভালোভাবে আটকিয়ে রাখতে হবে। আগাছা, খড় পচে গেলে আবার চাষ ও মই দিয়ে কাদা করে জমি তৈরি করতে হবে। এবার জমির দৈর্ঘ্য বরাবর ১ মিটার চওড়া বেড তৈরি করতে হবে। দুই বেডের মাঝখানে ৪০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে। বীজতলায় প্রতি বর্গমিটার বেডে ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম অঙ্কুরিত বীজ সমানভাবে বুনে দিতে হবে। জাতভেদে বীজের হার প্রতি হেক্টরে ৪০ থেকে ৫০ কেজি।
জমিতে দরকার মতো পানি দিয়ে মাটির প্রকারভেদে ২ থেকে ৩টি চাষ ও মই দিতে হবে, যেন মাটি থকথকে কাদাময় হয়। জমি উঁচু-নিচু থাকলে সমান করে দিতে হবে। বেশি ফলন পাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জৈবসারসহ সুষম মাত্রায় রাসায়নিক সার দিতে হবে। রোপা আউশে হেক্টরপ্রতি ১৩০ কেজি ইউরিয়া, ৫৫ কেজি টিএসপি, ৬ কেজি এমওপি এবং বোনা আউশে ১২০ কেজি ইউরিয়া, ৫০ কেজি টিএসপি, ৫৫ কেজি এমওপি সার ব্যবহার করতে হয়। টিএসপি সারের পরিবর্তে ডিএপি সার ব্যবহার করা হলে টিএসপি সারের সমপরিমাণ ডিএপি সার ব্যবহার করে প্রতি কেজি ডিএপি সার ব্যবহারের জন্য ৪০০ গ্রাম হারে ইউরিয়া কম ব্যবহার করতে হবে। মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে সার ব্যবহার করা উত্তম। ইউরিয়া সার তিন কিস্তিতে (প্রথম কিস্তি জমি শেষ চাষের সময়, দ্বিতীয় কিস্তি চারা রোপণের ১৫ দিন পর, তৃতীয় কিস্তি কাইচথোড় আসার ৫ থেকে ৭ দিন আগে) এবং অন্যান্য সার জমি শেষ চাষের সময় দিতে হয়। ইউরিয়ার পরিবর্তে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে ফলন বাড়ে এবং সারের কার্যকারিতা ২০ থেকে ২৫ ভাগ বাড়ে। গুটি ইউরিয়া প্রতি চার গোছার মাঝখানে একটি করে দিতে হয়। আউশ ধানের ১.৮ গ্রাম ওজনের গুটি ব্যবহার করতে হয়। গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে আউশ মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৬৫ কেজি ইউরিয়া সাশ্রয় হয়।