গার্মেন্ট শ্রমিকদের দিয়ে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বাস্তবায়নের সুপারিশ ড. আতিউর রহমানের
ভূইয়া আশিক রহমান : অর্থ বিভাগ বলছে, ১ কোটি গ্রাহক মাসে ৫০০ টাকা করে দিলে ১০ বছরে পেনশন তহবিলের আকার দাঁড়াবে ৬০ হাজার কোটি টাকা। চাঁদা দেওয়া ১৮ বছর বয়সে শুরু হবে ও ৬০ বছর বয়সে গিয়ে বন্ধ হবে। তারপর বাকি জীবন পেনশন মিলবে। চাঁদা এক হাজার টাকার বেশি হলে পেনশনের পরিমাণও আনুপাতিক হারে বাড়বে।
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ কী জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা একটু কঠিন হবে এ কারণে যে, একটি অথরিটি লাগবে। সর্বজনীন আইনে আছে, তারা একটি পেনশন অথরিটি তৈরি করবেন। সেটা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব তৈরি করে কাজগুলো করতে হবে। যথেষ্ট শক্তিশালী একটি আইন হয়েছে। এখন এই আইন ঠিকমতো বাস্তবায়ন করতে পারলে সর্বজনীন পেনশনের সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে।
তিনি বলেন, সর্বজনীন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করাটাই হবে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আমার সুপারিশ হচ্ছে, এই কর্মসূচি যাতে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, এজন্য একটা ডাটাবেইজ তৈরি করতে হবে। যারা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন, তাদের ডিজিটালি ডাটাবেইজে নিয়ে আসতে হবে। তারা যেন নিয়মিত মুঠোফোনের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে পারেন। এ ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কেন সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি দরকার, সরকারের একটি সময়োপোযোগী ও ভালো উদ্যোগ সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি তা মনে করিয়ে এই অর্থনীতিব বলেন, আমাদের বেসরকারি খাতে সামাজিক সুরক্ষার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী পেনশনের সুযোগটা পান। কিন্তু যারা বেসরকারি শিল্পায়নে কাজ করছেন, রেমিটেন্সে কাজ করছেন, তাদের যখন বয়স হয়ে যায় তখন তাদের যাওয়ার কোনো জায়গায় থাকে না। সেজন্য সরকারের সর্বজনীন পেনশন উদ্যোগ খুবই যুগান্তকারী কর্মসূচি হবে।
এই পেনশন ব্যবস্থা কীভাবে, কোন জনগোষ্ঠীর জন্য সবচেয়ে উপকারী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আতিউর রহমান বলেন, আমাদের যে নারী শ্রমিকেরা আছেন, যারা গার্মেন্টেসে কাজ করেন, তাদের জন্য সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি খুব সুবিধা হবে। কারণ তাদের বয়স হয়ে যাওয়ার পর আর কাজ করতে পারবেন না। তারা যখন ফিরে যাবেন, গ্রামে তখন তারা কার ওপর নির্ভর করবেন? এখন যে আয় তারা করছেন তার সম্পূর্ণ খরচ করে ফেলছেন। কোনো সঞ্চয় থাকছে না। পেনশনটা একটা সঞ্চয় হবে। এর ওপর যদি একটা প্রিমিয়াম দেওয়া যায়, যা নিয়ে সরকার পরিকল্পনা করছে, তাহলে ভবিষ্যতে যখন তাদের বয়স ৫০ হয়ে যাবে, গ্রামে ফিরে যাবে, তখন মাসে মাসে একটা আয়ের সন্ধান পাবে। সেই বিচারে সর্বজনীন পেনশন যথেষ্ট বিচক্ষণ কর্মসূচি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, সর্বজনীন পেনশন আইনটি যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েই করা হয়েছে। আইনের খসড়া ওয়েব সাইটে দেওয়া হয়েছিলো। আমরা সকলেই এই আইন নিয়ে কথা বলেছি। কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সে নিয়েও পরামর্শ দিয়েছি। সেসব সুপারিশ আমলে নিয়েই একটি পূর্ণাঙ্গ আইন করা হয়েছে। এখন আইন বাস্তবায়নে যে ধরনের বাধা আসবে, তা অনুমান করা যায়। আমার মতে, একসঙ্গে বড় আকারে শুরু করা যাবে না। সর্বজনীন পেনশন কিছু সেক্টর নিয়ে শুরু করাই ভালো হবে। আমাদের মোস্ট অরগানাইজড সেক্টর গার্মেন্টস। গার্মেন্টস শ্রমিকদের দিয়েই সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি শুরু করলে এই অভিজ্ঞতা অন্যান্য জায়গাও নিয়ে যাওয়া যাবে।