সোহেল রহমান :চলমান ডলার সংকটের কারণে আমদানিকারকরা রয়েছেন চাপের মধ্যে। অথচ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২০ দিনের নির্ধারিত মেয়াদ পেরোনোর পরও দেশে আসেনি ১৪২ কোটি ডলার রপ্তানি আয়।
দেশের বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে প্রেরিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওভারডিউ ১৪২ কোটি ডলারের মধ্যে প্রায় ২৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার শর্ট শিপমেন্টের (রপ্তানি পণ্যে ঘাটতি) অভিযোগে আটকে আছে। আমদানিকারক দেউলিয়া হওয়ার কারণে আটকে আছে ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার; আইনগত জটিলতায় আটকে আছে ২৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। এছাড়া ১২ কোটি ২০ লাখ ডলার বিবিধ কারণে আটকে আছে। অবশিষ্ট ৭০ কোটি ডলার আটকে থাকার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই।
জানা যায়, পণ্য জাহাজীকরণ শেষে রপ্তানির নথিপত্র আমদানিকারকের ব্যাংকে পাঠানোর পরের দিন থেকে সর্বোচ্চ ১২০ দিনের মধ্যে রপ্তানি মূল্য দেশে নিয়ে আসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রপ্তানি আয় মেয়োদোত্তীর্ণ হওয়ার অর্থ হচ্ছেÑ বিদেশে রপ্তানি হওয়া পণ্য বা সেবার মূল্য যেসময়ের মধ্যে পাওয়ার কথা ছিল Ñতা পাওয়া যায়নি।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বৈদেশিক মুদ্রার (বিশেষত মার্কিন ডলার) উচ্চ বিনিময় দরের সুবিধা নিতে ইচ্ছে করেই আয় প্রত্যাবাসনে দেরি করছেন রপ্তানিকারকরা। কারণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, অধিকাংশ রপ্তানিকারক নির্ধারিত ১২০ দিনের একদম শেষে এসে আয় প্রত্যাবাসন করছেন।
জানা যায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রপ্তানি আয় দেশে না আনা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর ফলে ওই রপ্তনিকারককে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে অর্থায়ন করা হয় না। নগদ প্রণোদনা দেয়া হয় না। পরবর্তী এলসি খোলার সময় মার্জিন সুবিধাও বন্ধ করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সার্বিক পরিস্থিতির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তুলে ধরে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে অতি দরকারি এসব বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে তাগিদ ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া, ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ হয়নি (নন-ওভারডিউ) এমন প্রায় ২৩০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ও দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা নিতেও ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান হচ্ছেÑ সাইট এলসির (পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধের নথি) বিপরীতে রপ্তানি করা পণ্যের মূল্য আমদানিকারকের ব্যাংকে নথিপত্র দাখিলের পরপরই যাতে দেশে আসে। এই পেমেন্ট খুবই দরকারি, কারণ বাংলাদেশ সবসময়ই বাণিজ্য ঘাটতিতে থাকা দেশ। ঘাটতির অংশ প্রবাসী আয়, বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তা, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে আসা বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে মেটানো হয়ে থাকে।