দফায় দফায় বাড়ছে ডিম ও মুরগির দাম অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ
মাসুদ মিয়া: রাজধানীসহ সারাদেশে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় মানুষের জীবনে চরম অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। সংসার চালাতে নিম্নবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্তদের জীবন চরম সংকটে পড়েছে। সপ্তাহ ব্যবধানে অধিকাংশ নিত্যপণ্যর দাম বেড়েছে।
এদিকে রাজধানীর বাজারগুলোতে দেখা গেছে, মাছ, গরু বা খাসির মাংসের বদলে নিম্নবিত্ত পরিবারের কাছে বেশি চাহিদা ডিম ও ব্রয়লার মুরগির মাংসের। কিন্তু দফায় দফায় সেগুলোরও অস্বাভিক দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েন তারা।
এদিকে শীতের মৌসুম শেষের দিকে আগের তুলনায় রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারের শীতকালীন অনেক সবজিরই সরবরাহও কমেছে দামও বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। এ বিষয়ে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, শীতের সবজির উৎপাদন অনেকটা কমেছে। ফলে বাজারে সবজির সরবরাহ ধীরে ধীরে কমে আসছে।
দফায় দফায় দাম বেড়ে এখন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। যা গত মাসেও ১৫০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে ছিল। অর্থাৎ এ সময়ে দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ৭০ টাকা। আর শেষ দফায় গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। তখন দাম ছিল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। এ পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন পর যারা ব্রয়লার মুরগি কিনতে বাজার এসেছেন তারা পিলে চমকে যাচ্ছেন। বিপাকে পড়ছেন ফার্মের মুরগির ডিমের দাম নিয়েও। কারণ প্রতি ডজন ডিমের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। এখন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা ডজনে। প্রতি হালি ৫০ টাকা। যা আগে ৪৫ টাকা ছিল। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের মতো বাড়তি দেখা গেছে গরুর মাংসের দাম। বেশিরভাগ বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে ৭০০ থেকে ৭২০ টাকায় মিলতো।
ক্রমাগত পণ্যের এ মূল্যবৃদ্ধি বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে। দোকানে দোকানে দাম নিয়ে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বাগবিতণ্ডা। বিশেষ করে ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের ডিমের দাম বাড়ায় নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ক্রেতারা কষ্টে পড়ে গেছেন। বেশকিছু ক্রেতাকে দাম শুনে খালি হাতে ফিরে যেতে দেখা গেছে। মতিঝিল কাঁচাবাজারে সুমন নামের এক ক্রেতা বলেন, দুদিন আগেও ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকায় কিনেছি। এখন বলছে ২৩০ টাকা! মাসখানেক আগে কিনতাম ১৫০ টাকা। এরমধ্যে কী হলো যে দাম শুধু হু হু করে বাড়ছে। তিনি বলেন, এভাবে আমাদের জীবন চালানো সম্ভব না। কোনোভাবেই হিসাবের মধ্যে সংসার চালানো যাচ্ছে না। মাছ-মাংস খাওয়া প্রায় ছেড়ে দিতে হয়েছে। এদিকে বিক্রেতারাও মুরগি ও ডিমের দাম দফায় দফায় বাড়ার কোনো সঠিক কারণ বলতে পারছেন না। কলতাবাজারে মুরগি বিক্রেতা জাকির বলেন, সরবরাহ কম তাই দাম বেশি শুধু এটুকুই জানি। আমরা বেশি দামে কিনেছি, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম এভাবে বাড়ুক আমরা সেটা চাই না। কারণ দাম বাড়ায় বিক্রি কম হচ্ছে।
এদিকে মতিঝিল বাজার ঘুরে গরুর মাংসের দামও বাড়তি দেখা গেছে। মাংস বিক্রেতারা বলেন, কম দামে গরু কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না বলে আগের দামে মাংস বিক্রি করে পরতা হচ্ছে না। সবখানে দাম বেড়েছে। তবে সেখানে একজন ক্রেতা বলেন, রমজানের সরকার গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেয়। তাই আগেই এরা দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে।
অন্যদিকে বাজারে সবজির দামও কিন্তু খুব বেশি স্বস্তিদায়ক নয়। গ্রীষ্মের নতুন সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ কমে আসায় শীতের সবজির দামও বাড়ছে। পেঁপে ও মুলা ছাড়া প্রায় সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার ওপরে। আর গ্রীষ্মের নতুন পটল, বরবটি, করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকার ওপরে।
বাজারে আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। বিশেষ করে বরবটি, করলা, পটল ও ঢেঁড়শের দাম সবচেয়ে বেশি। বিক্রেতারা বলছেন, শীত মৌসুমের সবজি না হওয়ায় এগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি। এদিকে সবজির দাম বেশি হওয়ায় অস্বস্তি জানিয়েছেন ভোক্তারা। রাজধানীর বিভিন্ন সবজির বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। বাজারগুলোতে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, একইভাবে বাধাকপিও প্রতি পিস ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি পিস লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকায়, বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকায়, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকায়, শসা প্রতি কেজি ৪০ টাকায়, নতুন আলু প্রতি কেজি ৩০ টাকায়, সিম মানভেদে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, কাঁচ কলা প্রতি হালি ৪০ টাকা, গাঁজর প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মূলা প্রতি কেজি ৪০ টাকা, খিঁড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা ও কাঁচা মরিচ মানভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে শীত মৌসুমের সবজি নয়, বাজারে এমন কিছু সবজির সরবরাহ একেবারেই কম দেখে গেছে। সে কারণে বাড়তি দামে এসব সবজি বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে বরবটি প্রতি কেজি ১২০, করলা প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি পটল প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা ও ঢেঁড়স প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
আদা-রসুন ও শুকনো মরিচের দামেও অস্থিরতা চলছে। এখন প্রতি কেজি আদা দেশি ১৪০ টাকা চায়না আদা ২৮০ টাকায় ঠেকেছে। রসুনের দামও বেড়ে হয়েছে ২২০ টাকা টাকা। বাজারে তুলনামূলক কিছুটা কম দামে দেশি জাতের আদা-রসুন থাকলেও সেগুলোর চাহিদা কম।
চালের দাম কমছে না। বাজারভেদে সরু মিনিকেট চাল ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের বিআর২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা। ভালো মানের নাজিরশাইল চালের কেজি ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা। আর মোটা চাল ৫৪-৫৫ টাকা কেজি। মতিঝিল কাচাবাজারে মাছ বিক্রেতারা বলেন, সবকিছুর দাম বাড়তি, মাছের দামও বাড়ছে। মাছের ফিডের (খাবার) এখন খুব চড়া দাম। খামারিরা এজন্য দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
মাছ বিক্রেতা জানান, প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি ৯০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে ৩০০ টাকা বেশি। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ, যা দেড় হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া ছাড়াও অন্য চাষের মাছগুলোও বেশ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। তাজা রুই, কাতলা, বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি দরে, যা আগে ছিল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। অন্যদিকে বাজারে দেশি প্রজাতির টেংরা, শিং, গচি ও বোয়াল মাছের কেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০০-৬৫০ টাকার মধ্যে। তবে এসব প্রজাতির চাষের মাছের দাম তুলনামূলক কিছুটা কম।